বিজ্ঞাপন

আরও ২ বছর স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি থাকছেন ডা. খুরশীদ

December 30, 2022 | 11:26 am

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কে হতে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতরের পরবর্তী মহাপরিচালক (ডিজি)? অধিদফতরের এই সর্বোচ্চ পদে আসছে কি কোনো নতুন মুখ? নাকি আরেক মেয়াদে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম?— স্বাস্থ্য অধিদফতর, দেশের চিকিৎসক সমাজ ও স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টদের কাছে এখন এ আলোচনাই তুঙ্গে।

বিজ্ঞাপন

তবে নতুন কোনো মুখ নয়, বরং দেশের স্বাস্থ্যসেবার চরম সংকটকালে বিপদ সামাল দিয়ে চিকিৎসাব্যবস্থাকে স্থিতিশীল রাখার ‘পুরস্কার’ পেতে যাচ্ছেন অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক হিসেবে আরও দুই বছরের দায়িত্বে থাকছেন তিনি। খুব দ্রুতই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে বলে সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র।

দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের এক চ্যালেঞ্জিং সময়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। এরপর থেকে একের পর এক কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলার পাশাপাশি দেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতে নীরবেই কাজ করে গেছেন তিনি। কোভিড-১৯ সংক্রমিতদের চিকিৎসায় অক্সিজেন সংকট মোকাবিলার পাশাপাশি দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগে যে সফলতা দেখিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর, তার নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম।

মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরে তার চাকরির নিয়মিত মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে পরবর্তীতে তা দুই বছর বাড়িয়ে নেওয়া হয়। আর তাই মহাপরিচালক হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম যখন স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রথম ঢেউ চলছিল। জেকেজি হেলথকেয়ার দুর্নীতি, রিজেন্ট হাসপাতাল দুর্নীতি, পিপিই সংকটসহ নানা সমালোচনায় বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাল ধরেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা ও আরেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ডা. সানিয়া তাহমিনাসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ভালোভাবেই সামাল দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

পরবর্তীতে অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর (অতিরিক্ত মহাপরিচালক, প্রশাসন) ও অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরাসহ (অতিরিক্ত মহাপরিচালক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পরবর্তী ঢেউ সামাল দেওয়ার পাশাপাশি সফলভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমও সফলভাবে পরিচালনা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। যার নেতৃত্বে ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মাস খানেক পরেই দেখা যায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তাণ্ডবে পুরো বিশ্বে বাড়তে থাকে কোভিড-১৯ সংক্রমিতের সংখ্যা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যখন মানুষ কোভিড-১৯ সংক্রমিত হওয়ার পরে অক্সিজেন সংকটে হাহাকার করছিল, তখন বাংলাদেশেও একই সমস্যার আশঙ্কা করছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জোরালো পদক্ষেপে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থায় অক্সিজেনের অভাব তেমনটা দেখা যায়নি। আর এর নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

এ সময় দেশে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষার ল্যাব সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি চিকিৎসাসেবায়ও এসেছে গতি। বর্তমানে সকল সরকারি হাসপাতালেই স্থাপিত হচ্ছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন। এছাড়াও দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতরের ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি ছিল সারাবিশ্বে প্রশংসনীয়। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নে চলমান নানা উদ্যোগের কারণেও প্রশংসিত ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।

আর তাই সব মিলিয়ে চলতি মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে আরও দুই বছরের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পেতে চলেছেন অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।

বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হলেও এ নিয়ে খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যেই আছে নানা রকমের আলোচনা। আর তাই সম্ভাব্য ডিজি হওয়ার তালিকায় ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতরের বর্তমান দুই অতিরিক্ত মহাপরিচালক যার মাঝে একজন অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন), অন্যজন অধ্যাপক আহমেদুল কবীর (প্রশাসন)। এছাড়াও একাধিক পরিচালকের নাম শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত সফলতা বিবেচনায় বর্তমান মহাপরিচালকের চুক্তির মেয়াদ বাড়তে যাচ্ছে বলেই জানিয়েছে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (স্বাস্থ্য) দশম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। তিনি ১৯৮৪ সালে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। চাকরি জীবনে মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে সার্জারী বিভাগে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

অধ্যাপক খুরশীদ আলম ১৯৮৪ সালের ২২ নভেম্বর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে সহকারী সার্জন হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন সাব-সেন্টার এবং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন সময়ে মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্টার হিসেবে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং রেজিস্টার হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া তিনি মেডিকেল অফিসার হিসেবে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে তিনি সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকালে জুনিয়র কনসালটেন্ট, সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। এছাড়া তিনি শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বরিশালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরে মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে প্রায় চার বছর দায়িত্ব পালন করেন।

সারাবাংলা/এসবি/এনএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন