May 1, 2018 | 7:07 pm
।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: কাঁঠালবাগান ঢালে নিবিষ্ট মনে ইট ভেঙে চলেছেন মাঝ বয়সী এক নারী। অনেকক্ষণ পাশে বসেও তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা গেল না। বড় একটি পাথরের ওপর একটা করে ইট নিয়ে ভাঙছেন আর সরিয়ে রাখছেন ডান পাশে। আবার বাম পাশ থেকে বড় ইট নিয়ে ভাঙছেন।
বেশ কিছুক্ষণ পর তার সময় হলো। জানতে চাইলেন, রইদের মধ্যে বইয়া রইছেন ক্যান? কথা বলতে চাই জানালে- আবার একটা ইট হাতে নিয়ে দ্রুত জবাব দেন, যা বলার তাড়াতাড়ি বলেন।
আজ মে দিবস, আপনি জানেন- প্রশ্ন করতেই এবার তিনি থেমে যান। বলেন, ‘জানি। কিন্তু দিবস মানলে পেটে ভাত জুটতো না, কেউতো আইয়া দুপুরের খাওন বাড়িতে দিয়া যাইব না। এই ইট ভাইঙ্গা টাকা পামু, সেই টাকা দিয়ে বাজার কইরা দুপুরে ভাত খামু।’
কথায় কথায় এবার গল্পটা হয়েই যায়। নাম বেদানা বেগম, নিজের বয়সটা ঠিক জানা নেই তার। বললেন, চল্লিশ-টল্লিশ হইবো!
ঢাকায় এসেছিলেন ২০ বছর আগে। পাশের বস্তিতে স্বামী, দুই ছেলে, ছেলের বউ এবং দুই নাতিকে নিয়ে সংসার তার। কাঁঠালবাগান ঢালে ইট ভেঙে যা আয় হয়, তাই দিয়েই ঘোরে সংসারের চাকা। মাঝে মাঝে মিলে যায় বড় কাজ। তখন পরিচিত আরও কয়েকজনকে নিয়ে দল ধরে কাজে যান।
দুই ছেলে যা আয় করে, তাতে সংসার চলে না। এদিকে বেদানা বেগম ও তার স্বামী দু’জনই ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। রোজগার না হলে খাওয়ানোর কেউ নেই। তাই এই বয়সেও কাজ করতে হচ্ছে।
বস্তিতে তারা যে ঘরে থাকেন তার ভাড়া মাসে ২ হাজার টাকা, পাশের দুই ঘরে বড় ছেলে, বউ ও দুই নাতি থাকে। ছোট ছেলে থাকে আরেক ঘরে। সংসার বড় হওয়ায় ঘর আলাদা। সেগুলোর ভাড়া মাসে ২ হাজার ৬শ’ টাকা করে। ছেলেরা ভ্যান চালায়। তিনি বলেন, আমরা আলাদা থাহি। তয় একলগেই রান্না করি- এই শান্তিগুলান এহনও আছে।
বেদানা বেগম জানান, আগের মতো কাজ করতে পারেন না তিনি। ‘২০ বছর ধইরা কাজ করতে করতে হাতে বয়ড়া পইড়া গেছে, আবার এইহানে না বইলেও ভালা লাগে না।
ইট ভাঙলে মজুরি নির্ধারণ হয় কিভাবে জানতে চাইলে বেদানা বেগম বলেন, আগে এক ফিট ইট ভাঙলে পাইলাম ৩ টাকা, অহন হইছে ১৫ টাকা, ২৫ টাকা। তবে যার কাছ থেকে যেমনে নিতে পারি, আবার অনেক সময় ১ বস্তায় ১৫ টাকা পাই।
“ঝড়-বাদল না হইলে আর শরীর খুব খারাপ না হইলে কাজ করতে হয়। কাজ করলে টাকা, আর টাকা হাতে পাইলে ভাত জোটে। মে দিবসে আমাগো ছুটি নাই।”
একই কথা বলেন আশ্রাব আলী। পাশেই কাজ করছিলেন তিনি। আশ্রাব আলী দিন তারিখ বলতে না পারলেও জানান, এরশাদ ক্ষমতায় থাকার সময় তিনি ঢাকায় আসেন। শুরুতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। এখন আর আগের মতো পরিশ্রম করতে পারেন না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে ঘরে বসে থাকতেও পারে না, কাজ করলেই চলে দিন।
“হাত ব্যথা করে, কিন্তু যতুক্ষণ পেট আছে ততুক্ষণ আহার আছে-তাইতো হাতের ব্যথায় ব্যথা পাই না”।
সারাবাংলা/এটি
** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook