বিজ্ঞাপন

‘মরলে মরি যামু, ভাসায় নিয়া যাইলে যাউক গা’

May 13, 2023 | 11:18 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোখা’র আঘাত হানার আশঙ্কায় সাগরতীরের মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটলেও প্রশাসনের প্রস্তুত করা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে আগ্রহ কম। এজন্য জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন বার বার তাগাদা দিলেই নগরীর উপকূলবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খালিই পড়ে আছে।

বিজ্ঞাপন

আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনাগ্রহী উপকূলের মানুষেরা বলছেন, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, সেখানকার পরিবেশ ভালো নয়। খাবার ঠিকমতো পাওয়া যায় না। নিজেরা গেলেও ঘরের আসবাবপত্র, নৌকা, মাছ ধরার সরঞ্জাম অরক্ষিত থেকে যায়। অতীতে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে সর্বশান্ত হতে হয়েছে অনেককে। সেজন্য অধিকাংশ পরিবার নিকটতম স্বজন-পরিচিতজনদের কাছে গেলেও আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে পা বাড়াচ্ছে না।

শনিবার (১৩ মে) বিকেলে নগরীর উপকূলীয় এলাকা আকমল আলী রোডের জেলেপাড়ার বাসিন্দাদের জন্য প্রস্তুত রাখা তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে মানুষের কোনো উপস্থিতি নেই। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো হচ্ছে- ঈসমাইল সুকানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ হালিশহর উচ্চ বিদ্যালয় ও চৌধুরী কনস্ট্রাকশন ভবন।

ঈসমাইল সুকানী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের মূল ফটক তালাবদ্ধ। ভেতরে জনমানবশূন্য। সাব্বির হোসেন নামে স্থানীয় এক যুবক সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুনেছি এটাকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। তবে এখানে এখন পর্যন্ত কোনো মানুষ আসতে দেখিনি।’

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় জেলেপাড়ার বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী সন্ধ্যারাণী জলদাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আইতেছে তো কি হয়ছে? অনেক ঘূর্ণিঝড় দেখছি, ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ও দেখছি। মরলে মরি যামু। ভাসায় নিয়া যাইলে যাউক গা। আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে আমাগো নৌকা, জাল কে দেখব? ওইখানে খাওন-দাওন ঠিক নাই। এখানে কষ্ট করে নিজেরা রান্না করে খাইতাসি। এতেই আমরা ভালা আছি।’

রতন জলদাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতবার আশ্রয়কেন্দ্রে গেছিলাম। কিন্তু আমাদের বোট, মাছ ধরার জাল সব নষ্ট হইয়া গেছে। অনেক টাকার ক্ষতি হৈছিল। আত্মীয়স্বজন থেকে ধার নিয়া এগুলো ঠিক করাইছি। এবার আশ্রয়কেন্দ্রে যামু না, এখানেই থাকব। এবার সব নষ্ট হলে জীবন দেয়া ছাড়া আর কিছু বাকি থাকব না।’

জানতে চাইলে ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জেলেপাড়ার বাসিন্দাদের জন্য আমরা তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। দক্ষিণ হালিশহর উচ্চ বিদ্যালয়ে এক হাজার মানুষ থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে মানুষ আসতে চাচ্ছে না। অনেকের আত্মীয়স্বজন আশেপাশে থাকে। তারা সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। আর যারা বেড়িবাঁধের ওপরে আছেন, তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মোট এক হাজার ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় সব আশ্রয়কেন্দ্রই এখনও জনমানবহীন বলে জানা গেছে।

 

ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে মানুষের জান-মাল বাঁচাতে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে সরকারি-বেসরকারি একাধিক সংস্থা ।

বিজ্ঞাপন

শনিবার দুপুরে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, আকমল আলী ঘাট, রাসমণি ঘাটসহ বিভিন্ন ঝুকিপূর্ণ এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তিনি বিকেল ৫টার মধ্যে ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে পর্যটকসহ সব মানুষকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর নগরীর টাইগারপাসে চসিক কার্যালয়ে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন। এতে প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, জেলা প্রশাসন, সিএমপি, আনসার, রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরা ছিলেন।

সভায় মেয়র বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখার জন্য দুই নম্বর সতর্কতা সংকেত জারির সঙ্গে-সঙ্গেই আমরা সভা করে একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়ন করেছি। সকাল থেকে সার্বিক পরিদর্শনে মনে করি, মোখা মোকাবিলায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রস্তুত। ভোর থেকে সাতটি যানবাহনে করে ঝুকিপূর্ণ এলাকা ত্যাগ করে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের সরে যাওয়ার জন্য আমি নিজেও মাইকিং করেছি। প্রয়োজনে বিকেল পাঁচটার পর প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শক্তি প্রয়োগ করে হলেও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা জনসাধারণকে সরিয়ে নেবে।’

পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকা মানুষদের প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য মেয়র কাউন্সিলরদের নির্দেশ দেন। এদিকে, মেয়রের নির্দেশে হালিশহরে বেড়িবাঁধের একটি ভাঙা অংশ স্কেভেটর দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হয়। ওই অংশ দিয়ে খালের জোয়ারের পানি জনবসতিতে ঢুকে পড়ার ঝুঁকি ছিল। মেয়র পতেঙ্গায় লিংক রোডের পাশে স্লুইচগেট এলাকা পরিদর্শন করেন ।

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন