বিজ্ঞাপন

ছাত্রী নির্যাতন—অভিযোগ দিলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না ইডেন কলেজ

February 24, 2023 | 10:27 pm

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের এক নেত্রীর বিরুদ্ধে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে এক শিক্ষার্থীর আঙুল ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠে গত মঙ্গলবার। ঘটনায় অভিযুক্ত কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নুজহাত ফারিয়া রোকসানার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনও ব্যবস্থা নেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, লিখিত অভিযোগ প্রদানকালে ভুক্তভোগী সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের রুমে গেলে শিক্ষার্থীদের ধমক দিয়ে কথা বলেন তিনি। আমলে নেওয়ার পরিবর্তে অভিযোগপত্রের বিভিন্ন ভুল ধরতে ব্যস্ত ছিলেন সংশ্লিষ্ট ওই শিক্ষক। এই সংক্রান্ত ২১ মিনিটের একটি অডিও সারাবাংলার হাতে এসেছে।

এর আগে, গত মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কলেজের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের একটি কক্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে আঙুল ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নুজহাত ফারিয়া রোকসানার বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানোর এক পর্যায়ে টেনে তারা চুলও ছিঁড়ে ফেলেন রোকসানা।

বিজ্ঞাপন

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ‘রোকসানা টাকার বিনিময়ে হলে ছাত্রী তোলেন। জোর করে নিজের কাপড় ছাত্রীদের ধোয়ান। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেন। প্রতিবাদ করায় গত মঙ্গলবার স্ট্যাম্প দিয়ে পিটেয়ে আমার হাতের আঙুল ভেঙে দিয়েছেন তিনি৷ আমি হল থেকে বেরিয়ে গেছি। নিরাপত্তা নেই, তাই ফিরতেও পারছি না।’

এদিকে, রোকসানার বিরুদ্ধে অভিযোগের কমতি নেই। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সিট-বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের বিষয়ে গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ায় গত বছর এক ছাত্রলীগ নেত্রীকে মারধর করেন রোকসানা। এ ছাড়া, গত বছর ১০ এপ্রিল বঙ্গমাতা হলের একটি কক্ষের সিট দখল করাকে কেন্দ্র করে রোকসানা ও তার অনুসারীরা সেখানকার বৈধ ছাত্রীদের ওপর হামলা করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

বঙ্গমাতা হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘নুজহাত ফারিয়া রোকসানা অপকর্ম করেও বারবার উতরে যান। কোনো শাস্তি হয় না তার। রোকসানার উচ্ছৃঙ্খল আচরণে তটস্থ থাকেন হলের শিক্ষার্থীরা। নানান ধরনের অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও কখনোই বিচারের কাঠগড়ায় তোলা যায়নি তাকে।’

বিজ্ঞাপন

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে নুজহাত ফারিয়া রোকসানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগ কেউ দেয়নি। এটি ভুলভাবে ছড়ানো হচ্ছে। সে আমার ছোটবোন।’

তিনি বলেন, ‘আপনি প্রয়োজনে কলেজে আসুন। আমরা আছি। সবার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’

এদিকে, স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানোর ঘটনায় ভুক্তভোগী কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ লিখিত অভিযোগ দিতে হল সুপার নাজমুন নাহারের রুমে যান। এ সময় নাজমুন নাহার শিক্ষার্থীদের ধমকানোর পাশাপাশি অভিযোগ পত্রের বানান ভুল নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। ওই সময়ে করা ২১ মিনিটের একটি রেকর্ডিং সারাবাংলার হাতে এসেছে।

প্রাপ্ত রেকর্ডিং-এ শোনা যায়—অভিযোগপত্রের প্রত্যেকটি লাইন পড়ে শোনাচ্ছিলেন হল সুপার নাজমুন নাহার। এ সময় তাকে বলতে শোনা যায়— “এ অভিযোগপত্র কে লিখেছে? খাতার মার্জিন দাওনি কেন? এত ভুল কেন?”

বিজ্ঞাপন

একপর্যায়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বলতে শোনা যায়— ‘ম্যাম, আমাকে ষ্টাম্প দিয়ে মারছে; বঁটি দিয়ে মারতে আসছে।’

পরে এক ছাত্রলীগ নেত্রীর কণ্ঠে শোনা যায়—‘যার সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে, শুধু সে থাকবে। বাকি সবাই বের হয়ে যাও।’ এ সময় তিনি ছাত্রীদের ধমক দিতে থাকেন।

অভিযোগপত্র দিতে যাওয়া এক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘নাজমুন ম্যামের সামনে ওই নেত্রীর ধমক খেয়ে আমরা বেরিয়ে আসি।’

এ বিষয়ে জানতে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সুপার নাজমুন নাহার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বানান ভুল করলে শাসন করার অধিকার আমার আছে। সব শিক্ষার্থীই আমার জন্য এক। আমার কাছে সবাই শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগ বা আলাদা কিছু নেই। আমি তো ছাত্রলীগের মেয়েদেরও ধমক দিয়েছি। সেই রেকর্ড তো করে নাই তারা।’

ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা অনেকটাই সমাধান হয়ে গেছে। রোববার কার্যদিবসে আমরা বিষয়টি নিয়ে আবারও বসব।’

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রীর ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক রাজনীতির শৃঙ্খলা পরিপন্থী। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, সেটি অবশ্যই অপরাধ। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন