বিজ্ঞাপন

প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে বিশ্বব্যাংক, মন্দার আশঙ্কা প্রবল

January 11, 2023 | 9:36 am

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২০২৩ সালের জন্য বৈশ্বিক অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে বিশ্বব্যাংক। চীনে করোনাভাইরাসের নতুন প্রাদুর্ভাব, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুদের হার বৃদ্ধি ও চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক ইঞ্জিনগুলো থমকে গেছে বলে মনে করে সংস্থাটি। এতে ২০২৩ সালে বিশ্ব মন্দায় পড়ার প্রবল আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

উন্নয়ন ঋণদাতা সংস্থাটি মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) প্রকাশিত পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ২০২৩ সালে বিশ্বে গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৭ শতাংশ হারে। এর আগে গত বছরের জুনে ২০২৩ সালের জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ ধরেছিল বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের নতুন পূর্বাভাসে যে সংখ্যা ধরা হয়েছে তা আশঙ্কাজনক। ১৯৯৩ সালের পর কেবল ২০০৯ সালের বিশ্ব মন্দা এবং ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারির সময় এই সংখ্যার কম প্রবৃদ্ধি দেখেছিল বিশ্ব।

২০২৪ সালের জন্য পূর্বাভাসেও প্রবৃদ্ধির হার কমিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত জুনে দেওয়া পূর্বাভাসে বিশ্বব্যাংক এ হার ধরেছিল ২ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে মঙ্গলবার হালনাগাদ পূর্বাভাসে ২০২৪ সালের জন্য গড় বৈশ্বিক অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ।

এর আগে গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সাল কঠিন হবে। কারণ বিশ্বের তিন প্রধান অর্থনীতির গতি একসঙ্গে ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।’ এবার বিশ্বব্যাংকও মন্দার সতর্কতা জারি করেছে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেন, ‘মন্দা হবে বিস্তৃতি ভিত্তিক এবং বিশ্বের প্রায় প্রতিটি অংশে মানুষের উপার্জনের বৃদ্ধি কোভিড -১৯ মহামারির আগের সময়ের তুলনায় ধীর হবে।’

বিশ্বব্যাংক বলেছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী তিনটি অংশ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোজোন এবং চীন। এই তিন অর্থনীতিই দুর্বল সময় পার করছে। এই অবস্থা দরিদ্র দেশগুলোর সমস্যাগুলোকে আরও খারাপ করে তুলেছে।

করোনা মহামারির ২০২০ সালের পর ২০২১ সালে বিশ্বের ধনী দেশগুলোতে গড়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। ২০২২ সালে এ হারে নেমে যায় ২ দশমিক ৫ শতাংশে। তবে বিশ্বের ধনী দেশগুলো ২০২৩ সালে বড় ধাক্কা খাবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। চলতি বছরে ধনী দেশগুলোর গড় প্রবৃদ্ধি মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিজ্ঞাপন

অর্থনৈতিক গতিতে এমন বাধার জন্য প্রধানত মূল্যস্ফীতিকে দায়ী করছে বিশ্বব্যাংক। তবে এক্ষেত্রে আশার কথা শুনিয়েছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংক মনে করছে, ২০২৩ সালে পণয়ের দরবৃদ্ধির গতি কিছুটা হ্রাস পাবে। গেল ২০২২ সালে পণ্যের  দর বেড়েছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে।

সংস্থাটি বলছে, যদিও কিছু কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে, কিন্তু জ্বালানির দর কমে যাবে। এতে অন্যান্য বহু পণ্যের দর কমবে। জ্বালানির তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ইউরোপে চাহিদার হ্রাস পাওয়ায় জ্বালানির দর কমবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক।

এছাড়া খাদ্য শস্যের দামও নতুন বছরে ৫ শতাংশ কমার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে এতেও কিছু বছর আগের দামে ফিরবে না শস্যের দাম। কারণ ২০২২ সালে বিশ্বে খাদ্য শস্যের দাম বেড়েছিল ১৩ শতাংশ।

২০২৩ সালে বাড়তি সুদের হার অর্থনীতিগুলোর গতি কমাতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। উল্লেখ্য, গত বছর বাড়ন্ত মূল্যস্ফীতিতে লাগাম দিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মতো প্রধান প্রধান অর্থনীতিগুলো নীতিনির্ধারণী সুদের হার বাড়িয়েছিল। এর ঘানি এ বছর টানতে হতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বের কোনো দেশে যখন পণ্যের দাম বেড়ে যায় তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বাজারে অর্থপ্রবাহ হ্রাস করে তার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি সুদ হারে ঋণ নিতে হয়। এছাড়া ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের জন্য গ্রাহককে দিতে হয় বাড়তি সুদ। এভাবে বাজারে অর্থপ্রবাহে রাশ টানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সারাবাংলা/আইই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন