বিজ্ঞাপন

কবে এক দফা, কবে যৌথ ঘোষণা

May 9, 2023 | 9:55 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সংসদ বিলুপ্ত, সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ চলমান ১০ দফার আন্দোলনকে এক দফায় পরিণত করে খুব শিগগিরই মাঠে নামবে বিএনপি। তার আগে সহযোগী শক্তিগুলোর সঙ্গে শলাপরামর্শ সেরে নিচ্ছে দলটি।

বিজ্ঞাপন

ঈদুল ফিতরের আগে থেকেই সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বিএনপি গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির ধারাবাহিক বৈঠক হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলোতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও অংশ নিচ্ছেন। গত ২৭ জানুয়ারি গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি জানিয়েছিলেন সরকার হটাতে ন্যূনতম দফার যৌথ ঘোষণা আসছে। এর পর ২ মে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছিলেন ‘যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা শিগগিরই।

কিন্তু কবে নাগাদ সরকার পতনের সেই এক দফা এবং যৌথ ঘোষণা আলোর মুখ দেখবে, তা নিশ্চিত করে বলছে না কেউ। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এবং সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা এ ব্যাপারে পরিষ্কার করে কোনো ধারণা দিতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে সেই গদবাঁধা বক্তব্যের মধ্যেই আটকে রয়েছেন তারা।

কবে নাগাদ সরকার পতনের এক দফা ও যৌথ ঘোষণা– জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, আমরা কিন্তু প্রতিদিনই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দল এবং জোটের সঙ্গে বসছি। কোনো কোনো দলের সঙ্গে একাধিকবার বসা হয়েছে। আমাদের লিয়াজোঁ কমিটিতে যারা আছেন, তারা নিয়মিত বসছেন সমমনা দলগুলোর সঙ্গে, আলোচনা করছেন। যৌথ ঘোষণাটা খুব শিগগরিই আসবে।’

বিজ্ঞাপন

গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি সারাবাংলাকে বলেন, ‘যৌথ ঘোষণা’র রূপরেখা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সমমনা ও মিত্র শক্তিগুলোর সঙ্গে বিএনপি কথা বলছে। আমরাও দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি। আশা করছি খুব শিগগিরই যৌথ ঘোষণা আলোর মুখ দেখবে। পাশাপাশি এক দফার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘যৌথ ঘোষণা এবং এক দফা নিয়ে কাজ চলছে। যেহেতু সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং ব্যক্তিদের এক ছাতার নিচে আনার চেষ্টা চলছে, সেহেতু কোনো কিছু হুট করে হবে না। একটু সময় নিয়েই আমাদের এগোতে হবে। এ ব্যাপারে সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।’

বিএনপি গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার বিরোধী আন্দোলনে যারা মাঠে রয়েছে, সেইসব দলের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে খুব শিগগরিই যৌথ ঘোষণা আসবে। আমরা চেয়েছিলাম ঈদুল ফিতরের পর পরই যৌথ ঘোষণা দিতে। যেহেতু আমরা এক দফার আন্দোলনে যেতে চাই, সেহেতু আরেকটু সময় আমাদের লাগবে।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপি গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির আরেক সদস্য ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘যৌথ ঘোষণা ও এক দফা কর্মসূচি খুব শিগগিরই দেখতে পাবেন। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের প্রস্তুতির ব্যাপার আছে। আমাদের সঙ্গে যারা আন্দোলনে আছে, তাদেরও প্রস্তুতির ব্যাপার আছে। আশা করি শর্ট টাইমের মধ্যেই দেশের মানুষ তাদের কাঙ্ক্ষিত কর্মসূচি ও যৌথ ঘোষণা দেখতে পাবে।’

গত বছর জুলাই থেকে সারাদেশে ধারাবাহিক কর্মসুচি পালন করে আসছে বিএনপি। প্রথম দিকে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি ও দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি ছিল আন্দোলনের প্রধান ইস্যু। আন্দোলন চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিএনপির ১৭ নেতা-কর্মী নিহত হলে আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ১০ সাংগঠনিক বিভাগে আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী যোগ দেয়। এতে করে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। চাঙ্গা হয়ে ওঠে বিএনপির নেতা-কর্মী, সমর্থকরা।

ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশে খালেদা জিয়া যোগ দিচ্ছেন মর্মে বক্তব্য দিয়ে পরিবেশ ঘোলাটে করে তোলেন বিএনপির মধ্যম সারির কয়েকজন নেতা। ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের দুই দিন আগে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে লিপ্ত হন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনার জেরে দলটির মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য, চেয়ারপারসনের কয়েকজন উপদেষ্টা, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিএনপির প্রায় ২৫০ জন নেতা-কর্মী গ্রেফতার হন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নয়াপল্টনের পরিবর্তে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করে বিএনপি। সেখান থেকে ১০ দফা ঘোষণা দেয় দলটি। এর আট দিন পর রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে’ ২৭ দফা প্রস্তাবনা ঘোষণা করে দলটি। তারপর থেকে বিএনপির আন্দোলন চলছে ঢিমেতালে।

দলীয় সূত্র মতে, নেতা-কর্মী, সমর্থক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে গত বছরের সেই ‘উত্তেজনা’ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আন্দোলনের প্যাটার্ন বা ধরন, পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সেই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে যৌথ ঘোষণা ও এক দফা দাবি সামনে নিয়ে এসেছে তারা। তবে, এই যৌথ ঘোষণা এবং এক দফার আন্দোলন কতটা ফলপ্রসূ হবে, সে বিষয়টি নিয়ে ‘দশবার’ ভাবতে হচ্ছে বিএনপিকে। কেননা, এবার ব্যর্থ হলে আর ইউটার্ন নেওয়ার সময় পাবে না তারা। যা করার আগামী দুই/তিন মাসের মধ্যেই করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি ও ২৭ দফা রূপরেখা এবং গণতন্ত্র মঞ্চ ঘোষিত ১৪ দফা দাবিতে যে যুগপৎ আন্দোলন গত সাড়ে চার মাস ধরে চলে আসছিল, তার থেকে কিছু হাসিল হওয়ার আগেই শরিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ ও ভুল বোঝাবুঝি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।

যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ১২ দলীয় জোট থেকে এরই মধ্যে বেরিয়ে গেছে ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ লেবার পার্টি এবং গণন্ত্রতন্ত্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে গেছে ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নূরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ। ফলে অভ্যন্তরণী দ্বন্দ্বে ‘অস্থির’ গণতন্ত্র মঞ্চ, ‘টালমাটাল’ সমমনা ১২ দলীয় জোট, খর্ব শক্তির দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), গণফোরাম (মন্টু) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টিসহ নাম ও সাইনবোর্ড সর্বস্ব দল এবং জোটকে নিয়েই যৌথ ঘোষণা দিয়ে এক দফার আন্দোলনে যেতে হবে বিএনপিকে। সে কারণে মাঠে নামার আগে আরেকটু চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজনবোধ করছে বিএনপির হাইকমান্ড— এমনটিই জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

সারবাংলা/এজেড/পিটিএম/ এনইউ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন