বিজ্ঞাপন

যথেষ্ট খাদ্য মজুদ আছে, ‘প্যানিক বায়িং’ করবেন না: মুখ্য সচিব

March 12, 2023 | 9:45 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার রমজানে অনেক বেশি খাদ্য-শস্য ও নিত্যপণ্যের মজুদ আছে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। অহেতুক উদ্বিগ্ন হয়ে একসঙ্গে অনেক বেশি পণ্য না কিনতে জনসাধারণকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

রমজানে মানুষের কষ্ট লাগবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে রোববার (১২ মার্চ) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এক বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘এবার রোজার প্রস্তুতি আমরা যথাযথভাবে নিতে পেরেছি। আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্য-শস্য এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাজারে আছে। আমরা শুধু সবাইকে বলব ‘প্যানিক বায়িং’ যেন কেউ না করে।’

তিনি বলেন, ‘একবারে অনেক জিনিস যেন কেউ না ক্রয় করে। অর্থাৎ যখন যার যা প্রয়োজন তা নিলে কারও কোনো সমস্যা হবে না। আমরা খুব ভালোভাবে সুন্দরভাবে রোজা এবং ঈদ উদযাপন করতে পারব।’

বিজ্ঞাপন

বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার বেশি খাদ্য-শস্য মজুদ আছে জানিয়ে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে পেয়েছি বিগত যে কোনো বছরের চেয়ে এ বছর সরকারের যে খাদ্য মজুদ তার পরিমাণ অনেক বেশি। অর্থাৎ রোজায় আমাদের অনেক বেশি খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় স্বস্তির বিষয় এবং এ মজুদ বিগত কয়েক বছরের চেয়ে বেশি।’

অবৈধ মজুদ এবং বাজারে সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, ‘যারা রোজার সময় মজুদ করার চেষ্টা করবে, মানুষের দুর্ভোগ করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ যেন মজুদ করতে না পারে কড়া নজরদারি থাকবে।’

রোজায় পণ্যমূল্য বাড়বে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এবার আমাদের পণ্য মূল্য বাড়ার কোনো কারণ নেই। মজুদ আমাদের যথেষ্ট আছে। বিগত রোজার চেয়ে বেশি আছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘চিনি-তেলের ওপর ডিউটি কমানো হয়েছে। এ পণ্যগুলো আমাদের বাজারে ঢুকে গেছে। সরকারও যথেষ্ট পরিমাণ নিত্যপণ্য সরবরাহ করে ফেলেছে। মোবাইল কোর্ট আমরা চালু রাখবো। মনিটরিং জোরদার করার নির্দেশনা দিয়েছি।’

পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে যেন কোনো বাধা সৃষ্টি না হয় সে জন্য পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানান মুখ্য সচিব।

সরবরাহ ঠিক রাখতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে মুখ্য সচিব বলেন, ‘রোজার সময় নিত্যপণ্য যেন মানুষের কাছে পৌঁছায়, সাপ্লাই চেইন যেন ঠিক থাকে সে জন্য আমরা সবাইকে নির্দেশ দিয়েছি।’

কম আয়ের মানুষের জন্য সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কথা তুলে ধরে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘ওএমএস, টিসিবি আছে রোজা ও ঈদকে ঘিরে দুই কিস্তিতে এবার টিসিবির খাদ্য পণ্য সরবরাহ হবে। তেল, চিনি, ডাল, ছোলা এবং পেঁয়াজ, ঢাকায় খেজুর। প্রতিটি নিত্য পণ্য আমরা দুই বার করে এক কোটি মানুষকে দেব। সে হিসেবে প্রতিবারে ৫ কোটি লোক উপকৃত হবে। অর্থাৎ দুইবারে ১০ কোটি মানুষ কিন্তু টিসিবির খাদ্যপণ্য সহজে কিনতে পারবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১৫ টাকা হিসেবে ৩৫ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকি। সমগ্র দেশে কিন্তু আমাদের খাদ্য শস্য সরবরাহ অনেকগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

রমজানে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। সেহরি এবং ইফতারির সময় যেন বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাঘাত না ঘটে সে জন্য আমরা বলে দিয়েছি। পানি সরবরাহের বিষয়টিও দেখেছি।’

মুখ্য সচিব জানান, সড়কের বিষয়ে আমরা বলে দিয়েছি। যান চলাচল স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্টদের সরেজমিনে মিটিং করে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখার পাশাপাশি খাদ্যে ভেজাল বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঈদ উল ফিতরে মানুষের ঈদযাত্রা যানজটমুক্ত ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করার বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয় এ বৈঠকে।

এ বৈঠকে রমজানকে ঘিরে নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ মহানগরীসমূহের যানজট নিরসন, সারাদেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, বিশেষ করে বাস-রেল-লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা, ইফতার-তারাবি ও সেহরির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও সার্বক্ষণিক পানি সরবরাহ, বাস-ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি বন্ধ এবং প্রতারণা-ছিনতাইয়ের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয় এবং সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া যোগাযোগে রেলের সিডিউল বিপর্যয়, টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধ, সহজে টিকেট প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, মহাসড়কের শৃঙ্খলা, ঈদের আগে রাস্তা ও সেতু সংস্কার, নৌ-পথে ফেরীর সংখ্যা বাড়ানো, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ঠেকানো, আকাশপথে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো, গার্মেন্টস ও পাটকল শ্রমিকদের বেতনের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।

এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ (সমন্বয় ও সংস্কার), সেতু বিভাগ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, ধর্ম মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া খাদ্য অধিদফতর, বিএসটিআই, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ব্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, বিআরটিসি, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এনআর/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন