বিজ্ঞাপন

সেই ‘কাশেম চেয়ারম্যান’ ফিরলেন ২০ বছর পর, গেলেন কারাগারে

January 3, 2023 | 4:36 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা জামালউদ্দিন চৌধুরী অপহরণ মামলার আসামি আবুল কাশেম চৌধুরীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ২০ বছর ধরে পলাতক ছিলেন ‘কাশেম চেয়ারম্যান’ নামে বহুল আলোচিত ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক এই চেয়ারম্যান।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ নারগিস আক্তারের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন কাশেম চেয়ারম্যান। ওই আদালতে জামালউদ্দিন অপহরণ মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। বিচারক জামিনের আবেদন প্রত্যাখান করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী ফরিদ আহমেদ।

জানা গেছে, ঘটনার পরই কাশেম চেয়ারম্যান পালিয়ে বিদেশে চলে যান। মাসখানেক আগে দেশে ফিরে আসেন। ২০১৪ সালে গ্রেফতার হওয়া সুলতান ড্রাইভার নামে এক আসামি জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, জামাল উদ্দিনকে কাঞ্চননগরের গহীন পাহাড়ে নিয়ে যান তিনি। গুলি করে হত্যার আগ পর্যন্ত তিনি, কালা মাহবুব, লম্বা মাহবুব ও টেংরা ওসমান জামালউদ্দিনের সঙ্গে ছিলেন। কাশেম চেয়ারম্যানের নির্দেশে জামালউদ্দিনকে হত্যা করা হয়।

বেঞ্চ সহকারী ফরিদ আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কাশেম চেয়ারম্যান হাইকোর্টে আগাম জামিনের জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু মামলা বিচারাধীন থাকায় আদালত জামিন না দিয়ে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।’

বিজ্ঞাপন

২০০৩ সালের ১৩ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে নগরের চান্দগাঁও এলাকার বাসায় ফেরার পথে অপহৃত হন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতা ও ব্যবসায়ী জামালউদ্দিন। অপহরণকারীরা মুক্তিপণ হিসেবে তার পরিবারের কাছে এক কোটি টাকা দাবি করে। প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী অপহরণকারী চক্রকে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকাও দেয় পরিবার। কিন্তু মুক্তি দেওয়া হয়নি।

পরের সংসদ নির্বাচনে আনোয়ারা থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জামাল উদ্দিন। তার পরিবার অভিযোগ করেছিল, মনোনয়ন ঠেকাতে প্রতিদ্বন্দ্বীর নির্দেশে তাকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়।

অপহরণের দুই বছর পর ২০০৫ সালের ২৪ আগস্ট র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার কালা মাহবুব নামে এক আসামি ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর এলাকায় গহীন পাহাড়ে জামালউদ্দিনের কঙ্কাল দেখিয়ে দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। সেই কঙ্কাল উদ্ধারের পর পরিবারের সদস্যরা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। পরে সিঙ্গাপুরে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনায় জামালউদ্দিনের ছেলে চৌধুরী ফরমান রেজা লিটন বাদী হয়ে নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। সাড়ে তিন বছর ধরে ৯ জন পুলিশ কর্মকর্তা পর্যায়ক্রমে মামলাটি তদন্ত করেন। এ অবস্থায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলার তদন্তভার নেয়।

২০০৬ সালের ২০ জুলাই সিআইডি আনোয়ারার তৎকালীন সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম, তার ছোট ভাই মারুফ নিজামসহ ২৪ জনকে অব্যাহতি দিয়ে এবং ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেয়। কিন্তু ঘটনার মূল হোতাদের বাদ দেওয়ার অভিযোগের বিরুদ্ধে নারাজি দেন বাদী। আদালত মামলা পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিলে ২০০৬ সালের ১৬ আগস্ট আগের ১৬ জনকেই আসামি করে ফের অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। বাদী এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধেও নারাজি দেন।

এদিকে মামলার আসামি কালা মাহবুবকে রাজসাক্ষী করায় আপত্তি জানিয়ে মারুফ নিজাম উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নেন ২০০৭ সালে। ২০১১ সালে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে লিভ টু আপিল করেন আসামিরা। এটি খারিজের আদেশ চট্টগ্রাম আদালতে এসে পৌঁছায় ২০১৬ সালে।

২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি স্থানান্তর করা হয়। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আদালত বাদীর নারাজি আবেদন নাকচ করে ২০০৬ সালে সিআইডির দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। দু’জন আসামি মারা যাওয়ায় তাদের বাদ দিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ১৩৫ কার্যদিবস শেষ হয়ে যাওয়ায় মামলাটি ট্রাইব্যুনাল থেকে নিয়মিত আদালতে ফেরত যায়।

বিজ্ঞাপন

পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী ফরিদ আহমেদ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, মামলায় মোট চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। বাদীকে বারবার সমন দেয়ার পরও হাজির হচ্ছেন না। এজন্য সাক্ষ্যগ্রহণও আগাচ্ছে না।

মামলার ১৪ আসামির মধ্যে এতদিন কারাগারে ছিলেন শুধু মো. আলমগীর নামে এক আসামি। সর্বশেষ কাশেম চেয়ারম্যান কারাগারে গেল। বাকি আসামিরা জামিনে আছেন।

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন