বিজ্ঞাপন

‘ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন দুই দেশের সহযোগিতা উন্নয়নের মাইলফলক’

March 18, 2023 | 8:07 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সহযোগিতা উন্নয়নের একটি মাইলফলক অর্জন বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করবে। আগামী দিনে আরও অনেক সফলতা বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে উদযাপন করবে এবং আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একইসঙ্গে কাজ করবো।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৮ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ‘ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নয়াদিল্লিতে তার কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে আসামের মূখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তার কার্যালয় থেকে যুক্ত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। ভ্রাতৃপ্রতিম প্রতিবেশি রাষ্ট্র। আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবাধ প্রবাহ ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক সম্পর্ক আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ট থেকে ঘনিষ্টতর করেছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ভারতের জনগণ ভারতের সরকারের কাছে ঋণী। কারণ, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট আমার বাবা জাতির পিতাকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয়, আমরা দুইবোন তখন ভারতেই আশ্রয় নিয়েছিলাম। আমাদের আরও আত্মীয়স্বজন যারা বেঁচে গিয়েছিলেন তারাও ভারতেই আশ্রয় নিয়েছিলেন।’

এ বিষয়ে ভারতীয়দের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধান মন্ত্রী বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে দুই দেশের সম্পর্কের সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপদান করেছি। আমাদের দুই দেশের মধ্যে যে সমস্ত সমস্যা, সেগুলো আমার একে একে সমাধান করেছি। ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা পানি চুক্তি করেছি। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধে যে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, রেল যোগাযোগ থেকে শুরু করে সড়ক যোগাযোগ সব আমরা উন্মুক্ত করেছি। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়েছি। আমরা উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি এবং ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন উন্নয়নে সহযোগিতা পাচ্ছি।’

বিভিন্ন সহযোগিতার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের জনগণের কল্যাণে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতাও বৃদ্ধি হয়েছে। বাংলাদেশে আমরা শতভাগ মানুষের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইতোমধ্যেই তা বাস্তবায়ন করেছি। আমরা বর্তমানে ভারতের এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতে উপআঞ্চলিক পর্যায়সহ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার আরও কয়েকটি উদ্যোগ বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। কাজেই সহযোগিতার ফলে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও গভীর হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

সমুদ্রসীমা বা স্থলসীমানা চুক্তি নিয়ে যে সমস্যা ছিল সেটাও সমাধান করা হয়েছে এবং সে জন্য ভারতের জনগণ ও নেতাদেরকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

২০১৮ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভার্চুয়ালি এই পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ উদ্বোধনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখন এই পাইপলাইন প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করার ফলে আজকে তার সম্পূর্ণ হলো। আজ থেকে এই পাইপলাইনটি কার্যকর হয়ে গেল এ জন্য আমরা আনন্দিত।’

এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত উভয় দেশের সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন চালুর ফলে বাংলাদেশের জনগণ নানাভাবে উপকৃত হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যখন বিশ্বের অনেক দেশ জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি, তখন এই পাইপলাইনটি আমাদের জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানিতে ব্যয় ও সময়ও আমাদের উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। আমি আশা করছি এই পাইপলাইন বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় ডিজেলের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করবে।

বিজ্ঞাপন

পাইপলাইন নির্মাণে প্রযুক্তিগত আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি আসামের মূখ্যমন্ত্রীসহ আসামের জনগণকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।

বর্তমানে রেলওয়ে ওয়াগানের মাধ্যমে ভারত থেকে বছরে ৬০ থেকে ৮০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হতো জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পাইপলাইন নির্মাণের ফলে বছরে প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হবে। পার্বতীপুরে বর্তমানে স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ১৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে আমরা আরও ২৮ হাজার ৮০০ মেট্রিক টনে উন্নীত করার কাজ করে যাচ্ছি।’

আমাদের দুই দেশের মানুষের মধ্যে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সেটা অটুট থাকার আশাবাদ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট এবং ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রূপসা রেলওয়ে সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। আর বাকিটাও আশা করি তাড়াতাড়ি শেষ করা হবে। আমি বিশ্বাস করি এই ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন আমাদের দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সহযোগিতা উন্নয়নের একটি মাইলফলক অর্জন। এটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করবে। আমি চাই ভারতের বিনিয়োগকারীরাও এখানে এসে আরও বিনিয়োগ করুন। আমরা দুই দেশই তাতে লাভবান হবো।

আগামী দিনে আরও অনেক সফলতা বাংলাদেশ ভারত যৌথভাবে উদযাপন করবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আমরা একইসঙ্গে কাজ করবো, সেই আশাবাদও ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রতিবেশি দুই দেশের মধ্যে প্রথম আন্তঃসীমান্ত জ্বালানি তেলের পাইপলাইনটির বার্ষিক ১ মিলিয়ন টন হাই-স্পিড ডিজেল (এইচএসডি) পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে। ৩৭৭ কোটি রুপির এই পাইপলাইনের মধ্যে বাংলাদেশের অংশটি ভারতীয় অনুদানের সহায়তায় প্রায় ২৮৫ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। পাইপলাইনটি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ১২৫ কিলোমিটার ও ভারতের অভ্যন্তরে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এর আগে বাংলাদেশ প্রতিবেশি ভারত থেকে ডিজেল আমদানিতে রেলগাড়ি ব্যবহার করত।

পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মেঘনা পেট্রোলিয়াম ডিপো পর্যন্ত বিস্তৃত পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে ডিজেল আমদানির জন্য ২০১৭ সালে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

সারাবাংলা/এনআর/ইআ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন