বিজ্ঞাপন

প্রচণ্ড শীতে গাছতলায় কাটছে কয়েদভানুর দিনরাত

January 8, 2023 | 8:35 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

গাইবান্ধা: কনকনে ঠান্ডা বাতাসে গাছের নিচে শুয়ে বৃদ্ধা কয়েদভানু বেওয়া। বয়স ৭৪ বছরের কোঠায়। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া দেহ নিয়ে নিজেই যেখানে অচল তার ওপর ৫৪ বছর বয়সের একমাত্র ছেলে বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী আশকর আলীকে নিয়ে অমানবিক দিনযাপন করছেন। আপনজন না থাকায় সহায় সম্বলহীন বৃদ্ধা মা-ছেলে খেয়ে না খেয়ে খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় বসবাস করছেন। এলাকাবাসী জানান, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরের চলাচলের রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে একটি গাছতলায় কয়েকদিন ধরে রাতযাপন করছেন।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা জানান, এরকম জীবন ছিল না কয়েদভানুর। সংসার ছিল, স্বামী ছিল। ১৯৭০ সালে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী গ্রামের আলতাব হোসেনের সঙ্গে কয়েদভানুর বিয়ে হয়। সেখানে কয়েদভানুর দাম্পত্য জীবনে বাক প্রতিবন্ধী ছেলে আশকর আলীর জন্ম। বছর খানেক যেতে না যেতেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয় কয়েদভানুর। পরে কয়েদভানু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কাশিয়াবাড়ী গ্রামের তজের প্রধানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সেখানে কল্পনা ও গোলাপী নামে দুই সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু সে ঘরও ভেঙে যায় কয়েদভানু’র। স্বামী তজের প্রধান তাকে ডিভোর্স দিলেও কয়েদভানু সন্তানদের মায়ায় রয়ে যান ওই গ্রামেই। এই কঠিন পরিস্থিতিতে জীবিকার তাগিদে প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে কয়েদভানু অন্যের বাড়িতে কাজকর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

কয়েকভানুর একমাত্র ছেলে বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় স্বাভাবিক চলাফেরাও করতে পারেন না। এমনকি নিজে নিজে খেতে পারেন না। অভাবে ভালো কোনো খাবার খেতে না পাড়ায় মা-ছেলের শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে নানা রোগ। অর্থাভাবে ভালো চিকিৎসা সেবা নিতে না পারায় বৃদ্ধা কয়েদভানু ও ছেলে বাকপ্রতিবন্ধী আশকরের শরীর অনেকটা ক্ষমতাহীন। স্বাভাবিক চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

কাশিয়াবাড়ীর স্থানীয় বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলী জানান, কেউ দয়াপরবশ হয়ে খাবারদাবার দিলে তাতেই দিন কাটছে কয়েদভানু ও তার প্রতিবন্ধী ছেলের। না হলে অনাহারে কেটে যায় দিন-রাত। তাদের দেখভালের কোনো আত্মীয় স্বজন না থাকায় অসহায় বৃদ্ধা ৭৪ বছর বয়সী কয়েদভানু তার ৫৪ বছর বয়সী ছেলে বাক ও শারীরিক ভারসাম্যহীন আশকর আলীকে দেখভাল করছেন।

মা-ছেলের করুণ অবস্থা দেখে ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক ১০ কেজি চাল দিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম শীত মোকাবিলার জন্য দিয়েছেন দুটি কম্বল।

বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন তাদের জন্য পাঠিয়েছেন কম্বল। তিনি বলেন, কয়েদভানু ও তার ছেলে চাইলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের ঘর দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন