বিজ্ঞাপন

পিলখানা হত্যা মামলায় ১৯৬ জনের সাজা বহাল

November 27, 2017 | 10:37 am

ঢাকার পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার মামলায় সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো রায় পড়া শুরু হয়েছে। এই মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ২৫৬ আসামির মধ্যে ১৯৬ জনের সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।

বিজ্ঞাপন

ক্রমান্বয়ে সাজাপ্রাপ্ত সকল আসামির নাম ঘোষণা করা হচ্ছে। রায়ে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত ২৫৬ জনের মধ্যে ২৯ জন খালাস, ২৮ জন আপিল দায়ের করেনি এবং ৩ জন মারা গিয়েছেন। ১৯৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়েছে।

রোববার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা শুরু হয়। সোমবার ছিল রায় ঘোষণার দ্বিতীয় দিন।

দশ হাজার পৃষ্ঠার এ রায়ে ১০৫৫ পৃষ্ঠার পর্যবেক্ষণ রয়েছে। দীর্ঘ রায়ে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা, বিচারিক কার্ক্রমসহ মামলার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। রোববার (২৬ নভেম্বর) বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা শুরু করেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।

বিজ্ঞাপন

সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে বিচারকরা এজলাসে ওঠেন। এরপর বিচারপতি মো. শওকত হোসেন বিসমিল্লাহ বলে রায়ের প্রাথমিক পটভূমি তুলে ধরেন। এরপর বেঞ্চের অপর সদস্য বিচারপাতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী তার অংশ পাঠ শুরু করেন। হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেন, পিলখানার হত্যাকাণ্ড জাতির জন্য কলঙ্কজনক ঘটনা। জাতিকে এই কলঙ্ককে অন্ততকাল ধরে বয়ে বেড়াতে হবে।

আদালত বলেন, প্যারামিলিটারি হিসেবে সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধ ও সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব পালন করে আসছিল বিডিআর। কিন্তু পিলখানার ঘটনাটি এ বাহিনীর চেইন অব কমান্ড এবং এর ঐতিহ্য নষ্ট করেছিল। একটি স্বার্থানেষী মহল ষড়যন্ত্র করে বিডিআর ও সেনাবাহিনীকে সাংঘর্ষিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেছে।

আদালত বলেন, এ রায় যুগান্তকারী। মামলার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আইনবিজ্ঞান, অপরাধ বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া মামলায় সার্বিক সহযোগিতার জন্য রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তাসহ উভয়পক্ষের আইনজীবীদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। রায় ঘোষণা শুরু হওয়ার আগেই আদালত কক্ষ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় আইনজীবী ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে।

গত ১৩ এপ্রিল সকল আসামির ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের ওপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়েছিল। এরপর দুইবছরেরও অধিক সময় এ মামলার শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।

রাজধানীর পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অবস্থিত ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ড. মো.আখতারুজ্জামান ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পিলখানা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন, ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে (তিন বছর থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত) কারাদণ্ড এবং ২৭৮ জনকে খালাস প্রদান করা হয়। এছাড়া ৪ জন আসামি বিচার চলাকালে মারা যাওয়ায় মামলার দায় থেকে তারা অব্যাহতি পায়।

রায়ে খালাসপ্রাপ্ত ৬৯ জন আসামির সাজা চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা তাদের সাজা বাতিল চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন।

বিজ্ঞাপন

এ মামলার আপিল শুনানির জন্য সুপ্রিমকোর্টের বিশেষ ব্যবস্থায় সর্বমোট ৩৭ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। এ জন্য মোট ১২লাখ ৯৫ হাজার পৃষ্ঠার ৩৫ কপি ও অতিরিক্ত দুইকপি পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এ ঘটনায় প্রথমে রাজধানীর লালবাগ থানায় হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে এসব মামলা নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। মামলায় সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যা মামলায় ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরও ২৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় আসামি দাঁড়ায় ৮৫০ জনে। এছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিআইডি। পরে আরও ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

এজেকে/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন