বিজ্ঞাপন

১৯ বছর পার, শেষ হয়নি হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার বিচার

February 27, 2023 | 9:17 am

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার ১৯ বছর পার হলেও এখনও শেষ হয়নি বিচার। এতদিনেও বিচার না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আসামিপক্ষ ও ভিকটিমের পরিবার।

বিজ্ঞাপন

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এইদিনে একুশে গ্রন্থমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে হামলার শিকার হয়ে মারাত্মক আহত হন ড. হুমায়ুন আজাদ। হামলার সময় তাকে চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। ওই হামলার পর হুমায়ুন আজাদ ২২ দিন সিএমএইচে এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে জার্মানির মিউনিখে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই বছরের ১২ আগস্ট তিনি মারা যান।

ঘটনায় পরদিন তার ছোট ভাই মঞ্জুর কবির বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। পরে তা হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়। এছাড়া একই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনেও অপর একটি মামলা হয়।

২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুন হত্যা মামলায় ৪ জঙ্গিকে ফাঁসির রায় দেন। এরপর আসামিদের আপিলে এই রায় কার্যকরের বিষয়টি উচ্চ আদালতে ঝুলে গেছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া একই ঘটনার বিস্ফোরক আইনের মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। আসামিরা একই হওয়ার ফলে এই মামলার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ৪ জঙ্গির অন্য মামলায় রায় কার্যকরের বিষয়টিও আদালতের বিচারাধীন।

অন্যদিকে, মামলাটি সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে ঢাকার ১৩নং অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ কুদরত-এ-ইলাহীর আদালতে বদলির আদেশ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আদালতে নথিপথ পাঠানো হয়েছে। তবে ওই আদালতে এখনও মামলার ধার্য তারিখ পড়েনি।

হুমায়ুন আজাদের ছোট ভাই মো. মঞ্জুর কবির বলেন, ‘ভাইকে হারানোর ১৯ বছর হয়ে গেলো। এটা নিয়ে প্রত্যাশার কিছু নেই। ঘটনাটি আস্তে আস্তে হালকা হয়ে গেছে। আর এই ঘটনার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলওয়ার হোসেন সাঈদী জড়িত। আমার ভাই বারবার বলে গেছেন। কিন্তু তাকে তো মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়নি। বিচার নিয়ে আমাদের চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। হুমায়ন আজাদ মারা যাওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি বলেছিলেন, তার সমাধিতে একটা কিছু করে দিবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষের নাম তার নামে হবে। কিন্তু সবাই সে কথা ভুলে গেছে। তিনি তো আর ফিরে আসবেন না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘হুমায়ুন আজাদ ৭২টি বই লিখেছেন তিনি। বইয়ের মাঝেই বেঁচে থাকবেন। বই পড়ে মনে রাখবে, আকৃষ্ট হবে। আমাদের প্রত্যাশা তার সমাধিস্থলে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে কিছু একটা করা হোক। যাতে তার একটা স্মৃতি থাকে। আক্রান্ত স্থান বিশেষ কিছু করা হোক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষ তার নামে করা হোক। এর চেয়ে বেশি কিছু আমাদের বলার নেই।

ঢাকার চতুর্থ অথিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের আদালত থেকে মামলাটি বদলি হয়ে গেছে। আমাদের আদালতে হত্যা মামলার রায় হয়েছে। বিস্ফোরক মামলাটিও আমরা শেষ করার চেষ্টা করেছি। মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।’

অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানান, মামলা দীর্ঘদিনও হলেও বিচার শেষ হয়নি। হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণের সময় এমন কোনো সাক্ষী আদালতে বলেননি যে, আসামিরা জড়িত? এরপরও হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত। বিস্ফোরক মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি এই মামলায় আসামিরা খালাস পাবেন।

জানা যায়, ২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর এই মামলার বাদী মো. মঞ্জুর কবির মামলার বর্ধিত তদন্তের আবেদন করলে ওই বছরের ২০ অক্টোবর আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। বিভিন্ন সময় মামলাটি তদন্ত করেছেন- রমনা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান, সিআইডির পুলিশ ইন্সপেক্টর কাজী আব্দুল মালেক, মোস্তাফিজুর রহমান ও লুৎফর রহমান।

বিজ্ঞাপন

২০১০ সালের ১৮ অক্টোবর আসামি আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ মামলায় দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ৫ দফায় বিভিন্ন মেয়াদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তবে শেষ পর্যন্ত এ মামলার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল মামলার তদন্ত শেষে সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমান পাঁচ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। একই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ওই পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

এর আগে, ২০০৭ সালের ১১ নভেম্বর মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পাঁচ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি চার্জশিট দাখিল করেন। ওই চার্জশিটে আবুল আব্বাস ভূইয়া ও গোলাম মোস্তফা নামের দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যহতি দেওয়া হয়।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলো- জেএমবির সুরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শাউন, আনোয়ার আলম, হাফিজ মাহমুদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু। আসামিদের মধ্যে সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও হাফিজ মাহমুদ মারা গেছেন এবং নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু পলাতক রয়েছেন।

সারাবাংলা/এআই/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন