May 3, 2018 | 6:00 pm
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
রবিউল ইসলামকে মনে আছে? পাঁচ বছর আগে জিম্বাবুয়ে সফরে বাংলাদেশের বোলিংয়ের জোয়াল একাই বয়েছিলেন কাঁধে। সেই রবিউল এরপর একটু একটু করে হারিয়ে গেছেন দৃশ্যপট থেকে। সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন চার বছর আগে, এই বছর তো বিসিএল, জাতীয় লিগ, বা ডিপিএল কোনোটিতেই সুযোগ পাননি। অথচ বয়স তাঁর মাত্র ৩১ বছর। সবকিছু মিলে ক্রিকেট থেকে অবসরের চিন্তাও করছেন, তাও জানিয়ে দিলেন আজ!
ক্রিকবাজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রবিউল নিজের সব ক্ষোভ উগড়েই দিয়েছেন। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ওই সিরিজের আগেই চোটের সঙ্গে সখ্য শুরু। এরপর রবিউলের চলার পথে কখনো চোট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কখনো ফিট হয়েও পেতে হয়েছে উপেক্ষা। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে টেস্ট খেলার পর আর ফিরতে পারেননি দলে। অথচ রবিউলের কিছু কীর্তি এখনো মুছতে পারেননি কেউ। বাংলাদেশের কোনো পেসারের এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি উইকেট, একমাত্র পেসার হিসেবে সিরিজসেরা- এসব কীর্তি আর কারও নেই। অথচ সেই রবিউল এখন বলছেন, ক্রিকেটকে আর কিছুই দেওয়ার নেই তাঁর। গত বছর জাতীয় লিগে সর্বশেষ কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছেন, এরপর আর কোথাও সুযোগ পাননি খেলার। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সর্বশেষ তিন মৌসুমে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র একটি। বাকি গল্পটা রবিউলের নিজের মুখেই শুনুন।
‘গত বছর ব্রাদার্স আমাকে দলে নিলেও কোনো সুযোগ দেয়নি। বিপিএলের আগে জাতীয় লিগে খেলার সুযোগ পাইনি। এরপর আবার জাতীয় লিগ শুরু হলেও সেখানেও জাতীয় দলের সবাই চলে আসায় আমাকে আর নেওয়া হয়নি। রুবেল, আল আমিন, মোস্তাফিজরা থাকায় সেখানে আমার কোনো সুযোগ ছিল না। ওরা জাতীয় দলের হয়ে খেলছে, তাই সেটাই স্বাভাবিক। এরপর যখন ডিপিএলেও আবার নেওয়া হলো না, আমি বুঝে যাই ক্রিকেটকে বোধ হয় বিদায় বলে দেওয়ার সময় এসেছে আমার। ’
কিন্তু জাতীয় দলে এমন নিয়মিত মুখ হওয়ার পরেও এভাবে হারিয়ে গেলেন কেন? চোট একটা ব্যাপার ছিল, তাঁর সময়ে অন্য যে কোনো সময় পেসারের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। রবিউল সরাসরি হাথুরুসিংহেকে দায়ী করলেন ।
‘আমার মনে হয় হাথুরুসিংহের জন্যই আমার ক্যারিয়ারের এই অকাল পরিণতি। আমি সেজন্য তাকেই সরাসরি দায়ী করছি। ২০১৪ সালের সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময় হঠাৎ করে বলা হলো, আমি নাকি যথেষ্ট ফিট নই। অথচ সেবার আল আমিন ও শফিউল নিয়েছিল তিন উইকেট, আর আমি নিয়েছিলাম দুই উইকেট। মনে হয় না খুব একটা খারাপ করেছি, কারণ দুই টেস্ট মিলে আমি ৩৭-৩৮ ওভার বল করেছিলাম। এরপর দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সিরিজে জায়গা পেলাম না। অথচ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজসেরা হয়েছিলাম তার বছর খানেক আগে। আমি নির্বাচকদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বলেন আমার ফিটনেসে সমস্যা আছে। সবচেয়ে বড় কথা, হাথুরুসিংহেই নাকি আমাকে নিতে চান না। এখানে তাদের কিছু করার নেই। ’
নামের সঙ্গে টেস্ট বোলার তকমাটা এঁটে গিয়েছিল বলেই কি রবিউল সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ব্রাত্য থেকে গেছেন? নিজেও সেরকম মনে করেন, ‘সম্ভবত তা-ই। কারণ আমার লম্বা সংস্করণের ক্রিকেটের প্রতিই ঝোঁক ছিল বেশি। সেটাই সম্ভবত ভুল বার্তা দিয়েছে নির্বাচকদের যে শুধু টেস্টেই আমাকে পারফর্ম করতে হবে। আমার মনে হয় কোনো এক ধরনের ক্রিকেট নিয়ে সত্যি বলাটা ক্রিকেটারদের জন্য একটা ভুল। আমার মতো কেউ যদি বলে টেস্ট ক্রিকেটকেই সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে, তাহলে তার নামের সঙ্গে সেই তকমা জুটে যেতে সময় লাগবে না।’
এখন তাহলে কী করবেন রবিউল? ভবিষ্যত নিয়েও হতাশ হয়ে পড়েছেন, সেটা বলে ফেললেন সরাসরিই, ‘আমি আসলে জানি না কী করব। এই মুহূর্তে আমি একটা আবেগতাড়িত অবস্থায় আছি, খুব বেশিদূর চিন্তা করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ক্রিকেটই ছিল আমার সবকিছু, সেখানেই কিছু করতে পারলে ভালো হয়। সেই ২০০৫ সাল থেকে আমি ডিপিএল খেলছি। ১৩-১৪ বছর তো হয়েই গেছে। কোচিং করানো নিয়েই ভাবছি, এখনো চূড়ান্ত কিছু ঠিক করিনি। তবে এটা ঠিক, ক্রিকেট খেলা ছাড়া আর কিছুই আমি রপ্ত করিনি।’
সারাবাংলা/ এএম/এসএন