কেউ বাদ যাচ্ছে না: মির্জা ফখরুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকে কেউ বাদ যাচ্ছে না। শুধু বিএনপির লোক নয়, সাধারণ মানুষও বাদ যাচ্ছে না। নওগাঁর একজন মহিলা, তিনি সরকারি কর্মচারি, কী কারণে তাকে র‌্যাব তুলে নিয়ে গেল, এখন পর্যন্ত জানা যায় নাই। তুলে নিয়ে যাওয়ার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সে নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করল, তাকে মেরে ফেলা হল।’

‘এখন তারা বলছে, এটা ভুল হয়েছে। এক মন্ত্রী বলেছেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট— এটার অপপ্রয়োগ করা হয়েছে। এই অপপ্রয়োগের ফলে একজন নিরাপরাধ অসহায় নারীর জীবন পর্যন্ত চলে গেল। এর দায় কে নেবে? এই দায় সম্পূর্ণ সরকারকে নিতে হবে।’

শুক্রবার (৩১ মার্চ) মিরপুর ২ নং ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারে পল্লবী ও রুপনগর থানা বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অ্যাক্টের আওতায় প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে হঠাৎ করে গভীর রাতে তুলে নিয়ে গেল। ৩৬ ঘণ্টা তার কোনো খবর নাই্। পরে তাকে আদালতে সোপর্দ করেছে নতুন করে মামলা দায়ের করে।’

‘শুধু তাই নয়, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে এবং এটাই শেষ নয়। এই সরকার আসার পর আরও তিনজন খ্যাতনামা সম্পাদককে এমন অবস্থা করেছে যে, তারা এদেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। এরা হচ্ছেন, আমার দেশের মাহমুদুর রহমান, দৈনিক সংগ্রামের আবুল আসাদ এবং যায় যায় দিনের শফিক রেহমান। অসংখ্যক সাংবাদিকের ওপর নির্যাতন চলেছে, হত্যা হয়েছে, মেরেও ফেলা হয়েছে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আজকে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা—কোনো কিছুই অবশিষ্ট নাই। প্রতিমুহূর্তে  আমাদেরকে সেই চ্যালেঞ্জগুলোকে সামনে নিয়ে এগুতে হচ্ছে। সেখানে আমরা শৃঙ্খলা না মানি, সেখানে যদি আমরা বিশৃঙ্খল হয়ে যাই তাহলে সেই যুদ্ধে আমরা কি জয়লাভ করতে পারব? আমরা কি পরিবর্তন আনতে পারব? আমরা কি চাই শেখ হাসিনা সরকার চলে যাক? তাহলে রমজানের এই পবিত্র দিনে আমাদের সকলকে শপথ নিতে হবে যে, আমরা শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করব।’

ইফতার অনুষ্ঠানে নেতা-কর্মীর সমাগমে গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। সাংবাদিকরা একপাশে দাঁড়িয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টার মধ্যে কয়েকজন কর্মীরা বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে মারমুখী হয়ে ওঠে। এতে কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। পরে মঞ্চ থেকে নেতারা এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল তার বক্তব্যের শুরুতে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক ভাইদের সঙ্গে কয়েকজন ব্যক্তির একটা অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত যে ঘটনা ঘটেছে, সেজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

রুপনগর-পল্লবী থানার নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন করতে চাই, আপনারা কি সত্যিকারই দলকে ভালোবাসেন? মনে হয় না। তাহলে আজকে এই ঘটনা ঘটত না। আপনারা অতিথিদেরকে সন্মান করতে জানেন না। আমি অত্যন্ত দুঃখিত শোকাহত। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বক্তৃতা করছেন, সেই সময় আপনারা এই সমস্ত ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমি অনুরোধ করব দয়া করে শৃঙ্খলার সঙ্গে এখানে থাকেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি নিজে দেখেছি, কারা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এরা কারা? এখানে আওয়ামী লীগের দালালেরা ঢুকেছে, এখানে সরকারের দালালের এসেছে। আমি আবারও আমার সাংবাদিক ভাইদের কাছে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে, দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাচ্ছি।’

আবার বাকশাল করার পায়তারা চলছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আবার বাকশাল প্রতিষ্ঠার জন্য, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধবংস করে দিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে তারা নিষিদ্ধ করে নাই, কিন্তু রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে। বিএনপিকে তারা বাইরে কোথায় কর্মসূচি করতে দিতে চায় না। আজকে যদি খোলা জায়গায় প্যান্ডেলে করতে পারতেন তাহলে এতো সমস্যা (প্রচণ্ড ভিড়) হতো না।’

তিনি বলেন, ‘তারা ২০২৩ সালের শেষে অথবা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে নির্বাচন করবে। সেই নির্বাচন আবার আগের মতো করবে। ২০১৪ তে যেমন করেছে, ২০১৮ তে যেমন করেছে, যেখানে বিরোধী দল থাকবে না।’

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধু আপনারাই থাকবেন আর আপনার পুলিশ-পাইক পেয়াদারা থাকবে। যেমন খুশি তেমন সিল মেরে ভোটের আগের রাত্রেই ফলাফল নিয়ে যাবেন। সেটা এবার এদেশের মানুষ হতে দেবে না।’

জহিরুল হকের সভাপতিত্বে ইফতারপূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হক, যুব দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ইয়াছিন আলি প্রমুখ।

সারাবাংলা/ এজেড/ এনইউ