বিজ্ঞাপন

অর্থনৈতিক মন্দা ও রমজানের প্রভাবে সাদামাটা পহেলা বৈশাখ

April 14, 2023 | 9:24 am

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনা মহামারি ও পবিত্র রমজান মাসের কারণে গত তিন বছর বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়নি। আগের তিন বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও পয়লা বৈশাখের দিনটি রমজান মাসে পড়ে যাওয়ায় সাদামাটাভাবেই পালিত হচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা ও ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এইবারও পয়লা বৈশাখে বড়ধরনের কোনো প্রস্তুতি নেই।

বিজ্ঞাপন

২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ধরা পড়ায় ওই বছরের ২৫ মার্চ থেকে শুরু হয় দেশব্যাপী লকডাউন। আর এই লকডাউনে কারণে পহেলা বৈশাখের কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। ২০২১ সালেও করোনাভাইরাস ও রমজানের প্রথম দিনে পয়লা বৈশাখ হওয়ায় ওই বছরের কোন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও ২০২২ সালে পয়লা বৈশাখে রমজান থাকায় খুবই সাদামাটাভাবে দিবসটি উদযাপিত হয়। চলতি ২০২৩ সালেও ২২ রমজানের দিন পহেলা বৈশাখ হওয়ায় আগের বছরের ধারাবাহিকতায় সাদামাটাভাবেই পালিত হচ্ছে বৈশাখী উৎসব। তবে প্রাণের এই উৎসবটির ঐতিহ্য ধরে রাখতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ও বাংলা একাডেমি যৌথভাবে বৈশাখী মেলাসহ নানা ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

এ ব্যাপারে বিসিক পরিচালক (বিপণন, নকশা ও কারুশিল্প) মো. আবদুল মতিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে পবিত্র রমজানে মাসে উদযাপিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। এছাড়াও করোনা মহামারির কারণেও ২০২০ ও ২০২১ সালে এই উৎসবে পালনে কিছুটা বিধিনিষেধ ছিল। অন্যদিকে ২০২২ সালে রমজানে হলেও বিসিক পহেলা বৈশাখে নানা ধরনের আয়োজন করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিসিক ও বাংলা একাডেমি’র যৌথ উদ্যোগে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০ দিনের ‘বৈশাখী মেলা-২০৩০’ আয়োজন করেছে। ১৪ এপ্রিল মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ূন মাহমুদ। মেলায় বিসিকের নিবন্ধনকৃত ৮৮টি স্টল থাকবে। এসব স্টলে নানা ধরনের কারুশিল্প, হস্ত কুটির শিল্প তথা বাঙালির গ্রামীণ ঐতিহ্যহের নানা ধরনের পণ্যের সমাহার দেখা যাবে।’

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, বাংলা একাডেমির সচিব (যুগ্মসচিব) এ. এইচ. এম লোকমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বাংলা একাডেমিতে ১০ দিনের মেলার আয়োজন ছাড়াও বৈশাখকে কেন্দ্র করে বেশকিছু কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কবিতা পাঠের আসর ও আলোচনাসভা।’

জানা গেছে, এবার ঈদুল ফিতর ও পয়লা বৈশাখ পাশাপাশি সময়ে হওয়ায় উৎসবটিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ঈদ কেনাকাটার পাশাপাশি নানান ধরনের দেশীয় পোশাক, খাবার, হস্তশিল্পজাত গয়নাগাটি, ফুল ইত্যাদি বড় পরিসরে কেনাবেচার একটি প্লাটফরম পহেলা বৈশাখ। কিন্তু ২০২০ সালের আগে প্রতি বছর এই উৎসবকে ঘিরে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হতো। বছরে কয়েক আগেও হাজার কোটি টাকার কেনাকাটা হতো। কিন্তু বর্তমানে সেই পরিস্থিতি আর নেই। করোনভাইরাস আর রমজানের কারণে গত চার বছর ধরে এই উৎসবটি অনেকটা সাদামাটাভাবেই উদযাপিত হচ্ছে।

পহেলা বৈশাখে বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, হয় উজ্জীবিত। এক সময় পহেলা বৈশাখে দেশীয় কুটির শিল্পের একটি বড় বাজার তৈরি হতো। সেইসঙ্গে নানান ধরনের দেশীয় পোশাক, দেশীয় খাবার, হস্তশিল্পজাত গয়নাগাটি, ফুল, ইত্যাদি বড় পরিসরে কেনাবেচার হতো বৈশাখী উৎসবে।

বিজ্ঞাপন

বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ ঘিরে বাজারকেন্দ্রিক উৎসবের চিত্র বাঙালির কাছে পুরনো। নববর্ষকে ঘিরে মাটির হাড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে পোশাক, মুড়িমুড়কি, নাড়ু, মিষ্টি, ইলিশের বাজারসহ সবখানেই সাজ সাজ রব পড়ে যায়। এসব আয়োজন ঘিরে চাঙা হয়ে ওঠে গ্রামীণ অর্থনীতি। এ যেন বাংলার চিরচেনা রূপ। কিন্তু করোনা মহামারি ও পবিত্র রমজানের কারণে গত তিন বছর ছিল অনেকটা মলিন।

জানা গেছে, প্রতিবছর বৈশাখকে কেন্দ্র করে প্রায় ১০/১২ হাজার কোটি টাকার দেশীয় বাঁশ, বেত, কাঠের তৈরি জিনিস, মাটির তৈজসপত্র, মাটির ও প্লাস্টিকের খেলনা, বিভিন্ন ধরনের মুড়িমুড়কি, নাড়ু বিক্রি হতো। বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে ইলিশের বেচাকেনা কয়েক হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও নববর্ষের দিন মিষ্টির দোকানগুলোয় বিক্রির পরিমাণ প্রায় তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকার। বাংলা নববর্ষে কেবল পোশাকই বিক্রি হয় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার। সব মিলিয়ে বাংলা নববর্ষকে ঘিরে অর্থনীতির পরিমাণ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। কিন্তু গত তিন বছর বাংলা নববর্ষকে ঘিরে থাকা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেকটাই ভাটা পড়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে গত তিন বছর বর্ষবরণের উৎসব হয়নি। এছাড়াও গত বছর করোনা না থাকলেও রোজা থাকায় পহেলা বৈশাখের কোনো উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি। এই বছরও তার কোনো ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ফলে এবারও পয়লা বৈশাখ নিয়ে আমাদের বাড়তি কোন প্রস্তুতি নেই।’

তিনি বলেন, ‘এবার পহেলা বৈশাখ আগের তিন বছরের তুলনায় পরিস্থিতি আরও খারাপ। প্রথম কারণ হলো পবিত্র রমজানে পহেলা বৈশাখ। দ্বিতীয়ত, চলতি বছর মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। ফলে বাড়তি বেচাকেনার সুযোগ নেই। ফলে বৈশাখ ঘিরে অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখছি না। মন্দার কারণে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। ক্ষতি সামলে ওঠার চেষ্টা করছেন তারা। তারা এখন ব্যবসার পাশাপাশি জীবন বাঁচানোরও চেষ্টা করছেন।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/রমু

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন