বিজ্ঞাপন

জাপার প্রার্থী তালিকা করছেন রওশন, কাউন্সিল ইদের পর

March 21, 2023 | 10:18 pm

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে থেকেই লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। সে লক্ষ্যে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ দলীয় প্রার্থীদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। যারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টির টিকিট নিয়ে নির্বাচন করে জিতেছেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন বর্তমানে সেসব প্রার্থীর তালিকা চলছে। পার্টির রওশন এরশাদ গ্রুপের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়, বহিষ্কৃত নেতাদের স্বপদে ফিরিয়ে নেওয়াসহ ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন ও দলীয় গঠনতন্ত্রের আপত্তিকর ধারাগুলো জিএম কাদের সংশোধন না করলে ইদের পর দলীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করবে রওশন এরশাদ। তার আগে রোজার মধ্যে ৫২টি জেলার নেতাকর্মীদের নিয়ে বর্ধিত সভা করে কাউন্সিলের দিন তারিখ ঠিক করবেন তিনি।

জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে আনোয়র হোসেন মঞ্জু জাপা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর পৃথক জাতীয় পার্টি গঠন করেন। ওই সময় দলের লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে আইনি লড়াই শুরু হয়। আইনি লড়াইয়ে এরশাদের পক্ষে বেগম রওশন এরশাদের নামে লাঙ্গল প্রতীকটি বরাদ্দ দেওয়ার রায় আসে। এর মাধ্যমে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকটি স্থায়ী হয়ে যায়। এই লাঙ্গল প্রতীকটি ছিল মূলত শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের অবিভক্ত ভারতের কৃষক প্রজা পার্টির। পরে আতাউর রহমান খানের জাতীয় লীগের প্রতীক ছিল লাঙ্গল। পাকিস্তান আমলে ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে তার দল এই লাঙ্গল প্রতীকে অংশ নেয়। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন আতাউর রহমান খান। ওই সময় তার কাছ থেকে লাঙ্গল প্রতীকটি জাতীয় পার্টির জন্য নেন এরশাদ।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদপন্থী নেতা এস এম আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘যদি জাতীয় পার্টি বিভক্তির দিকে যায় তাহলে কাউন্সিলে ঠিক করবে দলের নেতৃত্ব। সেই হিসেবে দলের প্রতীক লাঙ্গল রওশন এরশাদেরই থাকবে। তবে এ নিয়ে বির্তক হলে প্রথমে নির্বাচন কমিশনে যেতে হবে। সেখানে সমাধান না হলে আইনি লড়াই হবে।’

বিজ্ঞাপন

দলের অপর এক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘দলটি বিভক্তির দিকেই আছে। রোজার মধ্যে ৫২টি জেলার নেতাকর্মীদের নিয়ে বর্ধিত সভা করে জাতীয় পার্টির কাউন্সিলের তারিক ঠিক করা হবে। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘৩০০ আসনে আমরা প্রার্থী রাখব। তবে মহাজোট থেকে আলোচনা সাপেক্ষে আসন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি।’

এদিকে, গতকাল সোমবার (২০ মার্চ) জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ৯৪তম জন্মদিনের উৎসব আয়োজন নিয়ে দেবর-ভাবির ক্ষমতার লড়াই ফের প্রকাশ্যে এসেছে। জানা গেছে, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ সোমবার সকালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদের জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন গুলশানের বাস ভবনে। ওই আয়োজনে জি এম কাদের আমন্ত্রিত ছিলেন না। অপরদিকে, বিকেলে জাপার বনানী কার্যালয়ে এরশাদের জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জি এম কাদের।

ওই দিন গুলশানের বাসভবনের অনুষ্ঠানে রওশন এরশাদ বলেন, ‘দলীয়ভাবে নেতার (হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ) জন্মদিন স্মরণ করে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে আমিও দোয়ার আয়োজন করেছি। এতে কোনোভাবেই দ্বন্দ্ব বা বিভেদ প্রমাণ করে না। যারা জাতীয় পার্টি ছেড়ে চলে গেছেন এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন তাদের দলে ফিরে আসার আহ্বান জানাই।’

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, ‘জাতীয় পার্টি যেভাবে চলছে তাতে দলটি ভবিষ্যতে ছোট হয়ে যাবে।’ জিএম কাদের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘দলের নেতৃত্বে যিনি আছেন, তিনি শুধু জাপাকে ধ্বংস করে চলছেন। আমি আগেও যেখানে ছিলাম এখনও সেখানে আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার নেতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। তিনি সংসদে সবসময় গঠনমূলক আলোচনা করতেন। বঙ্গবন্ধুকে তিনি জাতির পিতা ঘোষাণা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ওই সময় সরকারের কিছু লোকের জন্য তিনি সেটি পারেননি।’

এদিকে, জিএম কাদেরপন্থী নেতাদের দাবি, সাংগঠনিকভাবে বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির কেউ নন। তিনি আমাদের শ্রদ্ধেয়। তবে তার সঙ্গে যারা আছেন তারা দল থেকে বহিষ্কৃত।

আর রওশন এরশাদ গ্রুপের নেতারা বলছেন, এরশাদ অসুস্থ থাকার সময় তার কাছ থেকে ব্ল্যাকমেইল করে দলের চেয়ারম্যান পদ ভাগিয়েছে জিএম কাদের। এছাড়াও তিনি জাপা পরিচালনা করছেন দু’টি গঠনতন্ত্রের মধ্য দিয়ে। যা স্বৈরতান্ত্রিক কার্যক্রমের শামিল বলেও মন্তব্য করেন রওশনপন্থীরা।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন