বিজ্ঞাপন

ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্র; কতটা স্বাধীন আমরা?

March 19, 2023 | 4:14 pm

আজহার মাহমুদ

স্বাধীনতা। একটি জাতির জন্য সবচে বড় পাওয়া। যা বাঙালী জাতির জন্যও আনন্দ এবং গর্বের বিষয়। কারণ আমরাও স্বাধীন একটি জাতি। স্বাধীন, কথাটি নিয়ে হয়তো অনেকের অনেক মতামত আছে। বিশেষ করে ব্যাক্তিগত জীবনে স্বাধীনতা নিয়ে অনেকের অনেক মত থাকতে পারে। এক্ষেত্রে অনেকেই নিজেকে স্বাধীন বলে দাবি করতে পারে না। কেউ না কেউ কারো না কারো কাছে পরাধীন হয়ে থাকছে। তাই স্বাধীনতা কথাটা তাদের জীবনের সাথে বেমানান।

বিজ্ঞাপন

এই যেমন আপনার পরিবার এবং বড়জনদের সামনে আপনি ভাবছেন পরাধীন। তারা যা বলে তাই করতে হবে আপনার। আবার অনেকেই বলে দেশের প্রশাসনের কাছে আমরা পরাধীন। বছর কয়েক আগে এক ছেলের ব্যাগে তল্লাশী করার নামে একজন পুলিশের কর্মকর্তা ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে থানায় নিয়ে টাকা আদায় করে ছেড়ে দিয়েছে। তখন তার বাবা-মাকে এই বিষয় নিয়ে মামলা কিংবা প্রতিবাদ করার কথা বললে তারা বলে আমরা এখনও স্বাধীন নই। প্রশাসনের কাছে আমরা এখনও পরাধীন।

এরপর আসাযাক আরও ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়ে। আপনি যখন কোনো ছেলে বা মেয়ের সাথে প্রেম করবেন তখন তার কাছেও স্বাধীনভাবে থাকতে পারবেন না। যদি নিজের প্রেম বাঁচাতে চান, তাহলে স্বাধীনতা হারাতে হবে। যেমন, প্রেমিকা যদি বলে এখন তুমি ওমুখ জায়গায় আসবা। কালকে আমার জন্য এই জিনিসটা আনতে হবে। তখন ইচ্ছা না থাকা সত্বেও পরাধীনের মতো আপনার এসব কথা মেনে নিতে হবে। ঠিক অনেক ছেলেও প্রেমের সময় অনেক মেয়ের স্বাধনিতা দেয় না। যেমন, তুমি ওই ছেলেটার সাথে কথা বলতে পারবা না। তোমার কোনো ছেলে বন্ধু থাকতে পারবে না। এরকম হাজার শর্ত থাকে। আর অনেক সময় পরাধীনতার জালে আটকে নিজের প্রেম কিংবা ভালোবাসা বাঁচানোর জন্য এসব শর্ত মেনে নেয় অনেক মেয়ে। ঠিক এভাবেই প্রত্যেকেই নিজের জীবন পার করছে। যেখানে সকলেই কারো না কারো কাছে পরাধীন। যদিও এসব পরাধীনতাকে আমরা মূখ্য হিসেবে দেখিনা। সকলেই বলি আমরা স্বাধীন। প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন আমরা নই। স্বাধীন শুধু আমাদের দেশ।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনা দেন বঙ্গবন্ধু। সেদিন থেকে আমরা স্বাধীন জাতি এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বসবাস করছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সেদিন পাক বাহীনিদের হাত থেকে নিজের দেশকে রক্ষা করেছিলো বাংলার মানুষ। তারপর থেকে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি দেশ জায়গা পেয়েছে। সেদিন থেকে বিশ্ব জানে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। বাঙালী জাতি একটি স্বাধীন জাতি। কিন্তু আসলেই কি আমরা স্বাধীন জাতি? বিষয়টা একটু ভেবে দেখতে হবে। এখানেও একটু ঘাবলা আছে।

বিজ্ঞাপন

ঘাবলা না থাকলে এখনও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সামনে নিজেদের ক্ষমতা এবং স্বাধনিতা দেখাতে পারছি না কেন? সিমান্তে আমার দেশের মানুষকে গুলি করে হত্যা করছে অন্যদেশের স্বসস্ত্র বাহীনি। আর আমরা চিৎকার করে বলি আমরা স্বাধীন দেশ। এটাই কি আমাদের অবস্থান? এটাইকি স্বাধীন জাতি আর স্বাধীন দেশের কাজ? যদি তাই হয়, তাহলে স্বাধীন কাকে বলে সেটাই আমরা এখনও বুঝতে পারছি না। কোনো এক মনীষী বলেছেন, স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। ঠিক তেমনী আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম ঠিকি, রক্ষা করতে বোধহয় পারছিনা।

যাইহোক এবার আসা যাক মূলকথায়। স্বাধীনতা একটা মানুষের জন্য সবচে বড় শক্তি। স্বধীনতা ছাড়া কেউ এগিয়ে যেতে পারে না। সকল বাধা এড়িয়ে স্বাধীনভাবে চলতে পারাটাই সার্থকতা। আর এজন্য ক্ষুদ্র থেকে শুরু করে বৃহত্তর পরিসরে যেতে হবে। আগে আপনার ঘরে স্বাধীনতা থাকতে হবে। থাকতে হবে মত প্রকাশের সুযোগ। তারপর আপনার সমাজে, আত্বীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদের কাছে আপনার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। এরপর আপনার পাড়া, মহল্লা, উপজেলা, জেলা, বিভাগ এভাবে করে সারা পৃথিবীতে স্বাধীনতা পেতে হবে। আপনি যদি আপনার জেলায় স্বাধীন মানে আপনার দেশেও স্বাধীন।

যখন আমরা পাকিস্তানীদের হাতে পরাধীন ছিলাম তখনও স্বাধীনতার চেষ্টা ক্ষুদ্র থেকে শুরু হয়েছে। আর সেটা করেছেন বঙ্গবন্ধু নিজেই। তিনি তার শিক্ষাজীবন থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ এবং মতপ্রকাশের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করেছেন। তার এগিয়ে যাওয়ার দেখে বাকিরাও স্বাধীনতার পক্ষে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেছিলন। এরপর ছোট একটি দল নিয়ে এটা আগাতে থাকে। পরবর্তীতে এই দলটাই বাঙালীর হয়ে নির্বাচন করেন পাকিস্তানের বিরোদ্ধে। এরপর সেই বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষণে সারা বাংলা এক হয়ে দাড়ায় স্বাধীনতার জন্য। যা ক্ষুদ্র থেকে বৃহত্তর পরিসরে ছড়িয়ে যায়। ফল হিসেবে ৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানীদের হাত থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনি। কিন্তু আজ সেদিনের বিজয়ের স্বাধটা পাচ্ছি না। আমি হয়তো সেদিন ছিলাম না। তাই আনন্দটা কেমন হয়েছিলো সেটা হয়তো জানিনা। কিন্তু অনুভব করতে পারি। আর সেই অনুভবের স্থান থেকে বলা যায় আজ সেই আনন্দ নেই। এ আনন্দ পেতে চাইলে প্রয়োজন সত্যিকারের স্বাধীনতা। প্রয়োজন ভালোবাসা। প্রয়োজন মতপ্রকাশের অধিকার। তবেই সকলের বিজয়ের আনন্দ অনুভব হবে।

বিজ্ঞাপন

তাই সকলের চাওয়া একটাই, সেটা হচ্ছে স্বাধীনতা। ব্যাক্তি স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিচারের স্বাধীনতা, এগিয়ে যাওয়ার স্বাধীনতা। এসব স্বাধীনতাই পারে প্রকৃত স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে। আসুন প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে অন্যের স্বাধীনতার উপর থেকে হাত সরিয়ে নিই। সবাইকে স্বাধীনতার মর্যাদা দিই। স্বামী তার স্ত্রীকে, বাবা তার সন্তানকে, সন্তান তার বাবা-মাকে, বড় ভাই তার ছোট ভাইকে, ধনী ব্যক্তি গরীবকে, হিন্দুকে মুসলমান, দুর্বলকে শক্তিশালী এভাবে প্রতিটি মানুষ প্রতিটি স্থানে যার যার স্বাধীনতা তাকে প্রয়োগ করতে দিলেই স্বাধীনতা বিষয়টি সত্য বলে গণ্য হবে। তাই আসুন স্বাধীনতার এ মাসে যার যার স্বাধীনতা তাকে ফিরিয়ে দিই। মুক্তি দিয়ে ফেলি পরাধীনতাকে। জয় হোক স্বাধীনতার, জয় হোক বাংলার।

লেখক : কলামিষ্ট

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন