বিজ্ঞাপন

কিছু না পেয়ে শিক্ষাক্রমের ওপর চড়াও

January 21, 2023 | 7:39 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : সরকারের বিরুদ্ধে কিছু না পেয়ে ‘স্বাধীনতা, প্রগতি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও নারী অধিকার বিরোধী’ একটি মহল নতুন প্রণীত শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২১ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন’র (এইউডব্লিউ) দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগদানের পর সাংবাদিকদের এ সব কথা বলেন।

নতুন পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বিরোধিতার প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, কোন শক্তি এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। একটি অপশক্তি আছে, যারা আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, যারা আমাদের প্রগতির বিরুদ্ধে, যারা আমাদের উন্নয়নের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, যারা আমাদের নারী অধিকারের বিরুদ্ধে- তারাই এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই শক্তি সরকার বিরোধী কিছু খুঁজে না পেয়ে শিক্ষাক্রমের ওপর চড়াও হয়েছে।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যাচারের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘বলা হচ্ছে যে, আমাদের নতুন বইয়ে ইসলাম ধর্মবিরোধী বিষয় আছে, একেবারেই অসত্য। বলা হচ্ছে, ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত সব বিষয় সরিয়ে দিয়ে ভিন্নধর্মী জিনিসপত্র আনা হয়েছে, একেবারে অসত্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার ছবি দিয়ে, বিভিন্ন বইয়ের ছবি দিয়ে, প্রথম শ্রেণির একটি বর্ণপরিচয়ের বইয়ের ছবি দিয়ে বলা হচ্ছে, এটি আমাদের বই। আসলে এটি আমাদের বই নয়। এটি পশ্চিমবঙ্গের একটি বই, যেটি এখন সেখানেও চলে না। এই বই দিয়ে বলা হচ্ছে, আমরা এটি শেখাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

জনগণকে সজাগ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের বুঝতে হবে, জানতে হবে যে— একটি অপশক্তি আছে যারা মিথ্যাচার চালিয়ে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে শুধু প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় না, দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে চায়। বইয়ে ধর্মবিরোধী কিছু থাকার সুযোগই নেই। আমরা নৈতিকতার শিক্ষায় বিশ্বাসী। নৈতিকতার মূল স্তম্ভ হচ্ছে ধর্মীয় শিক্ষা। বরং আমরা যে কারিকুলাম করেছি, সেটা হচ্ছে পড়ে পড়ে শেখা এবং যা শিখছি তার চর্চা করা। ধর্মের বিষয়ও আমরা একইভাবে পড়ব, শিখব। কিন্তু এটা শুধু মুখস্থ করা নয়, চর্চার মধ্য দিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ আত্মস্থ করব।’

পাঠ্যপুস্তক নিয়ে প্রচারণা দেখলে ‘বই হাতে নিয়ে’ সত্যতা যাচাই করে দেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বই নিয়ে আগে সত্যতা যাচাই করুন। তারপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ করুন, শেয়ার করুন, যা যা ইচ্ছা করুন। কিন্তু সত্যতা যাচাইয়ের আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু শেয়ার করাও কিন্তু অপরাধ। এতে মিথ্যাচার আরও বেশি ছড়ায়।’

নতুন বইয়ে ভুল, আপত্তি কিংবা অস্বস্তি থাকলে সংশোধনের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে বইগুলো দেওয়া হয়েছে। আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষাবিদদের কাছ থেকে মতামত নেব। এরপর ক্রমাগত পরিশোধন, পরিমার্জনের মধ্য দিয়ে কোথাও তথ্যগত ভুল যদি থাকে, কোথাও মনে হয় যে আপত্তিকর কিছু আছে, কোনো ছবি বা অন্যকিছু নিয়ে অস্বস্ত্বি যদি থাকে, আমরা সেই বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনায় নিয়ে সংশোধন করব।’

বিজ্ঞাপন

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এশিয়ার পিছিয়ে পড়া সমাজের শিক্ষার্থীরা এখানে শিক্ষা নিয়ে উপকৃত হচ্ছেন। আমাদের পোশাক শিল্পে যে নারী কর্মীরা আছেন তাদের অনেকে এখান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে আজ সফল উদ্যোক্তা। তৈরি পোশাক শিল্পে তারা অবদান রাখছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় যে উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি আজ অনেকটাই সফল। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীরা সমাজকে বদলে দিতে-নেতৃত্ব দিতে কাজ করছে।’

এইউডব্লিউর চ্যান্সেলর, যুক্তরাজ্যের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী শেরি ব্লেয়ার বলেন, ‘২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে তালেবানরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে সেখানে ১৫০ আফগান ছাত্রী আটকা পড়েন। আমরা এইউডব্লিউর অ্যালামনাইয়ের সহযোগিতায় তাদের সেখান থেকে বের করে আনতে সক্ষম হই। তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন।’

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এইউডব্লিউ’র ছাত্রীদের সনদ প্রদান অনুষ্ঠান উপলক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠান, যা পড়ে শোনান এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী সাদিকা বেগম। হিলারি ক্লিনটনও আফগানিস্তানের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আফগানিস্তানে আটকে পড়া ছাত্রীদের নিজ দেশে কোনো ভবিষ্যৎ ছিল না। অথচ আমরা তাদের এখানে বিভিন্ন নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছি। আফগানিস্তানে সেখানকার মহিলারা তাদের অধিকারের জন্য যুদ্ধ করছে। তারা তাদের অধিকার পাচ্ছে না। আমরা তাদের জন্য সারা বিশ্বের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করছি।’

অনুষ্ঠানে ডেনমার্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পল নাইরুপ রাসমুসেন বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে নারী শিক্ষা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে আফগানিস্তান, ইরাক, মায়ানমারের মতো দেশগুলোতে নারীশিক্ষা বেশ কঠিন। তাদের জন্য এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন সুযোগ তৈরি করেছে।’

বিজ্ঞাপন

সভাপতির বক্তব্যে এইউডব্লিউর উপাচার্য ড. রুবানা হক বলেন, ‘এখানে ৩২৮ জন আফগান ছাত্রী আছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে কাজ করতো আর এখন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে পড়ছে এমন ৩৭ জন স্নাতক সনদ পেয়েছে। আরো ৭০ জন পড়ছে। একসময় গার্মেন্টস কর্মী ছিলেন আর এখন তারা এখান থেকে সনদ নিয়ে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিসহ বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে।’

অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস জন সেক্সটন। বক্তব্য রাখেন এইউডব্লিউর প্রতিষ্ঠাতা কামাল আহমেদ, সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মায়ারা, এইউডব্লিউর আর্টস এন্ড সায়েন্সের ডিন ড. বীনা খোরানা।

এইউডব্লিউর ২০২০, ২০২১ এবং ২০২২ শিক্ষাবর্ষের ১৯টি দেশের ৩০০ শিক্ষার্থীকে এদিন স্নাতক ডিগ্রি দেওয়া হয়। এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি শিক্ষাবিদদের মিলনমেলায় পরিণত হয় নগরীর আরেফিননগরে এইউডব্লিউর স্থায়ী ক্যাম্পাসটি। অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯টি দেশের জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে শোনানো হয়।

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন