বিজ্ঞাপন

কেন বৈশাখের তীব্র গরমেও দেখা মিলছে কুয়াশা’র

May 2, 2023 | 10:50 am

রাজনীন ফারজানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বেশ কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সকালে কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। বৈশাখ মাসে একদিকে তীব্র গরম, অন্যদিকে সকালে কুয়াশা দেখে অনেকেই বিস্মিত হচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুয়াশার ছবি পোস্টও করছেন কেউ কেউ।

বিজ্ঞাপন

তবে দেখতে যতই অস্বাভাবিক লাগুক, বৈশাখের তীব্র গরমের মধ্যে সকালের কুয়াশাকে আবহাওয়াবিদরা স্বাভাবিক বলছেন। এমনকি এটি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঘটছে বলেও মনে করছেন না তারা।

গত ১৮ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নড়াইলের বাঁশগ্রামে সকালে দেখা যাওয়া কুয়াশার ছবি পোস্ট করেন একজন ব্যবহারকারী। এছাড়া ২৩ এপ্রিল সমুদ্রনগরী কক্সবাজারের দুটো ছবিতে বেশ ঘন কুয়াশা দেখা যায়। অন্যদিকে ২৬ এপ্রিল সকালে রংপুরের পীরগঞ্জের একটি ছবিতেও কুয়াশা দেখা যায়।

১৮ এপ্রিল নড়াইলের বাঁশগ্রামে সকালে দেখা যাওয়া কুয়াশা

১৮ এপ্রিল নড়াইলের বাঁশগ্রামে সকালে দেখা যাওয়া কুয়াশা

গত ১৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের গাইবান্ধা ও দিনাজপুর ছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস মানু। ‘ঝটিকা সফর’ নামের ভ্রমণ বিষয়ক গ্রুপের কর্ণধার একটি গ্রুপ নিয়ে সেখানে ছিলেন। ভোররাতে ও সকালে মাঝারি কুয়াশা ও সন্ধ্যায় শিশির দেখেছেন সেসব এলাকায়। জানালেন, ১৭ থেকে ২০ এপ্রিল তীব্র গরম ছিল। এরপর ২১ তারিখ থেকে তাপমাত্রা অনেকটাই কমে যায় যা রাতে প্রায় শীতকালের অনুভূতি এনে দেয়। বৈশাখ মাসে এমন কুয়াশা দেখে অবাক হয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

বৈশাখ মাসে কুয়াশা অস্বাভাবিক কিনা জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ মো. শাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘একে অস্বাভাবিক বলা যাবে না। সাধারণত তিন রকম কুয়াশা হয়, হেইয (haze), মিস্ট (mist) ও ফগ (fog)। মূলত শেষেরটিকেই আমরা কুয়াশা হিসেবে বলে থাকি। বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বাড়লে জলীয়বাষ্প বাতাসে ঘনীভূত হয়ে ভূপৃষ্ঠের খুব কাছাকাছি থাকে যাকে আমরা কুয়াশা আকারে দেখি। বৃষ্টির সময় দৃশ্যমানতা কমে যায় যা ঘটে মূলত হেইযের জন্য। আর মিস্ট হলে সাধারণত ১ থেকে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত জিনিস দেখা যায়। আর ফগের কারণে ১ হাজার মিটার বা তার থেকে কম দূরের জিনিস দেখা যায়।’

এই ফগও আবার হালকা, মাঝারি ও ঘন তিন রকমের হয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এলাকাভিত্তিক আবহাওয়ার ধরনের উপর নির্ভর করে হেইয, মিস্ট নাকি ফগ হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে তীব্র গরমের মধ্যে যে কুয়াশা দেখা যাচ্ছে সেটি একধরণের ফগ। দিনের বেলায় প্রচণ্ড তাপে জলীয়বাষ্প উৎপাদন হয়ে সেটি আকাশে উঠে যাচ্ছে বা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। আবার রাতে যখন তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে তখন এটি বৃষ্টি বা কুয়াশা আকারে ঝরে পড়ছে। তাপমাত্রা বেশি থাকলে বায়ুচাপ কম থাকে তাই দিনের বেলা এটি দেখা যায় না। কিন্তু রাতে বা সকালে তাপমাত্রা কমলে ও রাতে আকাশ পরিষ্কার থাকলে তাপমাত্রা আরও ছেড়ে দেয় ফলে তখন জলীয়বাষ্প জমে ভোররাতে ও সকালে কুয়াশার মত দেখা গেছে।’

গত ২৩ এপ্রিল সকালবেলা সমুদ্রনগরী কক্সবাজারের দৃশ্য

গত ২৩ এপ্রিল সকালবেলা সমুদ্রনগরী কক্সবাজারের দৃশ্য

পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ‘বৈশাখে কুয়াশা দেখা যাওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘটছে, এমন না। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের ঋতুগুলোর স্বাভাবিক আচরণ বদলে যাচ্ছে। যেমন যখন কালবৈশাখী হওয়ার কথা তখন না হওয়া, যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা তখন না হয়ে অন্যসময়ে হওয়া। বর্তমানে গ্রীষ্মকালে যে কুয়াশা দেখা যাচ্ছে তা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য নয়, গরমের কারণে ঘটছে। কুয়াশা আসলে বৃষ্টির একটি ধরন। মেঘ আর কুয়াশা একই জিনিস। বর্তমানে তীব্র গরমের জন্য জলীয়বাষ্প বাড়ে। সারাদিন প্রচণ্ড গরম থাকলেও রাত এগারোটা-বারোটা থেকে ঠাণ্ডা হতে শুরু করে যা ভোরবেলা বেশ কমে যায়। এতে আর্দ্রতা জমে যার প্রকৃতি বৃষ্টির মত। বাতাস না থাকায় ও যেখানে জলাভূমি বেশি সেসব জায়গায়। জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে কুয়াশার মত জমছে। বৃষ্টির ফোটাগুলো একটু বড় হলে উপরে উঠে পানির মতো নেমে আসে।’

বিজ্ঞাপন

শীতকালে রাতে ও দিনে যে কুয়াশা দেখা যায় তার সঙ্গে বর্তমানে বৈশাখে দেখা যাওয়া কুয়াশার কোন পার্থক্য নেই বলেই মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। এর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি সংযোগ নাকচ করে দিয়েছেন তারা।

সারাবাংলা/আরএফ/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন