বিজ্ঞাপন

মারা যাচ্ছে অনুদানের ভেড়া

December 20, 2022 | 7:02 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: রাজশাহীর তিনটি উপজেলায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছিল দুইটি করে ভেড়া। বিতরণের পর থেকে মারা যাচ্ছে ভেড়াগুলো। তবে কোন রোগে ভেড়াগুলো মারা যাচ্ছে তা জানেন না কেউ। মৃত্যুর কারণ জানতে মৃত ভেড়ার ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

বিজ্ঞাপন

ক্ষুদ্র জাতিসত্তার উপকারভোগীদের অভিযোগ, খুবই রুগ্ন ও হাড্ডিসার ভেড়া দেওয়া হয়েছিল তাদের। অসুস্থ এসব ভেড়া বাড়ি নেওয়ার পরই মারা যাচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের ‘সমতল ভূমিতে বসবাস করা অনগ্রসর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক ও জীবনের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় গত মাসে ভেড়াগুলো বিতরণ করা হয়েছিল।

জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলার ৪০০ করে ৮০০টি পরিবারের মাঝে ১ হাজার ৬০০টি ভেড়া বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বাগমারার ১১৬টি পরিবারের মাঝে ২৩২টি ভেড়া বিতরণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় গোদাগাড়ীর ২৬৬টি এবং তানোরের ১৭০টি পরিবারের মাঝে একটি করে বকনা গরুও বিতরণ করা হয়েছে। গত ১৯ নভেম্বর বাগমারায় ভেড়া বিতরণ করা হয়। এরপর ২৮ নভেম্বর গোদাগাড়ীতে এবং ৭ ডিসেম্বর তানোরে ভেড়া বিতরণ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌর এলাকার বলাই চন্দ্র সরকার দুটি ভেড়া পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক ভেড়া বিতরণ করেন। সেখান থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পরদিনই একটি ভেড়া মারা গেছে। আরেকটি ভেড়াও অসুস্থ। ভেড়ার মুখ থেকে লালা ঝরছে। পাতলা পায়খানা করছে। আনার পর থেকে ভেড়া জ্বরেও ভুগছে।’

বাগমারার মহব্বতপুর গ্রামের কড়ি রায়ও একটি ভেড়া বাঁচাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘হাড্ডিসার ও অসুস্থ দুটি ভেড়া দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে নেওয়ার চিকিৎসা করেও একটিকে বাঁচানো যায়নি। চারদিন পর ভেড়াটি মারা যায়।’

উপকারভোগী সবিতা রানী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এসব অসুস্থ ও হাড্ডিসার ভেড়া দিয়ে গরিবের সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার আখতার হোসেন বলেন, ‘বাগমারায় প্রায় ৪০টা এবং তানোর ও গোদাগাড়ীতে ১০ থেকে ১৫টি করে ভেড়া মারা গেছে। কোন রোগে মারা গেছে তা নিশ্চিত নই। সেটি নিশ্চিত হতে একটা মৃত ভেড়া ময়নাতদন্তের জন্য জয়পুরহাটে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি মৃত ভেড়ার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পরেই মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করে বলা যাবে।’

অসুস্থ ও হাড্ডিসার ভেড়া বিতরণের ব্যাপারে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘দু–একটা ওরকম থাকতে পারে। এই ভেড়া কেনার সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত নই। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে প্রকল্প চলছে। প্রকল্প শেষ হবে ২০২৩ সালের জুনে। ঢাকা থেকে প্রকল্পের ঠিকাদার ভেড়া সরবরাহ করেছেন। ভেড়া যে মারা যাচ্ছে তা প্রকল্প পরিচালককে জানানো হয়েছে।’

প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেনটেচ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাজশাহীতে ভেড়া সরবরাহ করেছে। এছাড়া আরও দুটি প্রতিষ্ঠান গরু ও ভেড়া সরবরাহ করেছে। জেনটেচ যেদিন রাজশাহীতে ভেড়াগুলো আনে, সেদিনই বিতরণ করা হয়। ভেড়া মারা যাওয়ার বিষয়ে কথা বলতে প্রতিষ্ঠানটির কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির ডেলিভারি চালানে থাকা ফোন নম্বরে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

ভেড়ার মরে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ড. অসীম কুমার দাস বলেন, ‘ঠাণ্ডার সময় এ রকম একটু হবেই। সব এলাকাতেই অল্প কিছু ভেড়া মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় বিতরণ করা ২২টা গরুও মারা গেছে। গরু ও ভেড়ার ঠিকাদারের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড ১৪ দিন। তাও আমি সেটি বাড়িয়ে এক মাস করেছি। এক মাসের মধ্যে মারা গেলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ছবি তুলে পাঠাবেন। যে উপকারভোগীর গরু বা ভেড়া মারা যাবে, তাকে আবারও নতুন করে দেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনএস

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন