বিজ্ঞাপন

ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড চুরি করে নিলেন ওআইসি’র ঢাকা শো

May 7, 2018 | 1:04 pm

।।এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনটি এবার অনেকার্থে গুরুত্বপূর্ণ থাকলেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঢাকায় এই সম্মেলনটি ছিলো অত্যন্ত সময়োপযোগী। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা তাদের বক্তৃতাগুলোতে সে কথাই বার বার বলছিলেন। সুতরাং মিডিয়ার চোখ ওআইসি সম্মেলনের ওপর ভালো করেই ছিলো।

এমন একটি সঙ্কটময় সময়ে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর পাশে বাংলাদেশ যেভাবে দাঁড়িয়েছে, তার প্রশংসাও খুব করে হয়েছে সম্মেলনে। কিছু প্রতিশ্রুতিও মিলেছে। যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তাদের অভিব্যক্তির কথাও জানিয়েছেন।

তবে গত ৫ ও ৬ মে ঢাকায় ওই সম্মেলনে সকলের এবং বলা চলে সবটুকু নজর কেড়ে নিয়েছেন একজন। তিনি কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। ওআইসি’র ইতিহাসে এই প্রথম জোটভুক্ত দেশের বাইরের একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই সম্মেলনে ভাষণ দিলেন। শুধু তাই নয় রোহিঙ্গাসহ মানবিক সঙ্কট বিষয়ে একটি অধিবেশনেও তিনি ছিলেন বিশেষ অতিথি।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা জানালেন, ওআইসির ইতিহাসে অমুসলিম দেশের কোনো নেতার সম্মেলনে অংশ নিয়ে বক্তৃতা দেয়ার ঘটনা এবারই প্রথম ঘটল।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ওই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে ৫৮টি দেশের ৬০০ জনেরও বেশি কূটনীতিক প্রতিনিধি অংশ নেন।

সম্মেলনে অংশ নেয়া একাধিক কূটনীতিকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এবারের সম্মেলনে সবার নজর ছিল কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের ওপর। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে অংশ নিচ্ছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি। সেখানে এবং পরে মানবাধিকার বিষয়ক অধিবেশনে ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের উপস্থাপনাটি ছিলো এমন যা সকলকেই রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টিকে অনেককেই অনেক গভীরভাবে ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে, এমনটাই বলছিলেন সম্মেলন সংশ্লিষ্টরা।
ক্রিস্টিয়ার বক্তব্য ছিলো মুগ্ধ হওয়ার মতো, বলেন একাধিক কূটনীতিক। যে জন্য তিনি অনেক ধন্যবাদ যেমন পেয়েছেন, পেয়েছেন বাংলাদেশের কৃতজ্ঞতাও।

মধ্যপ্রাচ্যের একজন কূটনীতিক এই প্রতিবেদককে বলেন, কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছি। কেননা আমরা মুসলমানরা মুসলমানদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে শক্ত ভূমিকা নিতে কতটা পারছি সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ, অথচ একটি অমুসলিম দেশের একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে এসে জানিয়ে দিলেন, মানবাধিকার সবার আগে, এখানে জাতি-ধর্ম কোনো বিষয় নয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, মানবাধিকার সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড যেভাবে শক্ত ভাষায় কথা বলেছেন, তা থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার রয়েছে।

তবে কেবল বক্তৃতায় ও প্রতিশ্রুতিতে কাজ সীমাবদ্ধ রাখেন নি এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেই কক্সবাজারের একাধিক রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন তিনি। সেখানে নির্যাতিতদের সঙ্গে আলাপ করেন, সময় কাটান ও সঙ্কটকে গভীরভাবে উপলব্দি করতে চেষ্টা করেন। যার প্রতিফলন পরবর্তীতে সম্মেলনে দেওয়া তার বক্তৃতায় পাওয়া যায়।

এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত ও রাষ্ট্রপতির দেয়া নৈশ ভোজেও অংশ নেন ক্রিস্টিয়া।

সম্মেলনে অংশ নিয়ে ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেন, ‘প্রয়োজনে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে কানাডা সরকার আশ্রয় দেবে। একবার ভেবে দেখুন, নির্যাতিত এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মতো যদি আমাদের ভাই-বোন এবং আত্মীয়দের অবস্থা হতো, তবে আমরা কী করতাম। আমরা কী তাদেরকে আমাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে ব্যাকুল হতাম না! রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও কানাডা সরকারের মনোভাব এমনই।’

‘রোহিঙ্গা সঙ্কট এমন একটা ইস্যু যার সমাধানে বিশ্বের সকলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত,’বলেন ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড।

বিজ্ঞাপন


এই সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোড়ালো করতে এবং মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতেই ওআইসি’র সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেন, ‘নির্যাতিত এই জনগোষ্ঠীর জন্য সুবিচার প্রত্যাশা করছি। আমাদেরকে তা নিশ্চিত করতে হবে, না হলে পৃথিবীতে আরো নারকীয় তাণ্ডব ঘটবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিষয়টি আমার কাছে অত্যন্ত পরিস্কার যে একদল জনগোষ্ঠী তাদের নিজেদের আবাসে ফিরে যেতে চায়। অথচ তাদেরকে ফিরতে দেয়া হচ্ছে না। এভাবে চলতে পারে না।’

রোহিঙ্গা নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে কানাডা সরকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেন, ‘রোহিঙ্গা নির্যাতনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে কীভাবে বিচারের আওতায় আনা যায়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। মিয়ানমার সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতেও আমরা কাজ করছি।’

ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড জানান, কানাডার প্রধানমন্ত্রীর মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত বব রায় রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে তিন দফা কক্সবাজারের একাধিক শিবির পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তিনি কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে এই সঙ্কট সমাধানে ১৭টি বিষয় প্রস্তাব করেছেন। এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে কাজ চলছে, অচিরেই তার প্রতিফলন দেখা যাবে।

তিনি বলেন, ‘কানাডা সরকার মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূতের প্রস্তাবগুলো গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। বব রায়ের প্রস্তাবগুলো কানাডা সরকার কীভাবে বাস্তবায়ন করবে, তা শিগগিরই জানানো হবে।’

সকল কিছু মিলিয়ে ওআইসি সম্মেলনে মূল আকর্ষণ ছিলেন ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। তার বক্তব্যগুলোও ছিলো সঙ্কট সমাধানের পথে আশার আলোর মতো, এমনটাই বলেছেন বাংলাদেশের কূটনীতিকরা।

সারাবাংলা/জেআইএল/এমএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন