বিজ্ঞাপন

৩ ভাই খুন: ২০ বছর পর ধরা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান

April 8, 2023 | 1:37 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নিজ গ্রামে তিন সহোদরকে খুনের মামলার চূড়ান্ত রায়ে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। হত্যাকাণ্ডের পর গত ২০ বছর ধরে এই আসামি আত্মগোপনে ছিলেন বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) রাতে নগরীর চান্দগাঁও থানার একটি বাসায় আত্মগোপনরত অবস্থা থেকে আবুল কালামকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে র‌্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

গ্রেফতার আবুল কালাম চৌধুরীর (৭০) বাড়ি মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া গ্রামের কাজীপাড়া এলাকায়।

র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের সিনিয়র সহকারী পরিচালক নুরুল আবসার চৌধুরী সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের পরই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছিলেন আবুল কালাম চৌধুরী। গত ২০ বছর ধরে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এবং পরবর্তীতে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলার বিচার চলাকালে আত্মগোপনে থেকে তিনি গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।

বিজ্ঞাপন

মামলার নথি পর্যালোচনায় জানা গেছে, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম চৌধুরী তার ইটভাটার জন্য নিজ গ্রামের বাসিন্দা তিন সহোদর আবুল কাশেম, আবুল বশর ও বাদশা আলমের কাছে জমি চেয়েছিলেন। তিন ভাই অস্বীকৃতি জানালে তিনি ক্ষুব্ধ হন। এর জের ধরে ২০০৩ সালের ২৬ মে ইউনিয়নের চারিয়া গ্রামের আবদুল হালিমের চায়ের দোকানে আবুল কাশেমকে গুলি করা হয়। গুলিতে কাশেম লুটিয়ে পরলে আসামিরা তাকে কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়।

এদিকে গুলির শব্দ শুনে আবুল বশর ও বাদশা আলম ওই চায়ের দোকানের দিকে যাওয়ার সময় আসামিদের মুখোমুখি হন। তখন আসামিরা তাদের কুপিয়ে হত্যা করে ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে চলে যায়।

নিহত তিন সহোদরের আরেক ভাই মফজল মাস্টার হাটহাজারী থানায় ১৮ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরা হলেন- ওসমান, মঈনুদ্দিন ওরফে মহিউদ্দিন, মো. মোবারক, ইমাম উদ্দিন ওরফে মুজিব, লোকমান, আবুল কালাম চৌধুরী, শাহজাহান, জামাল ওরফে ক্যারাটি জামাল, বখতিয়ার, বেলাল, শাহ আলম, আবু রাশেদ, দৌলত, আবদুল জব্বার, আলী আকবর ওরফে সেলিম, আবুল হায়াত, আবুল কাশেম, সেকান্দার, আবুল হেসেন, ফজলুল করিম, নাসির ও নুরুল আলম ওরফে ফেদাইয়া।

বিজ্ঞাপন

এজাহারভুক্ত আসামি নুরুল আলম বিচার শুরুর আগেই মারা যান। আদালত বাকি ২১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। বিচার শেষে চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম হাসান ইমাম ২০০৪ সলের ১৮ ডিসেম্বর রায় দেয়।

রায়ে আসামি মো. মোবারক, মো. ওসমান, মঈনুদ্দিন, মো. ইমাম উদ্দিন, লোকমানকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। আবুল কালাম চৌধুরী, শাহজাহান, বখতিয়ার, বেলাল, শাহ আলম, আবু রাশেদ, ক্যারাটি জামাল ও দৌলতকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডের আদেশ দেন।

মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়। আসামিরাও বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির পর বিচারপতি শরিফ উদ্দিন চকলাদার ও বিচারপতি মো. এমাদুল হক আজাদের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৮ সালের ২০ অক্টোবর সব আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।

রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানির পর ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর হাইকোর্টের রায় পরিরবর্তন করেন সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পাঁচ আসামিকে আপিল বিভাগ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। আর ট্রাইব্যুনালে যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া আসামিদের মধ্যে বখতিয়ার ও বেলালকে খালাস দিয়ে আপিল বিভাগ আবুল কলাম চৌধুরী, আবু রাশেদ ও ক্যারাটি জামালের সাজা বহাল রাখেন।

বিজ্ঞাপন

যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া ক্যারাটি জামালকে চলতি বছরের ৫ মার্চ হাটহাজারীর চারিয়ায় নিজ গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন