বিজ্ঞাপন

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে যাত্রী কল্যাণ-বিএআরটিএ’র ভিন্ন তথ্য

May 9, 2023 | 7:25 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: এবার ঈদযাত্রায় সারাদেশে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি ও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। যদিও উভয় প্রতিষ্ঠান তাদের তথ্যকে ‘সঠিক’ ও ‘বস্তুনিষ্ঠ’ বলছে। তবে বিআরটিএ বলছে, যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যে ভুল রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে সোমবার (৮ মে) বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বিআরটিএর সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনটি পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। একইসঙ্গে বিআরটিএ’র প্রতিবেদনে ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতদের সংখ্যা কম দেখানোয় তা প্রশ্নবিদ্ধ বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।

গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, এবারের ঈদযাত্রায় ১৫ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ৫৬৫ জন আহত হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংগঠনটি। প্রতিবেদন প্রকাশের পর ৩ মে বিআরটিএর পক্ষ থেকে যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন ‘অবাস্তব’ ও ‘কাল্পনিক দাবি’ করে সংগঠনটির কাছে প্রতিবেদনের বিস্তারিত চেয়ে চিঠি দেয়।

চিঠিতে একই সময়ে বিআরটিএর সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনের চেয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৫১টি, নিহত ৮৯ জন, আহত ৫৫ জন বেশি কেন হয়েছে ব্যাখ্যা দাবি করে বিআরটিএ। এই বিষয়টি বিশ্লেষণের জন্য বিআরটিএর প্রস্তুতকৃত এপ্রিল মাসের ১ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত দিন ভিত্তিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনের বিস্তারিত তথ্যাদি যাত্রী কল্যাণ সমিতির কাছে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনটি পাওয়া গেলে বিশ্লেষণের পর পরই দ্রুততম সময়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির ঈদযাত্রার সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনের বিস্তারিত তথ্য বিআরটিএর কাছে জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির চিঠিতে বলা হয়, বিআরটিএ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন তৈরি করে মাস ভিত্তিক প্রকাশ করছে। পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিআরটিএর প্রতিবেদনের সঙ্গে পুলিশের প্রতিবেদন বা বেসরকারি কোনো সংগঠনের প্রতিবেদনের মিল নেই।

এ বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রাব্বানী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখনও কোনো চিঠি পায়নি বিআরটিএ।’

বিজ্ঞাপন

বিআরটিএ থেকে সড়ক দুর্ঘটনার যে রিপোর্ট দেওয়া হয় তা যাচাই-বাছাই করে দেওয়া হলেও যাত্রী কল্যাণ সমিতি যাচাই-বাছাই না করেই রিপোর্ট দেয় বলে দাবি করেন তিনি। এ সময় শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রাব্বানী জানান, তারা পুলিশ ও ৮ থেকে ১০টি পত্র-পত্রিকার তথ্য যাচাই করে রিপোর্ট তৈরি করেন।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিআরটিএ জানতে চেয়েছে ঈদের ছুটি পাঁচদিন হলেও যাত্রী কল্যাণ সমিতি কেন ১৫দিনের ঈদযাত্রার প্রতিবেদন তৈরি করেছে। আমরা বিআরটিএকে চিঠি দিয়েছি যার রিসিপ্ট কপি আমাদের কাছে আছে। সেখানে আমরা বলেছি  ঈদের ছুটি ১৯ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল, পর্যন্ত ছিল। বিআরটিএ’র কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ ১৭ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত খোলা থাকলেও বিআরটিসির ঈদ স্পেশাল সার্ভিস ১৪ এপ্রিল থেকে চালু হয়েছে। ১৬ এপ্রিল থেকে বাস ও ট্রেনে ঈদযাত্রা সার্ভিস চালু হয়েছে। এছাড়াও যাত্রী কল্যাণ সমিতির দীর্ঘ ১৯ বছরের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ঈদের ঝামেলা এড়াতে সাতদিন আগে থেকে ঈদযাত্রা শুরু করেন অনেকে। সমিতির পক্ষ থেকেও ঈদের ছুটিতে যাত্রী চাপ কমাতে আগেভাগে বাড়ি যাবার পরামর্শ দিয়ে প্রচারণা চালানো হয়। তাই বিগত ২০১৬ সাল থেকে ঈদের আগে ও পরে সাতদিন করে ১৫ দিনের সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে আমরা সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন দিয়ে আসছি। কেউ বলতে পারেনি যে আমরা তথ্যগত কোনো ভুল করেছি। অন্তত ৬০টির মতো দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন পত্রিকার পাশাপাশি হাসপাতালে তথ্য যাচাই করে আমরা প্রতিবেদন করি।’

মোজাম্মেল জানান, ‘বিআরটিএ তাদের প্রতিবেদনে দাবি করেছে গত ১৫ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত আহত হয়েছে ৫১৬ জন। এদিকে এসময়ের মধ্যে পঙ্গু হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ১১৫৪ জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৫৫ জন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫০১ জন। এই তিন হাসপাতালে ঈদের আগে পরে ২,০০০ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী ভর্তি হয়েছে। এছাড়াও সারাদেশে বিভাগীয় শহরের ১২টি হাসপাতাল ছাড়াও ৬৪ টি জেলা সদর হাসপাতাল ও ৪৯৫টি উপজেলা হাসপাতালে ঈদের আগে-পরে ১৫ দিনের সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তির তথ্য পাওয়া গেলে দেশে মহামারি সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতার চিত্র চরমভাবে ফুটে উঠতো। ‘

বিজ্ঞাপন

এই তিন হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর পরিমাণের চেয়ে বিআরটিএর সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে উঠে আসা আহত রোগীর পরিমাণ কয়েক গুণ কম হওয়ায় বিআরটিএর সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনটি অবাস্তব ও কাল্পনিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মন্তব্য করেন মোজাম্মেল।

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সঠিক তথ্য পেলেই তবে সরকার সমাধান করতে পারে। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিআরটিএ’র উচিৎ তথ্য দিয়ে সাহায্য করা। কিন্তু তারা তা না করে বরং আমরা যা করছি সেটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’

সারাবাংলা/আরএফ/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন