বিজ্ঞাপন

মালিক সমিতির ‘চাঁদাবাজির’ জেরে অটোরিকশাচালক খুন

January 28, 2023 | 6:19 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অটোরিকশা চালক একরাম হোসেনকে হত্যার ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটি জানিয়েছে, চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে খুন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে এসব তথ্য দিয়েছেন পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) নাজমুল হাসান। গ্রেফতার চারজন হল— নুর আহাম্মদ (৪০), জাহেদ হোসেন (২০), মোস্তাফিজুর রহমান সাকিব (২০) ও ইসমাইল হোসেন রানা (২৪)।

পিবিআই জানায়, আসামি নুর আহাম্মদ সীতাকুণ্ডের দক্ষিণ বাইপাস সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। মূলত অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি চাঁদা আদায়ের জন্য এই সমিতি খুলেন তিনি। অন্য আসামিরা অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি চাঁদা আদায়ে নুর আহাম্মদের সহযোগী ছিলেন।

এই রুটে অটোরিকশা চালাতে হলে প্রত্যেক চালককে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। ভুক্তভোগী একরামকে আসামি নুর আহাম্মদ চাঁদা দিতে চাপ দেন। কিন্তু একরাম চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নুর আহাম্মদ একরামকে খুন করার পরিকল্পনা করেন।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর সকালে আসামিরা সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড বাজারে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়। বৈঠকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন নুর আহাম্মদ। ঘটনার দিন সন্ধ্যা থেকে আসামিরা অটোরিকশাযোগে একরামের অটোরিকশাকে অনুসরণ করতে থাকে। একপর্যায়ে একরামের অটোরিকশাটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড পৌরসভার মধ্যম মহাদেবপুর এলাকায় ইপসা অফিসের সামনে পৌঁছালে নুর আহাম্মদকে বহনকারী অটোরিকশার মাধ্যমে তাকে গতিরোধ করা হয়।

এরপর আসামিরা একরামকে মারধর ও তার হাতে, কাঁধের ওপরে ও পেটের ডান পাশে ছুরিকাঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় একরামকে ফেলে আসামি নুর আহাম্মদ এবং সাকিব অটোরিকশাযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। আরেক আসামি রানা রাস্তা পার হয়ে বাসযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে লোকজন উপস্থিত হয়ে যাওয়ায় আসামি জাহেদ উদ্ধারের কৌশল করে ভুক্তভোগীর অটোরিকশা চালিয়ে তাকে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তবে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা একরামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনায় নিহতের ভাই নুরুল হুদা বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। থানা পুলিশের পাশাপাশি মামলাটির ছায়াতদন্ত শুরু করে পিবিআই। একপর্যায়ে ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করে। তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পরদিন আদালতে হাজির করা হয়। রিমান্ড শুনানি শেষে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ খানের আদালত আসামি নুর আহাম্মদ ও জাহেদ হোসেনের চার দিন এবং সাকিব ও রানার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে জানায় পিবিআই।

জানতে চাইলে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) নাজমুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সীতাকুণ্ডে অটোরিকশা চালক একরাম হোসেনকে হত্যার ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভুক্তভোগী অটোরিকশা চালক হওয়ায় বেশ কয়েকজন অটোরিকশা চালককে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করি। একপর্যায়ে দুইজন শনাক্ত হয়। তাদের দেওয়া তথ্যে বাকি দুইজনকেও গ্রেফতার করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় একরামকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের আজ (শনিবার) সকালে সীতাকুণ্ডে নিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। আসামিরা পিবিআইয়ের হেফাজতে রিমান্ডে রয়েছেন। রিমান্ডে থাকা চারজনের মধ্যে দুইজনকে রোববার এবং বাকি দুইজনকে সোমবার আদালতে পাঠানো হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আইসি/এনএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন