বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে আউটার স্টেডিয়াম ঢেকে রাখা স্থাপনা উচ্ছেদ

March 19, 2023 | 9:56 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়াম ঘিরে গড়ে তোলা নার্সারি, রেঁস্তোরা ও দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। তবে এসব স্থাপনার মালিকরা দাবি করেছেন, উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থা উপেক্ষা করে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৯ জানুয়ারি) সকালে জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নু-এমং মারমা মংয়ের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।

অভিযানে আউটার স্টেডিয়ামের পুরো একপাশ ঢেকে গড়ে তোলা বাগান বিলাস নামে একটি রেঁস্তোরা ও নার্সারি উচ্ছেদ করা হয়। এছাড়া মুক্তমঞ্চের আশপাশ থেকে ভ্রাম্যমাণ দোকান, রেঁস্তোরাসহ আরও কয়েকটি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নু-এমং সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে সেগুলো চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) জায়গা আউটার স্টেডিয়ামে গড়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর খেলার মাঠ দখলমুক্ত করার নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসক এ জায়গা পরিদর্শন করেছিলেন। লাল দাগ দিয়ে মাঠের জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি যারা স্থাপনা তৈরি করেছিলেন তাদের উঠে যাওয়ার সময় দেওয়া হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা দখল না ছাড়ায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন সিজেকেএস’র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

গত ২ মার্চ তাকে নিয়ে আউটার স্টেডিয়াম পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানিয়েছিলেন, একজন সহকারী কমিশনারের নেতৃত্বে সার্ভেয়ার দিয়ে আউটার স্টেডিয়ামের মাপ নিয়ে লাল রঙে সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে গড়ে তোলা রেঁস্তোরাগুলো উচ্ছেদের আগে তাদের দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে এরপর মাঠের চারপাশে সীমানা পিলার দিয়ে সংস্কার কাজ শুরুর কথা জানিয়েছিলেন তিনি।

এর ১৭ দিন পর শুরু হওয়া উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে এমএ হোসাইন বাদল নামে এক ব্যবসায়ী সেখানে গিয়ে দাবি করেন, এসব স্থাপনা চট্টগ্রাম ‘নাগরিক সুবিধার সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্পের’ আওতায় সিটি করপোরেশন থেকে ইজারা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘যেসব স্থানে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছিল, সেগুলো ফুটপাথ ও নালার অংশ। মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে আউটার স্টেডিয়ামের উত্তর-পূর্ব পাশে ফুটপাত এবং সংশ্লিষ্ট নাগরিক সুবিধার উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় ই-টেন্ডারের মাধ্যমে ২০১৮ সালের শেষ দিকে পাঁচ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পের আওতায় ফুড জোন, পাবলিক টয়লেট, যাত্রী ছাউনি, ট্রাফিক পুলিশ বক্স, বসার স্থাপনা ও নার্সারি তৈরি করা হয়েছিল। এতে প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সৌন্দর্যবর্ধনে ব্যয় করা অর্থ ফুড জোন থেকে আয় করতে বলা হয়েছিল।’

ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের সার্ভেয়ার ও জেলা প্রশাসনের সার্ভেয়ায়ের মাপের মধ্যে ভিন্নতা আছে। ফুড জোন ও নার্সারি উচ্ছেদ করা হলেও ট্রাফিক পুলিশ বক্সটি উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। গত ১৬ মার্চ উচ্চ আদালত থেকে স্থিতাবস্থা জারি হয়েছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থাও ৩১ মার্চের মধ্যে স্থাপনা ছাড়ার নোর্টিশ জারি করেছিল। তার আগেই উচ্ছেদ করা হচ্ছে।’

‘আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র থাকার সময় আমি ইজারা নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন বলছে এটা জেলা ক্রীড়া সংস্থার জায়গা। আমরা তো মাঠে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করিনি। এ স্থাপনা ফুটপাত ও নালার ওপরে করা হয়েছে করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে।’

উচ্ছেদের সময় ম্যাজিস্ট্রেটকে আদালতের স্থিতাবস্থা জারির নথি দেখাতে চাইলে তিনি সার্টিফাইড কপি নেই দাবি করে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখেন বলে বাদল জানান।

বিজ্ঞাপন

সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন অবশ্য সাংবাদিকদের বলেছেন, ফুটপাত সৌন্দর্যবর্ধনের আওতায় ইজারা নিয়ে তারা জেলা ক্রীড়া সংস্থার জায়গায়ও স্থাপনা নির্মাণ করেছিল।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে ৩১ মার্চের মধ্যে ব্যবসায়ীদের স্থাপনা ছেড়ে যাওয়ার চিঠির প্রসঙ্গে আ জ ম নাছির উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে এজ ইউজ্যুয়েল নোটিশ দিয়েছিলাম। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যখন গিয়েছিলাম তখন দুই সপ্তাহের সময় দেওয়া হয়েছিল। হিসেবে তো ১৪ দিন হয়ে গেছে।’

এদিকে, উচ্ছেদকে অবৈধ দাবি করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে রোববার বিকেলে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামে ক্রীড়াচর্চার মধ্য দিয়েই দেশের অনেক তারকা ক্রিকেটার ও ফুটবলার তৈরি হয়েছে। তবে বছরজুড়ে বিভিন্ন মেলা, অবৈধভাবে গাড়িসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ফেলে রাখা এবং সংস্কারের অভাবে মাঠটি অনেকটাই পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। সেখানে এখন খেলাধুলার সুযোগ নেই বললেই চলে।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন