বিজ্ঞাপন

ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ অভিভাবক-ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা

May 12, 2023 | 4:16 pm

রাহাতুল ইসলাম রাফি, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট

ঢাবি: দুপুর সাড়ে ১২টায় শেষ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনে থাকে একটি টেবিল ঘিরে ভর্তিচ্ছু বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ভিড় করেন। টেবিলের ওপর কিছু বড় খামের দেখা মেলে। সবগুলোতেই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন। খামের ওপর থাকা তথ্য অনুযায়ী মোবাইল ফোনগুলো ফেরত দিচ্ছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (১২ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ ইউনিটের পরীক্ষা শেষে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে।

তোয়াসিন নামের এক ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে ছাত্রলীগের বিজয় একাত্তর হলের বুথে নিজের জমা রাখা ফোনটি হাতে পেয়েছেন। সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে তোয়াসিন বলেন, ‘আমি স্মার্টফোন নিয়ে আসিনি। ছোটো একটি বাটন ফোন এনেছিলাম। প্ল্যান ছিলো কেন্দ্রের আশেপাশে কোথাও রেখে পরীক্ষা দিতে ঢুকবো। এসে দেখি ছাত্রলীগের এই বুথে মোবাইল জমা রাখা যাচ্ছে। কিছু তথ্য টুকে রেখে বুথে থাকা ভাইয়েরা একটি খামে করে আমার ফোনটি সংরক্ষণ করে। পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে ফোনটি হাতে পেলাম। এই উদ্যোগ আমার খুব ভালো লেগেছে।’

এভাবে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রের সামনে সহায়তা বুথ বসিয়েছে ছাত্রলীগ। প্রত্যেকটি বুথে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটের অন্তত একটি করে ইউনিট দায়িত্বপালন করেন।

বিজ্ঞাপন

শুধু মোবাইল-ব্যাগ জমা রাখাই নয়; আগত ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকদের জন্য সুপেয় খাবার পানি, কেন্দ্র চিহ্নিতকরণে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা, অভিভাবকদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা করা, ভুলক্রমে ভিন্ন কেন্দ্রে চলে আসা শিক্ষার্থীদের বাইকযোগে সঠিক কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়াসহ নানান ধরনের লজিস্টিক সহায়তা করতে দেখা যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের।

ছাত্রলীগের এমন কাজ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রশংসা কুড়িয়েছে। আগত অভিভাবকরাও মুগ্ধ হয়েছেন তাদের কাজ দেখে। এদিকে, ছাত্রলীগ বলছে— ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা নিজেদের দায়িত্ব মনে করছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিরুল ইসলাম সাকিব সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সবসময়ই শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা ছাত্রসংগঠন। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বন্ধুদের ডিজিটাল সরঞ্জাম (ফোন, ঘড়ি), ব্যাগ এগুলো আমরা সংরক্ষণ করেছি, বিনামূল্যে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছি। অনেক অভিভাবক ও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা আমাদের এসব কাজে মুগ্ধ হয়ে আমাদের ফোন নাম্বার নিয়েছেন, যেন পরবর্তীতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। ছাত্রলীগের প্রতি তাদের এই ভরসা ও মুগ্ধতা আমাদের পরম পাওয়া।’

সানজিদা সায়রা নামে এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি আগে একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে গেছি। কিন্তু আজ এত মানুষের ভিড়ে সব অপরিচিত লেগেছিলো। কলা ভবন লেখা গেটের ওখানে এসে একটি বুথে আমার পরীক্ষা কেন্দ্রের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম। সেখান থেকে একজন ভাই আমাকে এমবিএ বিল্ডিংয়ের কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। কথা বলে জেনেছি উনি ছাত্রলীগের কর্মী। কেন্দ্রে এসে আশ্বস্ত হয়েছি। সত্যিই এমন কাজ আমাদের অনেক সহায়তা করেছে।’

কেবল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীই নয়, তাদের সঙ্গে আসা অভিভাবকদের মুখেও ছাত্রলীগের প্রশংসা শোনা গেছে। ভর্তিচ্ছুদের অনেকেই অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে আসেন। পরীক্ষার হলে সন্তান কিংবা ভাই-বোনকে ঢুকিয়ে দিয়ে অধীর অপেক্ষায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় বসে থাকতে দেখা যায় এসব অভিভাবকদের। চোখে-মুখে অনিশ্চিতের ছাপ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মলচত্বর, সবুজ চত্বর, বটতলা, আমতলা, লাইব্রেরির আঙিনা, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সিঁড়ি কিংবা মূল সড়কের ফুটপাত— ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটি কোণা জুড়ে বসে থাকতে দেখা যায় অভিভাবকদের।

বিজ্ঞাপন

বটতলা প্রাঙ্গণে বসে থাকতে দেখা যায় মধ্যবয়স্ক এক নারীকে। অল্প দূরত্বে আছেন তার স্বামীও। সারাবাংলাকে এই অভিভাবক বলেন, ‘তারাও (ছাত্রলীগ নেতাকর্মী) আমাদের সন্তানের বয়সী। আমাকে পানি দিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর এসে চেয়ারও দিয়ে গেল। মন থেকে দোয়া রইলো এসব ছেলেদের জন্য।’

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর জন্য অপেক্ষারত আরেক অভিভাবক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে আমি মুগ্ধ। ছাত্রথাকাকালীন আমি নিজেও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ছাত্রলীগের ছেলেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্নপ্রান্তে যেভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করছেন, এতে আমরা আশ্বস্তবোধ করি।’

এর আগে, একটি ইউনিটের পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অতিরিক্ত অভিভাবক যেন না আসেন, সে ব্যাপারে অনুরোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তবে একজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে কয়েকজন অভিভাবক আসার চিত্র আজও দেখা যায়। একজন পরীক্ষার্থীর সঙ্গে বাবা-মা দুজনই, ক্ষেত্রবিশেষে পরিবারের আরও দুই একজন সদস্যও এসেছেন— এমন দৃশ্যও ছিলো অসংখ্য।

ছাত্রলীগের ‘জয় বাংলা বাইক সার্ভিস’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষার কেন্দ্র থাকে। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়— ভর্তিচ্ছুরা ভুল করে ভিন্ন কেন্দ্রে এসে উপস্থিত হন। অনেক সময় সময় স্বল্পতায় সঠিক সময়ে কেন্দ্রে উপস্থিত হতে না পেরে পরীক্ষায় বসতে না পারার ঘটনাও শোনা যায়। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ছাত্রলীগ চালু রেখেছে বাইক সার্ভিস। শাহবাগ, নীলক্ষেত, দোয়েল চত্বর ও পলাশী মোড়ে থাকে এই সার্ভিস।

গত ৬ মে অনুষ্ঠিত কলা-আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ইউনিটের পরীক্ষায় এক শিক্ষার্থী ভুলক্রমে এইচএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন ও এডমিট কার্ড ফেলে আসেন। অল্প সময় হাতে নিয়ে ছাত্রলীগের বিজয় একাত্তর হল শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাদিক হাসান মিয়ার প্রচেষ্টায় শেষপর্যন্ত পরীক্ষার হলে বসতে সক্ষম হন ওই শিক্ষার্থী। সাদিক তাকে বাইকে করে তার কদমতলীর বাসায় নিয়ে যান এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আবার ফিরে আসেন।


প্রতি ইউনিটের পরীক্ষার দিন এমন ঘটনা শোনা যায়। কার্জন হলে কেন্দ্র পড়া কেউ হয়তো ১০ মিনিট আগে এসে নীলক্ষেত পৌঁছান, আইইআর ভবনের কেউ হয়তো আটকে পড়েন শাহবাগে। অল্প সময় হাতে থাকলেও ছাত্রলীগের বাইক সার্ভিস অনেক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসতে সহায়তা করে।

এমন সব কর্মকাণ্ডকে নিজেদের দায়িত্ব বলে মনে করছে ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা নানা ভোগান্তির শিকার হন— এমন কথা আমরা অনেক শুনেছি। ছাত্রলীগ মনে করে এমন মুহূর্তে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব। তাই আমরা এমন কার্যক্রম অব্যহত রাখব। জয় বাংলা বাইক সার্ভিসসহ সব ধরনের সহায়তা ছাত্রলীগ করছে। বিশেষত অভিভাবকদের ভোগান্তি লাঘবেও ছাত্রলীগ কাজ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে ছাত্রলীগ পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা তা বাস্তবায়ন করে যাব।’

সারাবাংলা/আরআইআর/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন