বিজ্ঞাপন

তাপদাহের বাগড়ার মধ্যেও স্বস্তি নিয়েই চট্টগ্রাম ছাড়ছে মানুষ

April 20, 2023 | 9:28 pm

ইমরান চৌধুরী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : ঈদযাত্রা মানে মানুষের কোলাহল, ঠেলাঠেলি, বাসে-ট্রেনে ভিড়, যানবাহনের জন্য হাহাকার- দুর্ভোগের এমন চিত্রই নিয়মিত চোখে পড়লেও এবার বদলে গেছে সেই চিত্র। এবারের ঈদযাত্রা অনেকটাই আনন্দ আর স্বস্তির। ট্রেনের সূচিতে কিছুটা গড়বড় হলেও ভিড় তেমন নেই। সড়ক-মহাসড়কেও নেই যানবাহনের চাপ। তবে স্বস্তির মধ্যেও বাগড়া দিচ্ছে তীব্র তাপদাহ।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম শহরের ইট-কংক্রিটের জঞ্জাল ছেড়ে গ্রামগঞ্জে বাড়ির পথে ছুটছে মানুষ। শুক্রবার (২১ এপ্রিল) চাঁদ দেখা গেলে শনিবার ঈদুল ফিতর। এবার ঈদের লম্বা ছুটি পেয়েছেন কর্মজীবীরা। ২৯ রোজা ধরে ২২ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণ করে ছুটির তালিকা তৈরি করেছে সরকার। এরইমধ্যে ১৯ এপ্রিল শবে কদরের ছুটি, শেষ মুহুর্তে ২০ এপ্রিলও নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষিত হওয়ায় টানা পাঁচদিনের বন্ধ ঈদের। আর ঈদের অন্তত তিনদিন আগে থেকে বন্ধ শুরু হওয়ায় এবারের ভাগে ভাগে শহর ছেড়েছে মানুষ।

বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনযাত্রায় ভোগান্তির চিত্র তুলনামূলক কম দেখা গেছে। চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন রুটে যাচ্ছে বিশেষ ট্রেনও। রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ট্রেনে অন্তত ১২ হাজার যাত্রী চট্টগ্রাম ছেড়ে যাচ্ছেন। এর অর্ধেকেরও কম যাত্রী চট্টগ্রামে আসছেন।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার ট্রেনে তেমন ভিড় নেই। বিনা টিকিটের যাত্রী ঠেকাতে মোবাইল কোর্ট বসানো হয়েছে। স্টেশন প্ল্যাটফর্মে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ঈদযাত্রাযটা যেন স্বস্তির হয়, সবাই একযোগে কাজ করছে।’

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে দেখা গেছে, মেঘনা এক্সপ্রেসে চাঁদপুর যেতে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে স্টেশনে প্রচুর মানুষ ভিড় করেছেন। তাদের অনেকেরই টিকিট ছিল না। দাঁড়িয়ে থাকা টিকিটের (স্ট্যান্ডিং টিকিট) আশায় আসলেও সবার ভাগ্যে জোটেনি। টিকিট ছাড়া স্টেশন কাউন্টার এলাকা থেকে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে চাইলে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী বাধা দেয়। এ সময় যাত্রীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এরপর টিকিট দেখে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় যাত্রীদের। এছাড়া যারা আগে অনলাইনে টিকিট কেটেছেন, তাদেরও সিট পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেসের যাত্রী শাহাদাত হুসেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে থেকে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে যাব, তাই টিকিট কেটে রেখেছিলাম। ট্রেনে উঠে দেখছি সেই সিটগুলোতে অন্যরা বসে আছে। বললেও উঠছে না। পরে গার্ডকে ডেকে চিৎকার-চেঁচামেচি করে তাদেরকে উঠাতে হয়েছে। একটি কোচের সিটের তিনগুণ টিকিট বিক্রি করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে স্টেশন মাস্টার জাফর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবারই মেঘনা এক্সপ্রেসে যাত্রীদের প্রচুর ভিড় থাকে। আর স্ট্যান্ডিং টিকেট আমরা ২৫ শতাংশ ছেড়েছি। সেগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমরা আর টিকিট বিক্রি করিনি। যারা টিকিট পায়নি তারা বিনা টিকিটে প্লাটফর্মে ঢুকতে চেয়েছিল। তখন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীরা তাদের বাধা দেয়।’

বিকেল পাঁচটায় ঢাকাগামী সোনার বাংলা ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। বিকেল সাড়ে পাঁচটায়ও ট্রেন প্লাটফর্মে আসেনি। রাসেল সরকার নামে এক যাত্রী সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্লাটফর্মে এসেছি সাড়ে চারটার দিকে। পাঁচটার দিকে ট্রেন ছাড়ার কথা থাকলেও এখনো ট্রেন আসেনি। এখানে অনেক মানুষ। তার ওপর গরম। বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’

স্টেশন মাস্টার জাফর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘রেলওয়ে ইয়ার্ড থেকে নতুন কোচ লাগিয়ে আনতে গিয়ে লাইনচ্যুত হয়ে যায় একটি কোচ। সে জন্য একটু বিলম্ব হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

মহাসড়কের বিড়ম্বনা এড়াতে এবারও ট্রেনের ওপর চাপ ছিল বেশি। তবে সেই মহাড়কেই এবারের যাত্রা অনেকটাই নির্ঝঞ্ঝাট। ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, পার্বত্য এলাকামুখী সড়ক, আঞ্চলিক সড়কগুলোতেও খুব বেশি চাপের খবর পাওয়া যায়নি। তবে প্রবেশমুখ, বাসস্টেশনগুলো লোকে-লোকারণ্য দেখা গেছে।

মহাসড়কের বিড়ম্বনা এড়িয়ে কিছুটা ঝামেলা মুক্তভাবে বাড়ি ফিরতে সকাল থেকে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে বাড়তে থাকে ভিড়। শেকড়ের টানে বাড়ি ফেরা এসব যাত্রীরা নির্ধারিত সময়ের আগেই অবস্থান নেন স্টেশনে। স্বজনদের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফেরার আনন্দে খুশি ছোটরাও। একই অবস্থা বাস স্টেশনেও। সকাল থেকে লোকে লোকারণ্য।

কদমতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল, স্টেশন রোডের বিআরটিসি স্টেশন, বহদ্দারহাট, নতুন ব্রিজ এলাকা, অক্সিজেন, একে খান, গরিবুল্লাহ শাহ মাজার গেইটে দূরপাল্লার এসি বাস কাউন্টার এবং অলঙ্কার মোড়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় লেগেছিল। বিকেলের পর থেকে এই ভিড় আরো বাড়তে থাকে। বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল, কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতুর প্রান্তেও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের ভিড় ছিল।

আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির মহাসচিব কফিল উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, দূরপাল্লার বাসের কোনো সংকট নেই, টিকিটেরও কোনো সংকট নেই। প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০টি রুটে চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৬০০ বাস যাচ্ছে। ৪০ থেকে ৫০ হাজার যাত্রী প্রতিদিন চট্টগ্রাম ছাড়ছেন। প্রতিদিন ২০ হাজারের মতো আসছেন শহরে।

এদিকে ঈদযাত্রায় চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার ব্যতিক্রমী কর্মসূচি শুরু করেছে হিউম্যান-২৪ নামে একটি সংগঠন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষার্থীদের চট্টগ্রামের হালিশহর থেকে বাসযোগে সীতাকুণ্ডের কুমিরা নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সার্ভিস বোটে তাদের সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া পাঠানো হয়।

শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে নৌ-পারাপারের এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এম শফিকুল আলম। কুমিরা ঘাটে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ শোয়েব উদ্দিন হায়দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী সাংবাদিক সালেহ নোমান, উদ্যোক্তা কাজী জিয়া উদ্দিন সোহেল, সন্দ্বীপ ইয়ূথ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল মাওলা, সন্দ্বীপ এডুকেশন সোসাইটির সাবেক সেক্রেটারি মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন, অধ্যাপক শাহীন ইব্রাহিম, খাদেমুল ইসলাম, আজিজুর রহমান বক্তব্য রাখেন।

নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে শুক্রবারও একইভাবে সন্দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হবে বলে সাংবাদিক সালেহ নোমান জানিয়েছেন।

সারাবাংলা/আইসি/আরডি/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন