বিজ্ঞাপন

ব্যানারে, মিছিলে, সঙ্গীতে, বাদ্যে মে দিবসের উচ্ছ্বাস

May 1, 2018 | 1:03 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা:  গণহারে খুন করছে/ আমার ভাই-বোনদের/এই রাষ্ট্র ভাল’র না/ এই রাষ্ট্র মন্দের/ এই রাষ্ট্র ভাত দেয় না/এই রাষ্ট্র দেয় না কাজ/ এই রাষ্ট্র ভাঙতে হবে/কণ্ঠে তোল এই আওয়াজ…

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে খোড়া-খুড়ি রোগে আক্রান্ত সড়কে ছোট্ট একটি পিকআপ ভ্যানে হারমনিয়াম-তবলায়র মৃদু ঝংকারে গানটি গাইছিলেন আমিরুন নূজহাত মনিসা ও চম্পাবতী এনমরাক।

রজত হুদার লেখা এই গণসঙ্গীতটি নির্দিষ্ট কোনো সরকার বা তার নীতির বিরুদ্ধে নয়। নয় কোনো দল বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। শ্রমজীবী মানুষের সাহসী এ উচ্চারণ যুগ যুগ ধরে চলে আসা সেই রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে, যে রাষ্ট্রযন্ত্র শ্রমিক শোষণে হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন ‘মহান মে দিবস’ উপলক্ষে মঙ্গলবার (০১ মে) সকাল ৯ টা থেকে মুক্তাঙ্গন, পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কসহ পুরো পল্টন-মতিঝিল এলাকা জুড়ে শত শত শ্রমিক অধিকার সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সামাজিক-সংস্কৃতিক সংস্থা নিজ নিজ ব্যানারে মিছিল, সমাবেশ করেছে।

সেই সমাবেশ থেকেই আওয়াজ উঠছে, ‘এই রাষ্ট্র ভাঙতে হবে— কণ্ঠে তোল এই আওয়াজ।’

বিজ্ঞাপন

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চা, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমোর্চা ও জাতীয় গণফ্রন্ট— এই চারটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টাফ) মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে।

সমাবেশ শুরুর আগে গণসঙ্গীতের মাধ্যমে শ্রমিক অধিকারের দীপ্ত শপথ নেন ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ। তারা বলার চেষ্টা করেন, বর্তমান বিশ্বের পূজিবাদী রাষ্ট্রগুলো ভাল’র পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে না। তাদের অবস্থান সরাসরি মন্দের পক্ষে। সুতরাং এই রাষ্ট্র ভেঙে দিয়ে শ্রমিকের, মজুরের রাষ্ট্র গড়তে হবে।

বিজ্ঞাপন

টাফ’র পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু দাবিও তুলে ধরা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— ১.  প্রত্যেক শ্রমিককে নিয়োগপত্র দিতে হবে, ২. কাজের চাপ কমাতে হবে, সপ্তায় ২দিন ছুটি দিতে হবে, ৩. অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দিতে হবে, ৪. শ্রমিক স্বার্থবিরোধী আইন বাতিল করতে হবে, ৫. রানা প্লাজা ধসের দিনটিকে শ্রমিক গণহত্যা দিবস ঘোষণা করতে হবে, ৬. মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করতে হবে।

কথা হয় টাফ’র সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুন নূজহাত মনিসার সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসে ১২ শতাধিক শ্রমজীবী মানুষ মারা গেল। তার বিচার এখনো হলো না— কোনো দিন হবেও না। কারণ, এই রাষ্ট্র শ্রমিকের রাষ্ট্র নয়।’

পাশেই সমাবেশ করছিল বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংস্থা। কবিতা এবং গণসঙ্গীতের মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকারের কথা বলছিলেন সংস্থাটির নেতৃবৃন্দ। তাদের দাবিও পরিষ্কার— রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে শ্রমিকবান্ধব করতে হবে। যাদের শ্রমে এবং ঘামে সভ্যতার অগ্রযাত্রা, তাদেরকে বঞ্চিত করে সভ্যতার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা যাবে না।

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংস্থার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘শ্রমিকদের শোষণ করতে করতে একেকটি ঘর সোনার সংসারে পরিণত হয়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের ঘর সোনায় মোড়ানো। আর আমার শ্রমিক ভাইয়েরা খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম পাওয়ানা বুঝে পায় না। আজকের এই শ্রমিক দিবসে আমাদের একটাই দাবি সভ্যতার চাকা যারা ঘুরায়, তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকে।’

পল্টন মোড় ও প্রেসক্লাব এলাকায় মিছিল করে আ স ম আব্দুর রব নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জে এস ডি)। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীক ‘লাল নিশান’ ও দলীয় পতাকাশোভিত হয়ে কয়েক শ’ নেতা-কর্মী ও সমর্থক নিয়ে মিছিল করেন সাবেক মন্ত্রী আ স ম আব্দুর রব।

‘দুনিয়ার মজদুর এক হও এক হও, যে হাত নির্যাতন করে সেই হাত ভেঙে দাও’— এই স্লোগানসহ পল্টন মোড় থেকে ২০-৩০ জন নারীর যে মিছিলটি প্রেস ক্লাবের দিকে এগোচ্ছিল, সেটি গৃহ নারী শ্রমিকদের মিছিল। ঘরে বসে গৃহকর্তা বা গৃহকর্তীর মার খেতে আর রাজি নয় তারা। মে দিবসে তারা শপথ নিচ্ছে, যে হাত নির্যাতন করে সে হাত তারা ভেঙে দেবে!

কথা হয় নূরী বেগমের সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের সবারই প্রায় একই রকম কাহিনী। স্বামী, বড় ভাই’র কাছ থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে আমরা মানুষের বাসায় কাজ করি। সেখানেও আমাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। আমরা এখন নির্যাতনের হাত ভেঙে দিতে চাই। কাজের ন্যায্য মজুরি চাই।’

মুক্তঙ্গনে মিছিল করছিল ‘গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস ফেডারেশন’। গার্মেন্টস শ্রমিকদের এই সংগঠনটির মূল দাবি হচ্ছে ন্যূনতম বেতম ১৬ হাজার টাকা। বর্তমান ন্যূনতম বেতন ৫ হাজার ৩ শ’ টাকায় তাদের কিছুই হয় না। বেঁচে থাকার জন্য তাদের প্রয়োজন বাড়তি বেতন।

কথা হয় প্যানউইন ফ্যাশন লিঃ এর সুপার ভাইজার মো. বাবুল আক্তারের সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, একজন অপারেটর এখন বেতন পায় ৫৩ শ’ টাকা। এই টাকায় ঢাকা শহরে কিছুই হয় না। মালিককে বেতন বাড়ানোর কথা বললে মালিক সোজা বলে দেয় সরকারের বেধে দেওয়া বেতনই আমরা দিচ্ছি। কম তো দিচ্ছি না। সুতরাং আমাদের পরিষ্কার দাবি, আমাদের ন্যূনতম বেতন ১৬ হাজার টাকা করতে হবে।’

বেতন-ভাতা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ গ্রামপুলিশ কর্মচারী ইউনিয়ন, বাংলাদেশ প্রাইভেটকার ও ট্যাক্সি ক্যাব ইউনিয়ন, বাংলাদেশ বিড়ি শিল্প শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নসহ কয়েক শত শ্রমিক সংগঠন সভা-সমাবেশ করে।

সারাবাংলা/এজেড/আইএ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন