বিজ্ঞাপন

‘আগে ঘূর্ণিঝড় আসুক, তখন দেখা যাবে’

May 11, 2023 | 5:02 pm

ইমরান চৌধুরী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা তৈরি করে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে ‘মোখা’। গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা যথেষ্ট, প্রশাসনের প্রস্তুতির হাঁক-ডাকেরও কমতি নেই। তবে চট্টগ্রাম শহরের সাগরতীরের বাসিন্দাদের মধ্যে এ নিয়ে এখনও তেমন ভ্রুক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। প্রশাসনের প্রস্তুতিও কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। প্রশাসনের মাইকিং নেই। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করার কথা বলা হলেও উপকূলীয় বাসিন্দাদের সরে যেতে এখনো কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে নগরীর পতেঙ্গার আকমল আলী রোডে বেড়িবাঁধসংলগ্ন জেলেপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় নিয়ে কারও মধ্যে উৎকণ্ঠার লেশমাত্রও নেই। প্রান্তিক মানুষগুলো বরং ব্যস্ত তাদের নিত্যদিনের কাজে, খাবার জোগাতে।

জেলেপাড়ার এক গৃহবধূ জ্যোৎস্না জলদাস। তার সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের। ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনে তিনি হেসে বলেন, ‘সরকারের লোক তো এখনও আসেনি। বন্যা (জলোচ্ছ্বাস) আসার আগে তো তারা এসে চলে যেতে বলে। সরকারের লোক এসে বললে তখন দেখা যাবে।’

বাদল জলদাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘যদি এসেই যায়, তখন আর কী করব! বেড়িবাঁধের ওপর চলে যাব। ঘর-দোর ফেলে কোথায় যাব? আগে ঘূর্ণিঝড় আসুক, তখন দেখা যাবে।’

বিজ্ঞাপন

জেলে পাড়ার আরেক বাসিন্দা পঙ্কজ জলদাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের জায়গা-জমি বলতে দইরজ্যা (সাগর)। নৌকা চালাই, নৌকা ফেলে কি চলে যাব ? আশ্রয়কেন্দ্র একটা আছে, ওটা দূরে। কাছে যেটা আছে সেটা ভালো না। কারেন্ট থাকে না। টেলিভিশন দেখতে পারি না। ঘূর্ণিঝড় কোথায় আছে, কখন আসবে আমরা জানি না। সরকারের লোক এসে বললে তখন দেখি কি করতে পারি।’

নগরীর ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের এই জেলেপাড়ায় দেড়’শ পরিবারে প্রায় দেড় হাজার মানুষের বাস। আগে প্রায় পাঁচশ পরিবার থাকলেও গতবছর টর্নেডোর তাণ্ডবে অনেক পরিবার জেলেপাড়া ছেড়ে চলে গেছে। এখনকার বাসিন্দাদের অবস্থা এমন, সাগরে ঢেউ দেখলেই বুঝতে পারেন- ঘূর্ণিঝড় আসছে। একেবারে আঘাত না হানা পর্যন্ত তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়ার রেকর্ড নেই।

বিজ্ঞাপন

জেলেপাড়া সমাজের তত্ত্বাবধায়ক শিবুপ্রসাদ জলদাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘জেলেপাড়ায় এমনিতেই আগের মতো মানুষ নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে অনেকেই চলে গেছে। ঘূর্ণিঝড় আসছে, এটা এলাকার মানুষে জানে। কিন্তু এখন আপনি হাজারবার বললেও তারা সরবে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও কিছু বলা হয়নি। হয়তো সিগন্যাল বাড়লে বলবে।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বুধবার (১০ মে) সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নগরীর দামপাড়ায় শাখা কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার কথা জানানো হয়। ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত সবধরনের তথ্য ও সেবার জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০২৩-৩৩৩-৬৩০-৭৩৯ জরুরি সেবা নম্বরে যোগাযোগের জন্য বলা হয়। বৃহস্পতিবার (১১ মে) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কয়েকদফা ফোন করেও সেই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।

উপকূলবর্তী এলাকা নগরীর ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছালেহ আহম্মদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাইক রেডি, মানুষ রেডি। প্রাইমারি স্কুলগুলো রেডি। মেয়র মহোদয় অর্ডার দিলেই মাইকিং শুরু হবে। এর মধ্যে যদি ঝড়-বাতাস শুরু হয়ে যায়, তাৎক্ষণিক লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি আমাদের আছে।’

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হোছাইন মোহাম্মদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সন্ধ্যার পর থেকে সব উপকূলীয় এলাকায় একযোগে মাইকিং শুরু করব। জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানে নিতে আমরা কাজ করছি। আমাদের সব আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের দোকানপাটগুলো এখনও খোলা দেখা গেছে। তবে তীব্র তাপদাহ আর প্রচণ্ড রোদের কারণে সৈকত একেবারে জনশূন্য। সাগরতীরে সারি সারি মাছ ধরার নৌকা রাখা আছে। সাগরে ঢেউ বাড়ছে, আস্তে আস্তে উত্তাল হতে শুরু করেছে।

জাহিদ হোসেন, হাছি মিয়া কোম্পানি, হাজী লোকমান, হাজী নুরুল ইসলাম সওদাগর, হাজী মাহবুবুল এলাহীসহ মোট ১০ জন মালিকের মাছ ধরার নৌকা বাঁধা আছে আকমল আলী রোডসংলগ্ন সাগরতীরে।

মাছ ধরার পেশায় নিয়োজিত শ্যামল জলদাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘অতিরিক্ত গরম, সাগরে যাওয়া যাচ্ছে না। মাছও পড়ছে না। বোট নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে সেভাবে যেতেই পারছি না। ঘূর্ণিঝড়ের সিগন্যাল পাওয়ার পর সাগরে যে কয়টা বোট ছিল সবগুলো ফিরে এসেছে।’

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় থাকা অতি গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় পরিণত হয়েছে, যা শিগগির আরও শক্তি সঞ্চার করে ‘প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। আর শুক্রবার (১২ মে) তা প্রবল ঘূর্ণিঝড় থেকে ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।

ছবি: শ্যামল নন্দী, ফটোকরেসপন্ডেন্ট।

সারাবাংলা/আইসি/আরডি/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন