বিজ্ঞাপন

‘তেলা মাথায় তেল দিতে আসিনি, এসেছি শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে’

May 1, 2018 | 5:53 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি তেলা মাথায় তেল দিতে আসিনি, এসেছি আপনাদের উন্নয়নের জন্য।’

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মঙ্গলবার (১ মে) মে দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নিহত শ্রমিকদের পরিবার, আহত শ্রমিক ও শ্রমিকদের মেধাবী সন্তানদের মাঝে চেক বিতরণ করেন।

উপস্থিত শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘একটা ভরসা রাখবেন, আপনাদের কোনও অসুবিধা হলে আমি তো আছি। আমি নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। আপনাদের ভাগ্য গড়তে এসেছি। আপনাদের কোনো সমস্যা হলে আমি দেখব।’

বিজ্ঞাপন

মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “শ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তাদের প্রতি আপনাদের আন্তরিক হতে হবে। ‘শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই, সকলে মিলে সোনার বাংলা গড়তে চাই’ এই স্লোগান কতটুকু উপযোগী সেটা আমাদের অনুধাবন করতে হবে। যে শ্রমিকরা শ্রম দিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আপনার জন্য উৎপাদন করেন। আপনি ব্যবসা করেন। আপনি ও আপনার পরিবার ভালো থাকে সেই শ্রমজীবী মানুষের প্রতিও আপনাদের আন্তরিক হতে হবে। তাদের প্রতি কর্তব্যে কোনও ত্রুটি না হয় তা দেখতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ স্বাধীন দেশে। দেশের সকল মানুষ সমান অধিকার পাবে এটিই আমাদের লক্ষ্য। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই লক্ষ্য অর্জনে সারাজীবন কাজ করেছেন। মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন। সুতরাং মেহনতি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা ছিল তার লক্ষ্য।’

‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সকল শিল্পকারখানা জাতীয়করণ করেছিলেন। তিনি শ্রমিকদের জন্য মজুরি কমিশন করেছিলেন। ১ মে সরকারি ছুটির ব্যবস্থা করেছেন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা আজ আমাদের মাঝে নেই। আমাদের দুর্ভাগ্য যে ৭৫ এর ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে প্রাণ হারাতে হয়েছে। পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা চাকচিক্যের জীবন অনুসরণ করেছে। ফলে শোষিত মানুষ আরও শোষিত থেকেছে।’

শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষের ওপর দমন-পীড়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালে রমজান মাসে ১৯ জনকে গুলি করে হত্যা করেছিল বিএনপি সরকার। তাদের হাত থেকে কৃষকরাও রক্ষা পায়নি। সারের দাবি করায় কৃষকদের গুলি করে হত্যা করে তারা।’

‘আমাদের লক্ষ্য শ্রমিকদের উন্নয়ন করা। শ্রমিকরা যেন উৎপাদনমুখি হয়, শ্রমিকদের কল্যাণ সাধনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। আমরা ৯টি টেক্সটাইল মিলের মালিকানা শ্রমিকদের দিয়েছিলাম, যাতে তারা নিজেদের উৎপাদন নিজেরা করতে পারে। এরইমধ্যে আমরা শ্রমিক কল্যাণ তহবিল ফান্ড গঠন করেছি। এই তহবিলের খোঁজ-খবর আমরা রাখি। এই ফান্ড থেকে আমরা শ্রমিকদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি, এই ফান্ডের অর্থে শ্রমিকদের সন্তানরা লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণ করেছি। তাদের সন্তানদের জন্য শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র নির্মাণ করেছি। আমরা জাতীয় শ্রমনীতি ২০১২ প্রণয়ন করেছি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘শ্রমখাতে কয়েকটি অ্যাক্সিডেন্ট ঘটে গেছে। যার কারণে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছিল। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছি, শ্রমিকদের পরিবারকে সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের কোনো সমস্যা হলে আমি তো আছি। আমি নিজের ভাগ্য করার জন্য আসিনি। এসেছি আপনাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, কিছু কিছু শ্রমিক নেতা সেজে শ্রমিকদের ওপর খরবদারি করেন। কোনো কিছু হলেই বিদেশিদের কাছে গিয়ে নালিশ করেন। দেশের বদনামটা তুলে ধরেন। আর এই বদনাম করতে গিয়ে হয়ত একখানা টিকেট বিনা পয়সায় পান। বিদেশে থাকার একটু সুযোগ পান। একটু যেতে পারেন। সামান্য সুযোগের জন্য দেশের বদনামটা বাইরে গিয়ে করাটা নিজের দেশের জন্য যে কত ক্ষতিকর, সেটা তাদের অনেকেই বুঝতে পারেন না। এটাই হচ্ছে আমাদের সব থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয়। এ দেশটা আমাদের। এ দেশটাকে আমাদেরই গড়ে তুলতে হবে। দেশটা আমাদের, আমাদেরই গড়ে তুলতে হবে। দেশটি যতই উন্নয়ন হবে। ততই আমাদের কল্যাণ হবে। এই কথাটি বুঝতে হবে। দেশপ্রেম থাকতে হবে।’

‘আমরা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশকে গড়ে তুলতে চাই। দেশের মেহনতি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা আমাদের সরকারের লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধু দেশের সব শিল্পকারখানা জাতীয়করণ করেছিলেন’ বলেন তিনি।

মালিক-শ্রমিকদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার আহ্বান জানানন শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক আন্তর্জাতিক চাপ আছে। বাইরে থেকে কেউ উসকানি দিলো, অমনি সেখানে শুরু হয়ে গেল তাণ্ডব, এই ঘটনা যেন কখনও না ঘটে। সেই ব্যাপারে আমি সবাইকে সতর্ক করে দিচ্ছি। আমি বলব, নিজের চাকরি ও কাজের ক্ষেত্র যেন কোনোমতেই ধ্বংস না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। শ্রমজীবীদের বলব, যে কারখানা আপনার রোজগারের ব্যবস্থা করে। আপনার ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করে। সেই কারখানা যেন ঠিকমতো চলে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সেখানে যেন কোনো অশান্তি সৃষ্টি না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে অনুরোধ করব।’

সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপগুলো তুলে আরও বলেন, ‘যারা বিদেশে যান তাদের বলব, দালালের খপ্পরে পড়ে সোনার হরিণ ধরা জন্য বিদেশে পাড়ি না জমান। সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ বিদেশে গিয়ে যে কষ্টটা তারা পান, যে মানবেতর জীবন-যাপন করেন তা আমি স্বচক্ষে দেখেছি।’

জাতীয় কবি নজরুলের কবিতার পাঠ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ মানুষই। মানুষের অধিকার সবারই ওপরে। মানুষের কল্যাণ করা সবার দায়িত্ব। কাউকে ছোট করে দেখা নয়। সবার সম্মান দিতে হবে। এটাই মানুষের ধর্ম। মেহনতি শ্রমিক-কৃষক-মজুরের জন্যই আমাদের রাজনীতি। তাদের ভাগ্য পর্বিতন হলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে যাবে। সব শ্রমিক-মজুরের কাছে দেশ গড়ার কাছে সহযোগিতা চাই।’

সারাবাংলা/এনআর/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন