বিজ্ঞাপন

এসএসসিতে সব সূচকেই খারাপ ফল চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের

May 6, 2018 | 8:34 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: এসএসসি পরীক্ষায় এবার প্রায় সব সূচকেই খারাপ ফল করেছেন চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা। পাসের হার যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। কমেছে শতভাগ পাস করা স্কুলের সংখ্যাও।

চট্টগ্রাম বিভাগে ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং গণিতে খারাপ ফলকে দায়ী করছেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা।

রোববার (০৬ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. তাওয়ারিক আলম। ফল ঘোষণার সময় তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

এবারের এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এসএসসিতে গতবার পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ, যা এবারের পাসের হারের আট দশমিক ৪৯ শতাংশ কম।

গত তিন বছরে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী। এবার জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৮ হাজার ৯৪ জন, যা গতবারের তুলনায় এবার ২৫০ জন কম।

পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন পাসের হার

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ২০১৪ সালে এসএসসিতে পাসের হার ছিল ৯১ দশমিক ৪০ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিলো ১০ হাজার ৮৮৪ জন। ২০১৫ সালে পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৭ হাজার ১১৬ জন। ২০১৬ সালে পাসের হার ৯০ দশমিক ৪৫ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৮ হাজার ৫০২ জন। ২০১৭ সালে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৮ হাজার ৩৪৪ জন। এ বছর পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮ হাজার ৯৪ জন।

খাগড়াছড়ি জেলায় এবার পাসের হার ৫০ দশমিক ৫২ শতাংশ যা গতবছর থেকে ১২ দশমিক ১১ শতাংশ কম। গতবছর খাগড়াছড়িতে পাসের হার ছিল ৬২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এ বছর বান্দরবান জেলায় পাসের হার ৫৭ দশমিক ৯২ শতাংশ যা গত বছরের তুলনায় ২১ দশমিক ৬৮ শতাংশ কম। গতবছর এ জেলার পাসের হার ছিল ৭৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। এবার রাঙামাটি জেলায় পাসের হার ৬২ দশমিক ৭২ শতাংশ যা গতবছরের তুলনায় দশমিক ৭৯ শতাংশ কম। কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৭৪ দশমিক ২৯ শতাংশ যা গত বছর ছিল ৮৫ দশমিক ৯২ শতাংশ।

চট্টগ্রাম নগরীতে গতবছর পাসের হার ছিল ৯২ দশমিক ০১ শতাংশ এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৫ দশমিক ২২ শতাংশে। নগরীবাদে চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার এবার ৭৭ দশমিক ২৬ শতাংশ, যা গতবছর থেকে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ কম। একইভাবে এ বছর নগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৭৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যা গতবছর থেকে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ কম।

শতভাগ পাস স্কুলের সংখ্যা কমেছে

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে গত বছর শতভাগ পাস করা স্কুলের সংখ্যা ছিল ৫৬টি, কিন্তু এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৭টিতে। ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বোর্ডে শত ভাগ পাস করা স্কুলের সংখ্যা ছিল ৮৮টি।

বিভাগভিত্তিক ফলাফলেও কমেছে পাসের হার

এবার বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯০ শতাংশ যা গতবছর ছিল ৯২ দশমিক ০৭ শতাংশ। মানবিক বিভাগে এবার পাসের হার ৬০ দশমিক ১৩ শতাংশ গতবছর ছিল ৭৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এবার ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যা গতবছর ছিল ৮৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে ৩০ হাজার ৭৮৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২৭ হাজার ৭০৮ জন, মানবিকে ৪২ হাজার ৫৬২ জনের মধ্যে পাস করেছে ২৫ হাজার ৫৯২ জন এবং ব্যবসা শিক্ষা শাখায় ৬১ হাজার ৮০১ জনের মধ্যে পাস করেছে ৪৮ হাজার ৭৩৭ জন।

ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা এগিয়ে

এবার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ছাত্রীদের তুলনায় ছাত্ররা বেশি পাস করলেও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ছাত্রীরা। ছাত্রদের পাসের হার ৭৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যেখানে ছাত্রীদের পাসের হার ৭৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। এবার ৬২ হাজার ৭৫৭ জন ছাত্রের মধ্যে পাস করেছে ৪৭ হাজার ৬০৮ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ৯২২ জন। এবার ৭২ হাজার ৬০৩ জন ছাত্রীর মধ্যে পাস করেছে ৫৪ হাজার ৪২৯ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ১৭২। গতবছর থেকে ৮ দশমিক ১২ শতাংশ কমে এ বছর ছাত্র পাসের হার ৭৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। একইভাবে ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ কমে এবছর ছাত্রী পাসের হার ৭৫ দশমিক ১৯ শতাংশ।

জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে থাকা ১০ স্কুল

এসএসসি পরীক্ষার চট্টগ্রাম বোর্ডে সেরা দশটির স্কুলের মধ্যে আবারও শীর্ষে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল। এ স্কুল থেকে এবার ৪২৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৯৭ জন। পাসের হার শতভাগ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মুসলিম হাই স্কুল থেকে ৪০৪ পরীক্ষার্থীর সকলেই পাস করেছে, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩২৬ শিক্ষার্থী। তৃতীয় হয়েছে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (বাওয়া) জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৭৯ জন, চতুর্থ অবস্থানে থাকা ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৭৩ জন। এ ছাড়া নাসিরাবাদ সরকারি বালক বিদ্যালয় জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৬৫ জন, নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২৪৩জন, চট্টগ্রাম সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২৪২ জন, সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৭০ জন, বাকলিয়া সরকারি বিদ্যালয় থেকে ১৪৫ জন এবং দশম অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম ক্যান্টনম্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩৯ জন।

শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তারা জানান, এবার ১ হাজার ২৩টি স্কুলের ১ লাখ ৩৫ হাজার ৪৭৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৪৮ জন। এদের মধ্যে এক লাখ দুই হাজার ৩৭ জন পাস করেছে। এদের মধ্যে ছাত্র পাশের হার ৭৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ছাত্রী পাস করেছে ৭৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রীর সংখ্যা ৪ হাজার ১৭২ এবং ছাত্রের সংখ্যা ৩ হাজার ৯২২জন। চট্টগ্রামে কেন্দ্র সংখ্যা ছিল ১৭৯টি।

সারাবাংলা/আরডি/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন