বিজ্ঞাপন

ইবির অভিযুক্ত ৫ জনকে বহিষ্কার ও প্রভোস্টকে প্রত্যাহারের নির্দেশ

March 1, 2023 | 12:48 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্ত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্টকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১ মার্চ) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতির রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আদেশ দেন।

অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন- পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, চারুকলা বিভাগ ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মি, আইন বিভাগের ২০২০-২০২১ সেশনের ইসরাত জাহান মীম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান।

আদালতে বলেছেন, সাময়িক বহিষ্কৃত পাঁচজন কোনো একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকতে পারবে না।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে তিনদিনের মধ্যে তার পছন্দমতো হলে থাকতে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। আর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।

আদালত আজ শুনানি শেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত দুটি তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সিলগালা করে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িত শিক্ষার্থী, অবহেলা করা হল প্রশাসনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া ঘটনার সময় নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনের ভিডিও করা চারুকলা বিভাগ ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মির মোবাইল ফোন সংগ্রহ এবং ধারণ করা ভিডিও উদ্ধার করে আদালতে দাখিল করতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সেইসঙ্গে কুষ্টিয়ার এসপি ও পাবনার এসপিসহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ফুলপরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ঘটনার সাক্ষীদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

পাশাপাশি কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৮ মে দিন ধার্য করেছেন আদালত। এ আদেশের বিষয়ে ৮ মের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনার প্রেক্ষাপটে করা রিট আবেদনের ওপর শুনানি করে আজকের তারিখে রায়ের জন্য দিন ধার্য রাখেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

এর আগে এ ঘটনায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। এরপর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসককে (ভিসি) এ বিষয়ে তিনদিনের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলা হয়। ওই কমিটিতে একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, একজন নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপকের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিতে রাখতে বলা হয়। এবং তাদের সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। পাশাপাশি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য ভিসির প্রতি নির্দেশ দেন।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি ইবির দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে রাত সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় রাত ৩টা পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন। তিনি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, তারা ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করে তার বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে রাখেন।

এ ঘটনায় ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভয়ে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। র‌্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি হল প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দফতর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।

পরে বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে।

এর আগে এ ঘটনায় গত ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী মো. মহসিন। আদালত শুনানি নিয়ে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।

আদালতে উপস্থাপর করা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভাষ্য, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নির্দেশে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২১-২০২২ সেশনের শিক্ষার্থী ফুলপরীকে র‌্যাগিং ও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এই অমানবিক, পাশবিক, শারীরিক, ন্যাক্কারজনক ও জঘন্য ঘটনার সঙ্গে সরাসরি চারুকলা বিভাগ ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মি, আইন বিভাগের ২০২০-২০২১ সেশনের ইসরাত জাহান মীম, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের তাবাসসুম ইসলাম এবং মোয়াবিয়া জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া আল আমিন নামে একজনের সঙ্গে অন্তরার মোবাইলে কথা হয়। সেই ফোনে আল আমিন হুমকি দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

আর হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তরা প্রত্যেককে নির্দেশ দেয় প্রত্যেকে যেন ফুলপরীকে একটা একটা চড় মারে। আর লিমা ফুলপরীর মোবাইল কেড়ে নেয় এবং সবাই অন্তরার পা ধরতে ফুলপরীকে বাধ্য করে। এ ছাড়া প্রভোস্ট হলে থাকা অবস্থাতেই অন্তরা, তাবাসসুম, মীম, উর্মি, মোয়াবিয়ারাসহ অন্যরা ফুলপরীকে হাত ধরে টানাটানি করে হেনস্থা করে। এক পর্যায়ে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বরাবরে মুচলেকা দিতে বাধ্য করে।

তদন্তে প্রতিবেদনে এ ঘটনায় প্রভোস্ট ড. শামসুল আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুর রাজ্জাক, কর্মকর্তা হালিমা খাতুন, একজন আয়া, ডাইনিং ম্যানেজার সোহেল রানা, হাউজ টিউটর মোমিতা আক্তার, ইসরাত জাহানদের দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং ফুলপরী ইস্যুতে ব্যাপক গাফিলতি ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। তা ছাড়া প্রক্টর শাহাদাত হোসেন আজাদের উদাসীনতার কথাও বলা হয়।

সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন