বিজ্ঞাপন

‘রমজানে তিন ভাইয়ের একসাথে নামাজ পড়া হবে না’

May 8, 2018 | 7:15 pm

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রাজীবের ভাই ,মামা আর খালা মঙ্গলবার ( ৮ মে) সকালে যখন হাইকোর্টের বারান্দায়-গণমাধ্যমের সব ক্যামেরার ফোকাস তখন সেদিকে। রাজীবের কিশোর দুই ভাই তখন নিশব্দে কাঁদছে।

আইনজীবী আর গণমাধ্যম কর্মীদের উপচে পড়া ভীড় ঠেলে রিটকারি আইনজীবীর সাথে বেলা এগারটা নাগাদ এজলাসে যান তারা। এর কিছুক্ষণ পরেই রাজীবের ক্ষতিপূরণের আদেশের পর আবারও ক্যামেরার ফ্ল্যাশ আর হুড়োহুড়ি ঠেলে ফেরেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজলের চেম্বার রুমে।

বিজ্ঞাপন

পূর্ব পরিচিতির সূত্র ধরে  রাজীবের খালা জাহানারা বেগম  আর তার দুই ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের।  নিজের হাতব্যাগ থেকে রাজীবের নামে আসা চাকরির ইন্টারভিউ কার্ডগুলো বের করে জাহানারা বেগম বলেন, রাজীব মারা যাবার পর নানা জায়গায় যেখানে চাকরির জন্য দরখাস্ত করেছিল সেই চিঠিগুলো এসেছে আমার ঠিকানায়, আমি সেই চিঠি নিয়ে ‍ঘুরে বেড়াই।

তিনি বলেন, রাজীব চলে গেছে, দুই ভাইকে রেখে গেছে- আপনারা দোয়া করবেন-ওর রেখে যাওয়া আমানত যেন সারাজীবন আগলে রাখতে পারি, আমার দায়িত্ব যেন পালন করতে পারি।

রাজীবের ভাই মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমরা ভাইকে হারিয়েছি। আমাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।  এ ক্ষতিপূরণে ভাইয়ের  শূণ্যস্থান পূরণ হবে না কিন্তু আদালতের এ নির্দেশের মাধ্যমে অন্যরা সচেতন হবে।’

বিজ্ঞাপন

‘প্রতি রমজানে আমরা তিনভাই একসাথে প্রায় দিন নামাজ পড়তে যেতাম, এবারের রমজানে আর সেটা হবে না। আমরা দুই ভাই কোরআনে হাফেজ, ভাইয়া সেটা নিয়ে গর্ব করতো। সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতো, এই পরিচয়ে। আর কেউ কারও সঙ্গে আমার দুই ভাই হাফেজ বলে পরিচয় করিয়ে দেবে না।’

রাজীবের মামা জাহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, রায়ে আমরা খুশী, কিন্তু  রাজীবের মতো কারও জীবন যেন না হয়। এই ধরণের সড়ক দুর্ঘটনার কারনে কাউকে যেন আদালতে আসতে না, পরিবারগুলো যেন কাউকে না হারায়, আমাদের কষ্ট কোনও ক্ষতিপূরণ দিয়ে েপূরণ করা সম্ভব হবে না।

রাজীবের ক্ষতিপূরণের আদেশের পর  হাইকোর্টে রিটকারী আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল  সারাবাংলাকে বলেন,সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু অবশ্যই অপরাধ। আর ফৌজদারী আইনে কোনও মৃত্যুদন্ডের অপরাধ ৩০২ ধারায় বিচার হয়, যেখানে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনাকে কেবল দুর্ঘটনা হিসেবেই দেখা হয়, সে হিসেবে মামলা হয়। কিন্তু রাজীবের এ মামলার আজকের আদেশে কিছুটা হলেও আইন মানবেন বাস চালকরা।

রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, রাজীবের মামলার শুনানি চলার সময় আমি আদালতের কাছে প্রার্থনা করেছি, এ ধরণের ঘটনায় একটি ‘স্থায়ী কমিশন’ বা ‘ওয়াচ ডগ’ তৈরি করার।  একইসঙ্গে একটি ‘স্থায়ী ক্ষতিপূরণ কমিশন’ ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য। প্রচলিত আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে তদন্ত বা বিচারের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র কমিশন করার জন্য ও আবেদন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সড়ক ‍দুর্ঘটনায় শাস্তির মাত্রা কম মন্তব্য করে তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার মামলাগুলোতে কমশাস্তি থাকায় সেখান থেকে বের হবার কোনও সুযোগ নেই। বেশিরভাগ সময় ‘মামুলি দুর্ঘটনা’ হিসেবে ট্রিট করা হয় এবং এতে শাস্তির পরিমানও কম।

রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন,আদালতের এ আদেশ অবশ্যই একটি যুগান্তকারী আদেশ। এবং এ আদেশের ফলে যাত্রী এবং গণ পরিবহনের চালনার সঙ্গে যারা যুক্ত তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন, আইন মানবেন এবং আইন মেনে গাড়ি চালাবেন।

সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন