বিজ্ঞাপন

‘করোনাপঞ্জি আজ নয়, ১০০ বছর পরও প্রাসঙ্গিক’

February 26, 2023 | 1:30 pm

নাইস নূর

ফারাহ জাবিন শাম্মী। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিক পেশার সঙ্গে যুক্ত। এর বাইরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের লেখা ছোট কবিতা ও অন্যান্য সমসাময়িক বিষয়ে লিখে আলোচিত তিনি। এই প্রথম প্রকাশ হতে যাচ্ছে তাঁর লেখা বই ‘করোনাপঞ্জি’। বইটি নিয়ে সারাবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন নাইস নূর।

বিজ্ঞাপন

প্রশ্ন: কেমন আছেন?

ফারাহ জাবিন শাম্মী: ভালো আছি।

প্রশ্ন: প্রথমেই জানতে চাই, আপনি অনেক বিষয় নিয়ে লিখলেও প্যানডেমিকে বদলে যাওয়ার সময় নিয়ে বই লেখার ইচ্ছে কেন হলো?

বিজ্ঞাপন

ফারাহ জাবিন শাম্মী: এমন একটা সময় বৈশ্বিক মহামারি ‘কোভিড ১৯’ আমাদের জীবনকে পাল্টে দিয়েছিল যা ছিল আমাদের কল্পনারও বাইরে। প্রথমে উহানে যখন এই ভাইরাসের কথা শুনেছিলাম তখন মনে হয়েছিল হয়তো বা চীনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। মৃত্যুর কাছে অসহায় বিশ্ববাসী নিজেকে বাঁচাতে ঘরবন্দী হতে বাধ্য হয়। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তখন কেবল মানুষের অসহায়ত্ব চেয়ে চেয়ে দেখেছি। সারাবিশ্বের মতো আমরাও ঘরবন্দী হয়েছি। ১৮ মার্চ ২০২০ দেশে প্রথম মৃত্যুর সংবাদটি যখন আমাদের দেশে প্রকাশিত হয় সেদিন থেকেই আমি এবং আমার মেয়ে পুরোপুরি ঘরবন্দী হয়ে যাই। মেয়ের বাবা অনেক সাবধানতা মেইনটেইন করে অফিস করতে থাকে। জানিনা সামনে কি আছে হয় মৃত্যু অথবা অনেক কিছু হারানোর পর বেঁচে থাকা। এ যেন কোন বিশ্বযুদ্ধ। এমন অবস্থায় আমি শুরু করলাম আমার ডায়েরি লেখা। সত্যি বলতে কোনকিছু ভেবে ডায়েরি লেখা শুরু করিনি। কেবল মনে হয়েছিল এ বৈশ্বিক মহামারিতে যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন দেশ বিদেশের নানা ঘটনাগুলো লিখে যাব। সেই থেকে শুরু। এরপর লিখে গেছি শুরু থেকে বলতে গেলে টানা দুবছর। এর মধ্যে একদিনও এমন হয়নি যে, আমার ডায়েরি লেখা বন্ধ ছিল। অনেক কষ্ট হয়েছে। দিনরাত তথ্য কালেক্ট করেছি। কখনো রাত দুইটা বা তিনটা বেজে গেছে ডায়েরি লেখা শেষ করতে করতে। প্রথম বেশ কিছুদিন আমি ডায়েরিটি ফেসবুকে পোস্টও করেছি। একটা সময় মনে হলো এতে করে আমি আমার মনের মতো ডায়েরির যে একটা ব্যক্তিগত ভাব থাকে সেটা প্রকাশ করতে পারছি না। অন্যদিকে প্রতিদিনের অগোছালো লেখা পাঠককে পড়াতেও ইচ্ছা করছিল না। কারণ প্রতিদিন তথ্য কালেক্ট করতে গিয়ে লেখার মানের দিকে নজর দিতে পারছিলাম না। তখন সেটা আমি পোস্ট করা বন্ধ করে দিই। তবে ডায়েরিটি লিখে গেছি একেবারেই ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা থেকে। এই ডায়েরিটি বই হিসেবে কখনো প্রকাশ করব সে ভাবনাও মনে ছিলনা। তবে যখন আমি পোস্ট করতাম তখনই অনেকেই বলেছেন এটাকে ভবিষ্যতে বই আকারে প্রকাশ করার জন্য। একটা সময় গিয়ে দেখলাম আমার দিনরাতের পরিশ্রম করোনা সময়ের একটা দলিল হতে পারে। যদি সব তথ্য বইয়ের পাতায় এক করা যায় তবে এটা হয়তো আমার সন্তান বা যে কেউ কোন একসময় খুলে দেখবে, জানতে পারবে এই সময়ে যা ঘটেছিল তার কিছুটা সারসংক্ষেপ। টানা দুই বছর ডায়েরি লেখা চালিয়ে গেলেও প্রথম এক বছরের ডায়েরিটিই প্রকাশিত করতে যাচ্ছি। কারণ এ সময়টাই ছিল অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের।

ফারাহ জাবিন শাম্মী

ফারাহ জাবিন শাম্মী

প্রশ্ন: করোনাকালীন ছাড়া আর কী কী বিষয় বইটিতে রয়েছে?

ফারাহ জাবিন শাম্মী: দেশ বিদেশের করোনার নানান তথ্যের পাশাপাশি ঘরবন্দী সময়ের ব্যক্তিগত জীবন, পারিপার্শ্বিক নানান মর্মস্পর্শী ঘটনা, সামাজিক মূ্ল্যবোধের অবক্ষয়, মানবিকতা, হাসির নানা ঘটনা ছাড়াও একঘেয়েমী কাটাতে কয়েকলাইনের ছোট ছোট কিছু গল্প, কবিতা লেখার চেষ্টা করেছি। সত্যি বলতে ডায়েরি বিষয়টাইতো একেবারে ব্যক্তিগত। অন্য কারো কথা ভেবে কিন্তু আমি লিখিনি। একেবারেই নিজের মনে যা এসেছে, যা ভাল লেগেছে তাই লিপিবদ্ধ করে গেছি। দেখা গেছে একদিন হয়তো জানালা দিয়ে বৃষ্টি পড়ার দৃশ্য দেখতে দেখতে আনমনা হয়ে কিছু লাইন লিখে ফেলেছি আবার কখনো কারো মৃত্যুসংবাদে বিষন্ন মনে কিছু কথা তুলে ধরেছি। স্মৃতির পাতা হাতরাতে হাতরাতে কখনো চলে গিয়েছি শৈশবের উচ্ছ্বল আনন্দের দিনগুলোতে আবার কখনো ঘরবন্দী জীবনের একঘেয়েমীর চিত্র উঠে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

প্রশ্ন: আপনার কবিতা কিংবা ছোটগল্পের হাতেখড়ি কবে থেকে?

ফারাহ জাবিন শাম্মী: ফেসবুকে ছোট কয়েকলাইনের কিছু কবিতা মাঝে মাঝে পোস্ট করি। এটাও একেবারেই নিজের ভাল লাগা থেকে। তবে লেখালেখির ঝোকটা ছিল যখন ক্লাস থ্রী বা ফোরে পড়ি তখন থেকেই। মনে পড়ে একটা ডায়েরিতে প্রথম আমি একটা ছোটগল্প লিখি, নাম ছিল ‘টুনটুনি’। এরপর টুকিটাকি আরো কিছু লিখেছি। কিছুদিন আগ পর্যন্তও সেটা ছিল আমার কাছে। বাসা বদলের সময় হারিয়ে গিয়েছে। তবে ছোটবেলার পর আর লেখালেখির দিকে মনোযোগ ছিলনা। তবে অনেক বেশি বই পড়েছি সেই ছোটবেলাতেই। বড়দের অনেক বই আমি ছোটবেলায় পড়ে ফেলেছি। লেখালেখির প্রতি আগ্রহ ছিল কিন্তু সেটা কাগজে কলমে বাস্তবায়িত করা হয় নি কখনো। ফেসবুকের এই সময়ে এসে টুকিটাকি যা একটু লেখা। তবে এটাকে ঠিক কবিতা/ গল্প বা সাহিত্যের কাতারে ফেলতে চাইনা। এমনও হয় ছোট্ট একটা কবিতা লিখে ঘন্টার পর ঘন্টা ভাবতে থাকি এটা পোস্ট করব কি করব না। তারপর মাঝে মাঝে দুই একটা পোস্ট করি। তবে আমাদের দেশের পাঠক বলি আর সাধারণ মানুষ যাই বলি, মেয়েদের সাহিত্য লেখালেখিটাকে এখনো মেনে নিতে পারেনা। কোন মেয়ে দুই একটা কবিতা বা গল্প লিখলেই মনে করতে থাকে এ বুঝি নিজের জীবনের কোন ঘটনা। ফেসবুক পোস্টে নানানজনের মন্তব্যেই তা প্রকাশ পায়। আবার একইভাবে যখন কোন ছেলে লিখে তখন কমেন্টগুলো পাল্টে যায়। যার ফলে মেয়েরা প্রাণখুলে লিখতে চাইলেও নানান প্রতিবন্ধকতায় আটকে যায় অনেকক্ষেত্রেই। বিষয় সিলেকশান করতেও মেয়েদের অনেক ভাবতে হয়। পাঠকদের এই মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন।

প্রশ্ন: ছোটবেলায় ডায়েরি লেখার অভ্যাস কী ছিল?

বিজ্ঞাপন

ফারাহ জাবিন শা্ম্মী: ছোটবেলায় ডায়েরি লেখার খুব ইচ্ছে করতো কিন্তু কে দেখে ফেলবে সে ভয় থেকে বা লজ্জায় লিখা হতোনা। তবে ডায়েরিতেই ছোট ছোট কিছু গল্প/ কবিতা লিখেছিলাম যেগুলো আবার অনেক সাবধানে লুকিয়ে রাখতাম। টুনটুনি গল্পটার কথাই মনে আছে শুধু। এটা ছিল একটা ঝড়ে হারিয়ে যাওয়া একটি ছোট মেয়েকে নিয়ে। সবশেষে আমি বলতে চাই, করোনাপঞ্জি বইটি লিখে আমি অনেক বড় কাজ করে ফেলেছি সে ভাবনা একেবারেই আমার মধ্যে নেই। একজন খুব সাধারণ মানুষের অতিমারি সময়ের দৈনন্দিন জীবনের একটি ডায়েরি এ করোনাপঞ্জি। হয়তো আজ নয়, হয়তোবা ৫০ বছর বা ১০০ বছর পরে কারো না কারো দরকার হলেও হতে পারে। না হলেও কোন আক্ষেপ নেই বা আফসোস নেই। পাঠক যদি কেনেন খুব সাধারণ একজন মানুষের ডায়েরি হিসেবে বিবেচনায় নিয়েই গ্রহণ করবেন বলে আশা করি। বইমেলার যদিও শেষ পর্যায়ে এরই মধ্যে যে কোনদিন চলে আসবে বইমেলায়। পরবর্তীতে পাঠকের হাতে পৌঁছানোর সবরকমের মাধ্যমেই ব্যবস্থা থাকবে। করোনাপঞ্জি বইটির প্রচ্ছদ করেছেন বরেণ্য অঙ্কন শিল্পী মাসুক হেলাল। বইটি বের করছে স্বপ্ন ৭১ প্রকাশন। বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন, আজকের পত্রিকার সম্পাদক, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অবসরপাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান। এছাড়াও বইটিতে মূল্যবান মতামত দিয়েছেন দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক ও পাক্ষিক অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মফিজুর রহমান এবং বিজ্ঞানী, লেখক, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা অ্যাট বার্মিংহামের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাগিব হাসান।

প্রশ্ন: বইটি কবে প্রকাশ হতে পারে?

ফারাহ জাবিন শা্ম্মী: স্বপ্ন ৭১ প্রকাশন থেকে বইটি এবার অমর একুশে বইমেলায় ২৭ তারিখে প্রকাশ হ্ওয়ার কথা রয়েছে। বইটির প্রচ্ছদ করেছে মাসুক হেলাল।

প্রশ্ন: সবশেষে, লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিরল্পনা জানতে চাই।

ফারাহ জাবিন শাম্মী: শুধু পরীক্ষায় ভাল রেজাল্টের জন্য যেমন পড়া তেমনি শুধু বই বের করার জন্য বই লিখতে চাইনা। লিখতে ভাল লাগে এবং ভালবেসে আন্তরিকতার সাথে লিখতে পারব এমন বিষয় পেলে লিখতে চেষ্টা করব। পরে যদি মনে হেয এটা বই বের করার যোগ্য তবেই বের করার চেষ্টা করব ।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন