বিজ্ঞাপন

‘এখন ভাবনা ভর্তি হব কোথায়’

February 8, 2023 | 7:25 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঢাকের তালে, নেচে-গেয়ে আনন্দে মেতে উঠেছে একদল শিক্ষার্থী। এ আনন্দের কারণ চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার। কাঙ্ক্ষিত ফল পেয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস তো আছেই। পাশাপাশি ভাবনা দেখা দিয়েছে উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিয়েও। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা মনে করছেন পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সুযোগ পেলেই আজকের এই ফলে পূর্ণতা মিলবে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কথা হচ্ছিল রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বেইলি রোড শাখার কয়েকজন অভিভাবক, শিক্ষার্থীর সঙ্গে। কথা হয় অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের সঙ্গেও।

তারা জানান, করোনা মহামারির ধকল সামলিয়ে এবারের পরীক্ষায় অংশ নেওয়াই চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক ফল অত্যন্ত আনন্দের। এই ফল ভবিষ্যৎ স্বপ্ন পূরণে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবে।

ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজে এবার পাসের হার ৯৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন দুই হাজার একজন। চলতি বছর পরীক্ষার্থী ছিল ২ হাজার ৩৪৬। পরীক্ষায় অংশ নেয় ২ হাজার ৩৩৯ জন শিক্ষার্থী, পাস করেছে ২ হাজার ৩৩৫ জন।

বিজ্ঞাপন

ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার বলেন, ‘শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আজকের এই ফল। করোনার মধ্যেও শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করার জন্য যা যা করার দরকার আমাদের শিক্ষকরা তা করেছে বলেই আজ আমাদের প্রতিষ্ঠানের ফল এত ভালো। আমরা কাউন্সেলিং ক্লাস, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজের ব্যবস্থা রেখেছি। কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ থাকায় পরীক্ষায় ভালো করতে পারেনি।’

উচ্চশিক্ষার জন্য ভিকারুননিসা কতটা প্রস্তুত করছে তার শিক্ষার্থীদের— এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ কামরুন নাহার বলেন, ‘উচ্চশিক্ষা অনেক বড় একটা জায়গা। লেখাপড়ার পাশাপাশি আমাদের এখানে বিভিন্ন ক্লাব আছে। আমি আশা করি শিক্ষার পাশাপাশি এসব এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসে অংশ নেওয়ায় তাদের উচ্চশিক্ষার পথে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবে।’

বিজ্ঞাপন

মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে মেঘা আর গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে অবনী। ফল পেয়ে বেইলি রোডের ক্যাম্পাসে ছুটে এসেছে তারা। বন্ধুদের সঙ্গে মেতে উঠেছে আনন্দ উৎসবে। তাদের এখন একমাত্র টার্গেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া।

মেঘার পছন্দ ইংরেজি বা মনোবিজ্ঞান, আর অবনীর ইচ্ছা অর্থনীতি বা মনোবিজ্ঞানের ভর্তি হওয়া। দুই বন্ধুর স্বপ্ন আজ যেভাবে আনন্দে মেতে উঠেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলের দিনেও একইভাবে আনন্দে মেতে উঠতে পারবে বলে আশা তাদের। তবে ফল দিয়ে ভালো ছাত্র-ছাত্রী নির্ধারণে বিশ্বাস করেন না তারা। অনেকেই নানা কারণে এ প্লাস নাও পেতে পারে, কিন্তু তারা যে কারও চেয়ে কম মেধাবী তেমনটা মনে করে তারা।

মেঘা বলেন, ‘সবাই বলে এসএসসি/এইচএসসির ফলাফল ভবিষ্যতে তেমন একটা সাহায্য করে না। কিন্তু আজ যে জিপিএ-৫ পেলাম এটি আমার মনোবল অত্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। আমার মনে হচ্ছে, এটি যখন করতে পারলাম, তাহলে অন্য কাজও ঠিকমত করতে পারব। এখন ভাবনা ভর্তি হব কোথায়।’

বিজ্ঞাপন

বাণিজ্য বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে পূর্ণতা জামান। মেয়ের এই ফলে অত্যন্ত আনন্দিত মা শাহিদা জামান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মেয়ে কোনো প্রাইভেট টিউটরের কাছে বা কোচিংয়ে পড়েনি। অভিভাবক হিসেবে তাকে কোনো আলাদা দায়িত্বও নিতে হয়নি। মেয়ে নিজ আগ্রহে, নিজ দায়িত্বেই পড়াশোনা করেছে। প্রতিষ্ঠানের পড়াশোনার মানও অনেক ভালো ছিল।’

বিবিএ/এমবিএ করে ব্যাংকে চাকরি করতে চায় পূর্ণতা। ব্যাংকার হতে না পারলে হতে চায় ফ্যাশন ডিজাইনার। এজন্য তার প্রথম পছন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেলে তাকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন বলে ঠিক করছেন মা শাহিদা জামান। তীব্র প্রতিযোগিতার এই সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া কতটা কঠিন তা উপলব্ধি করেই তাদের এই সিদ্ধান্ত। আর পূর্ণতা মনে করেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেই সে ভালো ছাত্র, আর প্রাইভেটে পড়লেই সেই খারাপ ছাত্র ব্যাপারটা এমন নয়। নিজে গোল্ডেন এ+ পেলেও পরীক্ষার ফলকেই একমাত্র সাফল্য মনে করছেন না তিনি। এই ফল মনোবল বাড়াতে ভূমিকা রাখছে যা এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে বলে মনে করেন পূর্ণতা।

ছোটবেলা থেকেই সব পরীক্ষায় প্রথম হতো আফরিন আবদুল্লাহ। বড় হয়ে রাষ্ট্রদূত হতে চায় সে। এ জন্য তার ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে পড়ার। আর যদি কাঙ্ক্ষিত বিষয় না পায় তাহলে আইন বা ফিন্যান্সে পড়তে চায় সে। তবে যেখানেই পড়ুক না কেন, ভবিষ্যতে বিসিএস দিয়ে রাষ্ট্রদূতই হবে সে, এমনটিই ইচ্ছা তার।

রাষ্ট্রদূত কেন হতে চায় বা আজকের ফল তার স্বপ্ন পূরণে কীভাবে সাহায্য করবে— এমন প্রশ্নের জানবে আফরিন জানান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, ভ্যন্তরীণ রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে তার আগ্রহ বেশি। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রক্ষায় ভুমিকা রাখে। তাই ভবিষ্যতে সে একজন রাষ্ট্রদূত হতে চায়।

এ জন্য একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া, টেলিভিশন টকশো দেখার মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করছে সে। আর এইচএসসির ফল তাকে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সাহায্য করবে বলে মনে করছে পঞ্চম শ্রেণি থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ফল অর্জন করা আফরিন।

বাবা আবদুল্লাহ মামুন পেশায় ব্যবসায়ী। মেয়ে তার কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়ায় অত্যন্ত খুশি তিনি। মেয়ের এই ফল তার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করবে বলেই আশা তার।

বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে তানজিলা ফারজানা ফাইজা। ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হতে চাওয়া ফাইজার প্রথম পছন্দ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। ভর্তি পরীক্ষায় পূর্ববর্তী পরীক্ষার নম্বর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই ফল তাকে অনেকটাই সাহায্য করবে বলে মনে করছে এই ছাত্রী।

ফাইজার মা মীর আয়েশা সিদ্দিকা বললেন, ‘করোনা মহামারির জন্য মাত্র এক বছরের মধ্যে দুই বছরের পড়াশোনা শেষ করতে হয়েছে। এটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের ছিল। এত কষ্টের পরে মেয়ের এই ফলে অত্যন্ত আনন্দিত।’

সারাবাংলা/আরএফ/এনএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন