May 7, 2018 | 12:41 pm
।। মো. শরিফ শেখ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।
আশুলিয়া (ঢাকা) : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিত হয়েছে যার আবেদনে তিনি ঢাকার সাভার উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজ।
রিটের বাদী সুরুজ সারাবাংলাকে জানান, তিনি গাজীপুরের ভোট স্থগিত চাননি। তিনি চেয়েছিলেন তার ইউনিয়নের যে ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হয়েছে, সেসব মৌজায় যেন ভোট স্থগিত থাকে।
রোববার (৬ মে) যে আবেদন জানিয়ে সুরুজ উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন, সেই একই আবেদন নিয়ে তিনি গত ১০ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে খালি হাতে ফেরেন। সে সময় তিনি আইনজীবী হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদকে বেছে নেন। কিন্তু সে আবেদন সেদিন উত্থাপিত হয়নি বলে খারিজ হয়ে যায়।
আর ভোটের ৯ দিন বাকি থাকতে এবার আবেদন নিয়ে সুরুজ আইনজীবী হিসেবে বেছে নেন আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমানকে। সেই সঙ্গে আবেদন করেন নতুন একটি বেঞ্চে। আর এইবার ভোটে তিন মাসের স্থগিতাদেশ আসে। সেই সঙ্গে সুরুজের ইউনিয়নের ছয় মৌজার বিষয়টিতে জারি হয় রুল।
১০ এপ্রিল সুরুজ যখন এই আবেদন করেন তখন মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হয়ে যায়নি। আর আদালত থেকে ফিরে প্রায় এক মাস আর তিনি এ নিয়ে আইনি চেষ্টা চালাননি। এর মধ্যে মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে ২৪ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দ হয়, সেই সঙ্গে শুরু হয় প্রচার। ১২ দিন প্রচার চলার পর আর বাকি ছিল ৯ দিন। এর মধ্যে সুরুজ আবার ছুটে গেলেন উচ্চ আদালতে।
গাজীপুরে নির্বাচন বন্ধ করে আপনার কী লাভ?- এমন প্রশ্নে সারাবাংলাকে সুরুজ বলেন, ‘আমি গাজীপুরের ভোট স্থগিত চাইনি। আমি চেয়েছিলাম আমার ছয়টি মৌজার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হোক। এই ছয় মৌজায় প্রায় আট থেকে ১০ হাজার ভোটার রয়েছে। এই ভোটে আমি ২০১১ ও ২০১৬ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। এই ছয় মৌজার বাসিন্দারা গাজীপুরের ভোটার না। তারা সকলে শিমুলিয়া-সাভার এলাকার ভোটার।’
রিট সম্পর্কে জানতে চাইলে সুরুজ বলেন, ‘২০১১ সালে আমি প্রথমবারের মতো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। আর ২০১২ সালে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আমি একটি মামলা করি। ২০১৩ সালের গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় আমার মামলাকে আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে আদালত। পরবর্তীতে সেটি বাতিল হয়ে যায়। আবার আমি আপিল করি কিন্তু সেটিও নাকচ করে দেয় আদালত।’
সুরুজ জানান তিনি সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং পরপর দুই বার নৌকা প্রতীক নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান।
জাহাঙ্গীর বিরক্ত, ক্ষুব্ধ হাসান
সুরুজের আবেদনে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর এই রিট আবেদন নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন গাজীপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। বিকেলে প্রচার স্থগিত করে তিনি ঢাকায় ছুটে আসেন বিস্তারিত জানতে, আলোচনা করতে। জানিয়েছেন আপিল করবেন তিনি।
সারাবাংলাকে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘জনগণের অধিকার নিয়ে মামলা করা ঠিক নয়। নির্বাচন হয়ে যাওয়া সবচেয়ে ভালো ছিল। আমি নির্বাচনের পক্ষে। এখানে লাখ লাখ মানুষ ভোট দিয়ে তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য উৎসুক হয়ে আছে।’
‘আমি আপিল করব। আমার নিশ্চিত বিজয় ঠেকানোর জন্যই এ ষড়যন্ত্র করা হয়েছে’
নির্বাচনে জাহাঙ্গীরের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার এরই মধ্যে প্রচার স্থগিত করেছেন এবং দলের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন। হাসান বলছেন, তার বিজয় নিশ্চিত জানতে পেরে ক্ষমতাসীন দলই কৌশল করে নির্বাচন স্থগিত করিয়েছে।
আজমত-সুরুজের আত্মীয়তার সম্পর্কও আলোচনায়
গাজীপুরে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে হতাশ হয়ে শুরুর দিকে হাত গুটিয়ে বসে থাকা আজমত উল্লাহ খানের ছেলের বিয়ের সূত্রে আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে সুরুজের। আর ভোট স্থগিতের পর এই বিষয়টিও সামনে এসেছে এবং এটি নিয়ে জাহাঙ্গীর ও আজমত সমর্থকরা ফেসবুকে পুরনো বিরোধে মেতেছেন।
২০১৩ সালের নির্বাচনে এখানে আজমতকে সমর্থন দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু সে সময় জাহাঙ্গীরের সমর্থকরা তার বিরোধিতা করেছেন বলে অভিযোগ আছে। আর সেই থেকে দুইপক্ষে বিরোধ চাঙ্গা।
এবার জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেওয়ার পর আজমত উল্লাহ তাকে হারাতে চাইছেন বলে তথ্য পেয়ে তাকে ফোন করে এবং পরে ডেকে নিয়ে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গাজীপুরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়ে দিয়েছেন, জাহাঙ্গীরকে ব্যক্তি হিসেবে নয়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দেখতে হবে।
দলের কেন্দ্র থেকে সতর্কতা জানানোর পর গাজীপুর আওয়ামী লীগের বিরোধ প্রকাশ্যে মিটেছিল। হাত গুটিয়ে রাখা আজমত সমর্থকরা জাহাঙ্গীরের পক্ষে প্রচারেও নামেন।
এরই মধ্যে সুরুজের সঙ্গে আজমত উল্লাহ খানের আত্মীয়তার সম্পর্ক জানাজানি হওয়ার পর গাজীপুরে চলছে নানান আলোচনা ও গুঞ্জন।
অন্যদিকে আজমত অনুসারী সমর্থকরা উল্লাস করে ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট দিয়েছেন। এ নিয়ে গাজীপুর আজমত ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকদের মধ্যকার বিরোধ আবারো প্রকাশ্যে উঠে এসেছে।
সুরুজের মেঝ ভাই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মতিউর রহমানের মেয়ে সাথীর সঙ্গে আজমত উল্লাহ খানের বড় ছেলে কামাল আজমত খান আলমগীরের বিয়ে হয়। সে হিসেবে আজমত ও সুরুজ আত্মীয়তার দিক থেকে একে অপরের বেয়াই।
তবে আজমত উল্লাহর সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্কের সঙ্গে রিট আবেদনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে সারাবাংলার কাছে দাবি করেছেন সুরুজ। বলেন, ‘আমি আমার অধিকার চেয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে আজমত উল্লাহ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,‘নির্বাচন বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। আমি একটি মিটিংয়ে আছি, প্রয়োজনে পরে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।’
সারাবাংলা/একে