বিজ্ঞাপন

ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে অধ্যক্ষ বরখাস্ত

April 16, 2023 | 8:59 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম বন্দর মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সেলিনা আক্তার শেলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার পক্ষে অবস্থান নিয়ে এই শিক্ষিকার দেওয়া ফেসবুকের স্ট্যাটাসে রমজানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে বলে মনে করছে কলেজ পরিচালনাকারী চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৬ এপ্রিল) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মো. মমিনুর রশিদ সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করেন।

চট্টগ্রাম বন্দর মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সেলিনা আক্তার শেলীকে সাময়িক বরখাস্তের পর পৃথক আদেশে একই কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মর্জিনা খানমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মো. মমিনুর রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেলিনা আক্তার শেলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কী কারণে বরখাস্ত করা হয়েছে, সেটি আদেশে উল্লেখ আছে। এর বাইরে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’

বিজ্ঞাপন

বন্দর কর্তৃপক্ষের আদেশে বলা হয়, ফেসবুকে পবিত্র রমজান মাসের আরবি উচ্চারণ ‘রামাদানকে’ কটাক্ষ করে পোস্ট দিয়েছেন সেলিনা আক্তার শেলী। সেই পোস্টের মন্তব্যে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য মানুষ তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। পোস্টের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভেতর ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। বন্দর এলাকায় মিছিল-সমাবেশসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ আরও বলছে, ফেসবুকে সেলিনা আক্তার শেলীর এই কর্মকাণ্ড ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮ ও ৩১ ধারায় দণ্ডযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নীতিমালার ৬ (২) ও ১০ বিধির সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ চাকুরি প্রবিধানমালা, ১৯৯১ এর ৩৯ (খ) মোতাবেক সুষ্পষ্ট অসদাচরণ ও গুরুদণ্ডযোগ্য অপরাধ।

একই আদেশে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ চাকুরি প্রবিধানমালা, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় সেলিনা আক্তার শেলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজুর পাশাপাশি সাময়িকভাবে তাকে বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার সাময়িক বরখাস্তের আগে আরেকটি আদেশে সেলিনা আক্তার শেলীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশনা দিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। একই আদেশে ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মর্জিনা খানমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে মর্জিনা খানম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশনা দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আগে যিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, উনাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে আমি শুনেছি। তবে এসব বিষয়ে কথার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাকে নিষেধ করেছে।’

শিক্ষকতার বাইরে সেলিনা আক্তার শেলী মূলত একজন কবি। লেখালেখি ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠক হিসেবে তিনি সুপরিচিত।

পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে আইনজীবীর নোটিশ, হাইকোর্টে রিট, হুমকিধমকির মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন সেলিনা আক্তার শেলী। তিনি মঙ্গল শব্দকে ‘হিন্দুয়ানি’ হিসেবে উল্লেখ করার বিরোধিতা করেন। একই প্রসঙ্গে তিনি ‘রামাদান’ শব্দটি উল্লেখ করে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন।

বিজ্ঞাপন

এরপর থেকে সেলিনা আক্তার শেলীকে ওই পোস্টে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছবি বিকৃত করে আক্রমণাত্মক পোস্ট দেওয়া শুরু হয়। একাধিক পোস্টে তাকে শারীরিকভাবে আঘাতের হুমকিও দেওয়া হয়। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় তিনি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিস্ক্রিয় করে দেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য সেলিনা আক্তার শেলীর মোবাইলে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন