বিজ্ঞাপন

লাখ টাকায় বিপ্লব উদ্যান ইজারা, ক্ষোভ-হতাশা মেয়র রেজাউলের

April 30, 2023 | 8:06 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : সৌন্দর্যবর্ধনের নামে চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক বিপ্লব উদ্যানের ক্ষতি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ইজারাদাররা সেখানে দোকান বসিয়ে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছে। অথচ সিটি করপোরেশন বছরে মাত্র লাখ টাকায় ঐতিহাসিক এই স্থান ২৫ বছরের জন্য ইজারা দিয়েছে। দোকান বসিয়ে বিপ্লব উদ্যানের ইজারা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

রোববার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ষষ্ঠ পরিষদের ২৭তম সাধারণ সভায় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর দেওয়া এ বক্তব্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। মেয়র রেজাউলের আগে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা খোরশেদ আলম সুজনও বিপ্লব উদ্যানের ইজারায় ‘অনিয়ম’ নিয়ে সরব হয়েছিলেন।

সভায় মেয়র আরও বলেন, ‘আমি বিপ্লব উদ্যানের ব্যবসায়ীদের বলেছি, ব্যবসা করতে হলে বিপ্লব উদ্যানের ইতিহাস-ঐতিহ্য সমুন্নত রেখেই করতে হবে। সেখানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের জাদুঘর গড়ে তুলতে হবে। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর সৌন্দর্যবর্ধনের নামে করপোরেশনের ভূমি ইজারা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছি।’

সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে নগরীর প্রাণকেন্দ্র ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকায় বিপ্লব উদ্যান ও এর চারপাশের ফুটপাতসহ প্রায় এক একর জমি ২০ বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয়। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ঢাকার রি ফর্ম লিমিটেড এবং চট্টগ্রামের স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্টস লিমিটেড নামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে এ জমি বরাদ্দ দেয় চসিক।

বিজ্ঞাপন

২০১৮ সালের ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া এই চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কোনোরকম ‘সৌন্দর্যহানি না করে’ ২৫টি স্টল, ২৫টি ডিজিটাল স্ক্রিন, যাত্রী ছাউনি, পাবলিক টয়লেট, ওয়াকওয়ে, আলোকায়ন, ম্যুরাল, বসার স্থান, গ্লাস টাওয়ার, ফোয়ারা, স্কাল্পচার নির্মাণ করবে। রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার ব্যয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই বহন করবে এবং সিটি করপোরেশনকে বছরে এক লাখ টাকা কর দেবে। পাশাপাশি ডিজিটাল স্ক্রিনগুলোর জন্য সরকার নির্ধারিত হারে কর দেবে।

এই চুক্তি ও বিপ্লব উদ্যানের মতো ঐতিহাসিক স্থাপনা বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে তখনই প্রতিবাদ করেছিলেন নাগরিকরা। কিন্তু সিটি করপোরেশন তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে।

বিজ্ঞাপন

২০২০ সালের আগস্টে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে খোরশেদ আলম সুজন দায়িত্ব নেয়ার পর চুক্তির শর্তভঙ্গের অভিযোগে বিপ্লব উদ্যানে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ ও দোকান চালু স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। চুক্তির শর্ত ভেঙে ১৫০ বর্গফুটের বদলে ২০০ বর্গফুটের দোকান, এক তলার পরিবর্তে দ্বিতল অবকাঠামো এবং নকশা বর্হিভূতভাবে নির্মিত স্থায়ী বসার আসন গুঁড়িয়ে দিয়েছিল সিটি করপোরেশন। তবে পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে সেগুলো আবার চালু হয়।

এদিকে সভায় খেলার মাঠ ও জলাশয় রক্ষা করতে না পারা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল অভিযোগ করব, শিশুরা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে করতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, অথচ তাদের জন্য খেলার মাঠ রাখব না তাহলে তো কোনো সমাধান হলো না। আমি প্রতিটি ওয়ার্ডে পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছি, যাতে শিশুরা খেলতে পারে, বয়স্করা অবসরে হাঁটতে পারে। জেলা প্রশাসন ও রেলওয়েকে তাদের ভূমিতে খেলার মাঠ ও পার্ক করার জন্য আমাদের দিতে প্রস্তাব দিয়েছি।’

‘মেয়রের পদে বসেই আমি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে আগ্রাবাদ ঢেবা ও পাহাড়তলি জোড় ঢেবা সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য সিটি করপোরেশনকে দিতে বলি। কিন্তু রেলওয়ের কাছ থেকে সহযোগিতা পাইনি, সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। আমি বলেছি, ভূমির মালিকানা সিটি করপোরেশনকে দিতে হবে না, আমাকে শুধু ভূমি দিন আমি করপোরেশনের অর্থে পার্ক-মাঠ গড়ে দেবো। রাণীর দিঘীকে দখলের হাত থেকে বাঁচানো গেলেও এখনও ষড়যন্ত্র চলছে।’

বিজ্ঞাপন

সভাপতির বক্তব্যে মেয়র আরও বলেন, ‘আমরাই সুন্দর চট্টগ্রামকে হীনস্বার্থে বসবাসের অনুপযোগী করে ফেলছি। আমরা শুধু বস্তুগত উন্নয়ন নিয়ে ভাবছি, নাগরিকদের জীবনমান আর পরিবেশের ভারসাম্যের কথা ভাবছিনা। আজ ওয়াসার লবণাক্ত পানির জন্য মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। পলিথিন, প্লাস্টিকের কারণে কর্ণফুলী নদী মৃত্যুর মুখে। কর্ণফুলী না বাঁচলে চট্টগ্রাম বাঁচবে না। আগামী তিন মাসের মধ্যে পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে কঠোর অভিযানে নামবো। নদী থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের পাশাপাশি পুনর্দখল রোধেও পদক্ষেপ নেব।’

সিটি করপোরেশনের আয় দিয়েই নগরীর আন্দরকিল্লায় ২১ তলা নগর ভবন নির্মাণের কাজ মে মাসে শুরু হবে বলে জানান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

সভায় আমন্ত্রিত হয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট চট্টগ্রামের ওপর একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন।

সভায় প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাসহ চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন