বিজ্ঞাপন

মুফতি হারুনের জামিননামা বাতিল

April 4, 2023 | 4:57 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: হাইকোর্টের আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠার পর সন্ত্রাস বিরোধী আইনের এক মামলায় হেফাজত নেতা মুফতি হারুন ইজাহারের জামিননামা বাতিল করেছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (০৪ এপ্রিল) চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম (সিজেএম) কামরুন্নাহার রুমী এ আদেশ দিয়েছেন বলে ওই আদালতের নাজির আবু তাহের জানিয়েছেন।

সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ওই মামলায় হারুন ইজাহারকে বিচারিক আদালত অর্থাৎ সিজেএম আদালতে পাসপোর্ট জমা দেয়ার শর্তে জামিন দিয়েছিলেন। কিন্তু জামিননামা জমা দিয়ে বিচারিক আদালতে দাখিল করা অঙ্গীকারনামায় হারুন ইজাহার জানান, গ্রেফতারের সময় পুলিশ তার পাসপোর্ট জব্দ করেছিল এবং সেটা আর ফেরত দেয়নি। সিজেএম কামরুন্নাহার রুমীর আদেশে চট্টগ্রামের হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তদন্ত করে আদালতকে জানান, হারুন ইজাহারের পাসপোর্টই ছিল না।

পুলিশের ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হারুন ইজাহারের জামিননামা গ্রহণ করে রোববার (০২ এপ্রিল) কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন সিজেএম। জ্যেষ্ঠ্য আইনজীবীদের মতে, বিচারিক আদালতের এই আদেশে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার লঙ্ঘন হয়েছে। এ নিয়ে সোমবার সারাবাংলায় মুফতি হারুনের জামিননামায় হাইকোর্টের আদেশ লঙ্ঘন ! শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

বিজ্ঞাপন

সিজেএম আদালতের নাজির আবু তাহের সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেহেতু আসামি হাইকোর্টের আদেশমতে পাসপোর্ট জমা দেননি, সেজন্য তার জামিননামা বাতিলের আদেশ দিয়েছেন আদালত। কারাগারে পাঠানো জামিন সংক্রান্ত নথি আদালতের নির্দেশে ফেরত আনা হয়েছে। আদালত জামিননামার বিষয়ে হাইকোর্ট থেকে ফের আদেশ আনার জন্য আসামিপক্ষকে পরামর্শ দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেছেন।’

হেফাজতে ইসলামের সাবেক শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক হারুন ইজাহার বহুল আলোচিত চট্টগ্রামের জামেয়াতুল উলুম আল-ইসলামিয়া লালখান বাজার মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মুফতি ইজাহারুল ইসলামের ছেলে। জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বরাবর আলোচিত বাবা-ছেলে উভয়ই হেফাজতে ইসলামের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অভিযোগ আছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ প্রতিষ্ঠার পর লালখান বাজার মাদরাসায় প্রশিক্ষণ হয়েছিল এবং ইজাহারুল ইসলাম সংগঠনটির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক।

২০১৩ সালে লালখান বাজার মাদরাসায় গ্রেনেড বানানোর সময় বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে বেশকিছু গ্রেনেড ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। এরপর হারুন ইজাহারকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার বাবা পালিয়ে গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশে আসেন। মোদীর আগমনের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের ডাকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২১ এপ্রিল সন্ত্রাস বিরোধী আইনে হাটহাজারী থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় ২৯ এপ্রিল হারুন ইজাহারকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

হাটহাজারী থানার ওই মামলায় হারুন ইজাহারকে ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর জামিন দেন বিচারপতি মুস্তফা জামান ইসলাম ও মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ। আদালত জামিন আদেশে আসামিকে বিচারিক আদালতে পাসপোর্ট জমা দেয়া এবং বিচারিক আদালতের অনুমতি ব্যতীত দেশত্যাগ না করার শর্ত দেন।

চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের আদেশনামা চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এসে পৌঁছে। আসামির স্বাক্ষর ও অঙ্গীকারনামাসহ আদালতে জামিননামা দাখিল করেন হারুনের আইনজীবী। অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ আছে, ২০০৯ সালের ৪ মার্চ হারুন ইজাহারকে বিশেষ গোয়েন্দা বাহিনীর লোকজন পাসপোর্ট জব্দ করে নিয়ে যায়। সেই পাসপোর্ট আর তিনি ফেরতও চাননি এবং এর ফলে নবায়নও করা হয়নি। পাসপোর্টটির আর কোনো অস্তিত্ব নেই।

এরপর আদালতের নির্দেশে পাসপোর্টের বিষয়ে তদন্ত শেষে গত ৩০ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত দায়িত্বে হাটহাজারী সার্কেল) এবিএম নায়হানুল বারী প্রতিবেদন দাখিল করেন।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে বলা হয়, হারুন ইজাহারকে গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে পাসপোর্ট জব্দের কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে চিঠি দিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে জমা দেয়া প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, হারুন ইজাহারের জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধন নম্বর যাচাই করে তার নামে কোনো পাসপোর্ট পাওয়া যায়নি।

সিজেএম প্রতিবেদনটি গ্রহণের পর গত রোববার (২ এপ্রিল) জামিননামা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে।

সারাবাংলা/আরডি/ এনইউ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন