বিজ্ঞাপন

‘অতিরিক্ত রক্তক্ষণে মা ও দুই মেয়ের মৃত্যু’

May 1, 2018 | 5:19 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: মিরপুরের পশ্চিম পাইকপাড়া সরকারি কোয়ার্টারে মা জেসমিন আক্তার (৩২) ও দুই মেয়ে হাসিবা তাহসিন হিমি (৯) ও আদিবা তাহসিন হানির (৪) মৃত্যু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে হয়েছে। তিনজনের শরীরেই গভীরভাবে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এই জখম থেকেই তাদের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়।

মঙ্গলবার (১ মে) শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ওই তিনজনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সেলিম রেজা এ তথ্য জানান।

সেলিম রেজা বলেন, ‘ময়নাতদন্তের সময় ভিসেরা নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। দুই মেয়েকে হত্যার পর মা নিজে আত্মহত্যা করেছেন নাকি বাইরে থেকে কেউ হত্যা করেছে তা ভিসেরা পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যাবে। এছাড়া হত্যার আগে শরীরে কোনো বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল কি না তার জন্যও ভিসেরা পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

মিরপুর বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার মাসুদ আহমদ মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘জেসমিন আক্তার তার দুই মেয়েকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেছেন বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। তবে এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না তা জানার জন্য তদন্ত অব্যাহত আছে। জেসমিনের শোয়ার ঘর থেকে একটি রক্তমাখা চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। সেটি পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।’

ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আর পুলিশের তদন্ত সব মিলিয়ে হত্যার প্রকৃত কারণ বের হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বিজ্ঞাপন

জেসমিন আক্তার খামারবাড়িতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে ক্যাশিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আর তার স্বামী হাসিবুল ইসলাম জাতীয় সংসদ ভবনের ল্যাজিসলেটিভ পদে কর্মরত আছেন। এই দম্পতির নিহত এক মেয়ে হাসিবা তাহসিন হিমি পাইকপাড়া মডেল স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী।

সোমবার (৩০ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে শোয়ার ঘর থেকে জেসমিন আক্তার ও তার দুই মেয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জেসমিন আক্তারের ছোট ভাই শাহীনুল ইসলাম জানান, গত চার বছর ধরে শাহীন ওই বাসায় আছেন। তার বোন ও দুলাভাই চাকরি করায় সকালে বাসা থেকে অফিসে চলে যেতেন। অধিকাংশ সময় দুই ভাগ্নি হিমি, হানিকে দেখাশোনা করতেন শাহীন। এর আগে হিমি ও হানিকে তাদের নানি দেখাশোনা করতেন। কিন্তু গত বছর নানি মারা যাওয়ায় তাদের দেখাশোনা করার আর কেউ ছিল না।’

শাহীন বলেন, ‘গতমাসে সাভারে একটা স্কুলে চাকরি হওয়ায় আমিও সময় দিতে পারছিলাম না। এ জন্য আপা প্রায়ই দুশ্চিন্তা করতেন। চাকরি করলে বাচ্চাদের কী হবে আর বাচ্চাদের দেখলে চাকরির কী হবে এ সব নিয়ে প্রায়ই অস্বাভাবিক আচরণ করতেন। গত মার্চ মাসে ভারতের কলকাতা থেকে আপার চিকিৎসাও করিয়ে আনা হয়।’

বিজ্ঞাপন

‘এর আগে তিনি একবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন এবং বাচ্চাদের জোর করে বিষ খাওয়ানোর সময় ব্যর্থ হয়েছিলেন।’

জেসমিনের ভাই শাহীন আরও বলেন, ‘গতকাল সোমবার দুপুর ২টার দিকে আপা অফিস থেকে বাসায় ফিরে হিমি ও হানিকে নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেন। প্রায় রাতেই অনিদ্রা অবস্থায় কাটায় তাই কেউ তাকে বিরক্ত করেননি। চারটার দিকে শাহীন বাইরে বের হয়ে যান। বাসায় ছিলেন জেসমিনের খালাত বোন রেহানা পারভীন, দুলাভাই হাসিবের ভাগ্নে ও ভাগ্নের বউ। তারাও বিকেলে ঘুমাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে বিকেল ৫টার দিকে হাসিব অফিস থেকে ফেরেন। দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে তিনিও স্ত্রী-মেয়েদের ডাকেননি। এরপর হাসিব মাগরিবের নামাজ পড়তে যান। মাগরিবের নামাজের সময় শাহীন বাসায় ফিরে বোন ও ভাগ্নেদের ডাকাডাকি করে না পেয়ে দুলাভাইকে ডাকেন। দুলাভাই এলে দরজার ফাঁক দিয়ে মেঝেতে রক্ত দেখতে পান। এরপর শাহীন পুলিশকে জানান। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে।’

তবে পশ্চিম পাইকপাড়ার ওই সরকারি কোয়ার্টারের কল্যাণ সেক্রেটারি হেলাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে রহস্য আছে। কারণ একজন মা কীভাবে একইসঙ্গে নিজের গলা ও দুই হাত কাটবেন? দুই বাচ্চাকে কেনই বা তিনি নির্মমভাবে হত্যা করবেন? বাচ্চাদের গলা কাটলেন বুঝলাম তবে পেটে কেন ছুরিকাঘাত করলেন? এ সব বিষয় আমলে নিয়ে প্রকৃত রহস্য বের করা দরকার।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন