বিজ্ঞাপন

‘বই নয়, যেন শিল্প’

February 23, 2023 | 6:20 pm

আসাদ জামান

‘ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন্স’। প্রকাশনা জগতে নতুন একটি নাম। আবার একেবারে নতুনও না! নতুন হচ্ছে এদের চিন্তা, প্রকাশ ভঙ্গি, মার্জিত রুচি এবং উপস্থাপনা। এ কারণেই হয়তো যাত্রা শুরুর মাত্র সাত বছরের মাথায় এসে লেখক, পাঠক এবং সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যরকম একটা আগ্রহ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে প্রকাশনা সংস্থাটি।

বিজ্ঞাপন

এই যেমন ধরুন, ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন্সের ট্যাগলাইন স্লোগান হচ্ছে- ‘বই নয়, যেন শিল্প’। সত্যি, অপেক্ষাকৃত নতুন এ প্রকাশনা সংস্থার কাছে বই প্রকাশ এবং তা পাঠকের হাতে তা তুলে দেওয়ার কাজটা যেন একটা শিল্প। আর্ট বা শিল্পের প্রতি প্রগাঢ় ফ্যাসিনেশন থেকেই তারা বই প্রকাশ করে এবং তা বাজারমূল্যে পাঠকের হাতে তুলে দেয়।

এই তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রেও সৃজনশীল ভাবনার পরিচয় দিয়ে থাকে ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন্স। এবারের বইমেলায় অসাধারণ রূপবিন্যসে স্টল সাজানোর মধ্য দিয়ে সেটিই প্রমাণ করেছে তারা। তাদের দুই ইউনিটের স্টল এবারের বইমেলায় অন্যতম নান্দনিক স্থাপনা হিসেবে গ্রহণ করেছে পাঠক এবং সাধারণ দর্শনার্থী।

বিজ্ঞাপন

প্রতিদিন বইমেলার দরজা খোলার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে প্রবেশ করা লোকজন বড় বড় প্যাভিলিয়নে ভিড় করার পাশাপাশি ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন্স স্টলে গিয়েও ভিড় জমায়। স্টিলের কাঠামোর ওপর অ্যাশ কালারের টিন দিয়ে তৈরি স্টলটি উঁচু মার্গীয় রুচির পরিচয় বহন করে চলছে।

শুধু মার্জিত রুচির কাঠামো নয়, পরিবেশ ভাবনাও কাজ করেছে স্টল নির্মাণে। অহেতুক কাগজ, বোর্ড, রং, প্লাইউড, আইরন, তারকাটা, ককশিট, প্লাস্টিক, স্কসটেপসহ পরিবেশনের জন্য ক্ষতিকর উপকরণ ব্যবহার না করেই কেবলমাত্র স্টিল, টিন, কাঠ, ইট, বালু, সিমেন্ট ব্যবহারে মাধ্যমে অনিন্দ্য সুন্দর স্টল নির্মাণ করেছে ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন্স।

বইয়ের উপস্থাপন প্রশ্নেও আলাদা রুচির খোরাক জুগিয়েছে প্রকাশনা সংস্থাটি। বড় বড় প্রকাশনী যেখানে প্লাইউড বোর্ড শিটের ওপর বই মেলে রেখে বিক্রির ব্যবস্থা করেছে, ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন্স সেখানে ঘরোয়া লাইব্রেরি বা রিডিং রুমের স্বাদ এনে দিয়েছে বইমেলায়। তাদের বইগুলো রাখা হয়েছে ঝুলন্ত বুক সেলফে আড়া আড়ি করে। দুই ইউনিটের স্টলের পুরোটা জুড়ে বেশ কয়েকটি ঝুলন্ত বুকসেলফ। সেগুলোতে ব্যতিক্রম রূপবিন্যসে সাজিয়ে রাখা হয়েছে শত শত বই।

বিজ্ঞাপন

ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন্স’র আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এদের সব বই পেপার ব্যাক বাঁধাই। প্রচলিত ধারার গল্প-উপন্যাস-কবিতার বইগুলোকে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্ব দিয়ে শিল্পের অপ্রচলিত ধারার নানা অনুষঙ্গকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে প্রকাশনা সংস্থাটি। জীবনকে আনন্দের সঙ্গে যাপনের বিষয়গুলো তাদের প্রকাশনায় বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।

যেমন— প্রখ্যাত আবৃত্তিকার অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি’, ‘আপনি’, ‘তুমি’, ‘তুই’ শিরোনামে চারটি বই বের করেছে ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন্স। আবিদ এ আজাদের ‘সমুদ্রের বই’, মুন রহমানের ‘নদী ও সমুদ্রের কবিতা’ যেমন আছে, তেমিন মুন রহমানের ‘তিতা কথা’, সৈয়দা শারমিন আক্তারের ‘পুষ্টি নামা’, ‘স্বাস্থ্যকর রেসিপি’সহ নিউট্রিশনের অসংখ্য বই প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থাটি।

শিল্পে বুঁদ হয়ে থাকা ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন্সে বেশিরভাগ সময় গানের গুন-গুনানি শোনা যায়। কোনো রেকর্ড নয়, কেউ একজন সারাক্ষণ গুন-গুনিয়ে গান গেয়ে যান। ভিড় জমে থাকার পেছনে এটাও একটা কারণ। কে এই শিল্পী? জানার চেষ্টা থেকে উঁকি মেরে দেখা গেল কবি সাকিরা পারভীন আপন খেয়ালে গেয়ে যাচ্ছেন, ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না/ কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না/ ক্ষণিক আলোকে আঁখির পলকে তোমায় যবে পাই দেখিতে/ হারাই-হারাই সদা হয় ভয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে/ কী করিলে বলো পাইব তোমারে, রাখিব আঁখিতে আঁখিতে/ এত প্রেম আমি কোথা পাব নাথ, তোমারে হৃদয়ে রাখিতে/ আর কারো পানে চাহিব না আর, করিব হে আমি প্রাণপণ/ তুমি যদি বল এখনি করিব বিষয়বাসনা বিসর্জন।’

বিজ্ঞাপন

আলাপকালে সাকিরা পারভীন সারাবাংলাকে জানান, এবার বইমেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা দীর্ঘ কবিতা ‘তুমি সেই অভিজ্ঞান’ বের করেছে ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন্স। বইটির টানে আর বইমেলার প্রেমে প্রতিদিন মেলায় আসেন তিনি। মেলাই এলেই ঢুকে পড়েন ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন্সের স্টলে।

আর গান?— ‘সেটি তো আমার অস্তিত্বে সঙ্গে মিশে আছে। আমি সব সময় গান গাই। এখানে এলে স্বরটা একটু উঁচু হয় আরকি’— বলেন কবি সাকিরা পারভীন।

এই সৃজনশীল চিন্তা এবং স্টলের অঙ্গ সজ্জা নিয়ে কথা হয় ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী আবিদ এ আজাদের সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বই নয়, যেন শিল্প’— আমাদের এই ট্যাগলাইনই আমার বক্তব্য। আমি বইটাকে কখনও পণ্য হিসেবে দেখি না। শিল্প হিসেবে দেখি। আর জীবনযাপনের সঙ্গে শিল্পের সম্পর্ক না থাকলে, সে জীবন পানসে হয়ে যায়।’

‘স্টল সাজানোর সময় এর স্থায়িত্ব ও নান্দনিক অবয়ব— দুই দিকেই নজর দিয়েছি। ভালো লাগছে এই ভেবে যে, প্রচুর লোক স্টলে আসছে, ছবি তুলছে। কেউ কেউ বইও কিনছে’— বলেন আবিদ এ আজাদ।

স্টলের সামনে ছবি তুলতে ব্যস্ত সুজাতা তন্নী সারাবাংলাকে বলেন, ‘অসম্ভব সুন্দর আইডিয়া থেকে এমন স্টল নির্মাণ হয়েছে। যারা এর নেপথ্যে কাজ করেছেন, তাদের রুচিবোধ ও শিল্প চেতনা দশে দশ পাওয়ার মতো।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন