বিজ্ঞাপন

লিখন এবং লেগ স্পিনারের অনন্ত আক্ষেপ

May 6, 2018 | 6:09 pm

মোসতাকিম হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ব্যাপারটা বাংলাদেশের জন্য সবসময়ই অনন্ত আক্ষেপের। একজন লেগ স্পিনারের জন্য বাংলাদেশ হাপিত্যেশ করছে সেই কবে থেকেই। ঠিক এই মুহূর্তে টি-টোয়েন্টি বোলারদের র‍্যাঙ্কিং সেই আফসোস আরও বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ। রশীদ খান, শাদাব খান, যুঝভেন্দ্র চাহাল, ইশ সোধি, স্যামুয়েল বদ্রি, ইমরান তাহির… শীর্ষ সাত বোলারের মধ্যে ছয়জনই রিস্ট স্পিনার। আশার আলো হতে পারে একটাই, বাংলাদেশের আশার আলো যিনি হতে পারতেন, তিনি নিজেকে ফিরে পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জুবায়ের হোসেন লিখনই বাংলাদেশের রিস্ট স্পিনারদের অন্ধকার আকাশে মিতিমিটি করে জ্বলতে থাকা একমাত্র তারা।

মিরপুরে বেশ কয়েকদিন থেকেই দৃশ্যটা নিয়মিত। একাডেমি মাঠে অনুশীলন করে যাচ্ছেন লিখন। জাতীয় দল তো বটেই, অনেক দিন ধরে ঠিক খেলার মধ্যেও নেই। এই বছর প্রিমিয়ার লিগে একটাও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি, সর্বশেষ কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছেন গত বছর বাংলাদেশের এ দলের হয়ে আয়ারল্যান্ড এ দলের বিপক্ষে। কিন্তু জাতীয় লিগ বা বিসিএল, কোথাও খেলার সুযোগ পাননি। লিখনও স্বীকার করলেন, ম্যাচ নিয়মিত না খেলার কারণে কিছু ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। তারপরও বোর্ড তাঁকে নিয়মিত অনুশীলনের সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে। জানালেন, নিজেকে ফিরে পেতে চেষ্টা কমতি করছেন না।

‘এক মাসের বেশি হচ্ছে আমি কাজ করছি। রানিং করছি, জিম করছি। প্রতিদিন তো বোলিং থাকছেই। এখন অনুশীলন অনেক ভাল হচ্ছে। আগে এতটা ফিট ছিলাম না। এখন বডিও ফিট হয়েছে অনেকটা, ওজনও কমছে। অনুশীলন সুবিধা পাচ্ছি। শুক্রবারের দিনও আমাকে উইকেট দেওয়া হয়।’

বিজ্ঞাপন

‘বোর্ড কিন্তু সব খেলোয়াড়দের ফ্যাসিলিটি দেয় না। আমাকে কিন্তু আল্লাহর রহমতে সব সুবিধা দিচ্ছে। আমি গত বছর ঘরোয়া লিগেও খেলিনি। আমাকে এইচপিতে রেখেছে। তো বোর্ডের প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ যে তারা আমাকে অনেক হেল্প করছে। আমার প্রতি তাদের যে প্রত্যাশা, আমিও চেষ্টা করব সেটার মান রাখতে।’

কিন্তু লিখনকে নিয়েই কেন আশা দেখতে হবে, সেটাও আরেকটা প্রশ্ন। মাশরাফি বিন মুর্তজা যেমন সেদিন আক্ষেপ করতে করতে বলছিলেন, বাংলাদেশের লেগ স্পিনার উঠে আসার সংস্কৃতিটাই নেই। এবারের প্রিমিয়ার লিগ সাক্ষ্য দিচ্ছে, অবস্থা কতটা সঙ্গীন। অন্তত ১০ উইকেট পাওয়া বোলারদের মধ্যে লেগ স্পিনারদের একজন। অথচ অলক কাপালি আদতে ফুলটাইম বোলারই নন। ফিঙ্গার স্পিনারদের অভয়ারণ্যে লেগ স্পিনাররা তাই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতোই দুর্লভ। এখানে ক্লাব বা ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তাদের সদিচ্ছার অভাব আছে কি না সেই প্রশ্নও উঠে এলো। লিখন অবশ্য দোষটা নিজেদের ঘাড়েই নিলেন।

বিজ্ঞাপন

‘এখানে তো আমার হাত নেই। হয়ত আমার কোন ভুল আছে যে কারণে আমাকে ঘরোয়া লিগে খেলাচ্ছে না। হয়ত টিম কম্বিনেশনের কারণে হোক বা যেকারনেই হোক আমার উপর ভরসা করতে পারছে না। আমি কাউকে দোষ দেব না। হয়ত আমারই ভুল।’

তবে সেই সঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন, ভারতে থাকলে হয়তো আরও বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেতেন, ‘এবার বিপিএলে ম্যাককালাম দেখে বলল- ‘তুমি কয় উইকেট পেয়েছ’। আমি যখন বললাম আমি কোন দলে নেই। তখন টম মুডিও অনেক কিছু জিজ্ঞেস করল (অবাক হলো)। আমাদের মোহামেডানে বিপুল শর্মা বলছিল—তুমি যদি ইন্ডিয়াতে থাকতে আইপিএলে আরামে খেলতে। ও নিজ থেকেই, শাহীন ভাইকে (বোলিং কোচ হুমায়ুন কবির) বলেছে, আমাকেও বলেছে। তোমার অনেক চাহিদা থাকত। এসব কথা আমাকে আত্মবিশ্বাস দেয় আসলে।’

সেই আত্মবিশ্বাস আরও অনেক বেশি উঁচুতে নিয়ে যেতে হবে। সামনে এইচপি, এ দলের ট্যুর আছে। বয়স ২২, এখনও সময় আছে অনেকটা। লিখন হয়তো আবার নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পাবেন আরেক বার। এবার নিশ্চয় তা আর হাতছাড়া করতে চাইবেন না!

সারাবাংলা/ এএম/এসএন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন