বিজ্ঞাপন

বিশ্বকবির জন্মজয়ন্তী আজ

May 8, 2018 | 8:25 am

।। সারাবাংলা প্রতিবেদক ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: আজ পঁচিশে বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৭তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম এই রূপকার। দিবসটি পালনে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, সংস্থার পক্ষ থেকে দিনব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক বাণীতে বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ বাঙালির চিন্তা-চেতনা ও মননের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছেন। বাঙালির সুখ-দুঃখ, আবেগ-ভালোবাসা, আশা-আকাঙ্ক্ষাসহ এমন কোনো অনুভূতি নেই যা রবীন্দ্রনাথ স্পর্শ করেননি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের একজন দিকপাল, উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার কালজয়ী লেখায় একদিকে ঋদ্ধ হয়েছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, অন্যদিকে তা বিশ্বসাহিত্যের অপরিহার্য উপাদানে পরিণত হয়েছে আপন বৈভব, আঙ্গিক, বহুমাত্রিকতা আর সর্বজনীনতায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে বলেছেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ বাঙালির ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের উজ্জ্বল বাতিঘর। বাংলা ও বাঙালির অহংকার, বিশ্বসাহিত্যের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। অসাধারণ সব সাহিত্যকর্ম দিয়ে তিনি (রবীন্দ্রনাথ) বিস্তৃত করেছেন বাংলা সাহিত্যের পরিসর। কালজয়ী এ কবি জীবন ও জগৎকে দেখেছেন অত্যন্ত গভীরভাবে, যা তার কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ ও ভ্রমণকাহিনী, সংগীত ও চিত্রকলায় সহস্রধারায় উৎসারিত হয়েছে। শান্তি ও মানবতার কবি রবীন্দ্রনাথ ছিলেন প্রকৃতির চিরন্তন সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যের সাধক। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে তিনি বিশ্ব দরবারে বাংলা সাহিত্যকে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করেছেন।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমিতে সোমবার (৭ মে) বিকেলে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালায় কবিগুরুর ওপর আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বেসরকার টিভি চ্যানেল-আই দিনব্যাপী রবীন্দ্র মেলার আয়োজন করেছে। এ ছাড়া জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সংস্থা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি উদযাপনের কর্মসূচি নিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উদ্যোগে আজ বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি মিলনায়তনে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বরীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদযাপনে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্মে শিলাইদহের প্রভাব’। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সভাপতিত্ব করবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন। দীর্ঘ রোগভোগের পর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী বিশ্বকবি ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।

বিজ্ঞাপন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতিলাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে।

১৮৭৮ সালে কবিগুরুর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবিকাহিনী’ প্রকাশিত হয়। এ সময় থেকেই কবির বিভিন্ন ঘরানার লেখা দেশ-বিদেশে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পেতে থাকে। ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘গীতাঞ্জলী’। এই বইয়ের জন্য কবি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন কবি। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। কবি বিশ্বভ্রমণ করেন ১২ বার। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৌলিক কাব্যগ্রন্থ ২৫টি। তবে সংগীতেও বাঙালি সমাজে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি দুই হাজার গান রচনা করেন। অধিকাংশ গানে সুরারোপ করেন। তার সমগ্র গান ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে রয়েছে। কবির লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। ভারতের জাতীয় সংগীতটিও কবির লেখা।

বিজ্ঞাপন

জীবিত অবস্থায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রকাশিত মৌলিক কবিতাগ্রন্থ ৫২টি, উপন্যাস ১৩, ছোটগল্প’র বই ৯৫টি, প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ ৩৬টি, নাটকের বই ৩৮টি। কবির মত্যুর পর ৩৬ খণ্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ প্রকাশ পায়। এ ছাড়া ১৯ খণ্ডে রয়েছে ‘ রবীন্দ্র চিঠিপত্র’। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত কবির আঁকা চিত্রকর্মের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ১৫৭৪টি চিত্রকর্ম শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে। কবির প্রথম চিত্র প্রদর্শনী দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উদ্যোগে ১৯২৬ সালে প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়।

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন