বিজ্ঞাপন

মোখা’র প্রভাব গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহে, বাড়ছে লোডশেডিং

May 14, 2023 | 11:24 am

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নতুন বছর অর্থাৎ ২০২৩ সাল শুরু হওয়ার পর এত ঘন ঘন লোডশেডিং দেখেনি রাজধানীবাসী। শনিবার (১৩ মে) প্রায় সারাদিনই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। রোববার (১৪ মে) সকাল থেকে রাজধানীর হাটখোলা, পুরান ঢাকা থেকে লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে বিভিন্ন এলাকায় কমেছে গ্যাসের চাপ।

বিজ্ঞাপন

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কারণে দেশের দু’টি এলএনজি টার্মিনাল তিন দিন ধরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকার বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঝড়ের প্রভাব কেটে গেলে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুট। এই চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয় মাত্র ২৮০ কোটি ঘনফুট। এরমধ্যে দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে আসে ২২০ কোটি ঘনফুট। বাকি গ্যাস করা হয় আমদানি। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সে আমদানি করা গ্যাস এলএনজি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। যে কারণে সরবরাহে দেখা দিয়েছে ঘাটতি।

চট্টগ্রাম, কুমিল্লায় ঘাটতি হবে এমন কথা বলা হলেও এই ঘাটতির প্রভাব পড়েছে ঢাকার গ্যাস সরবরাহে। গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) জানিয়েছে চট্টগ্রাম, মেঘনাঘাট, হরিপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। যে কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতি এখন ৩ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

সূত্রমতে, সারাদেশে এখন বিদ্যুতের চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াটের আশেপাশে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ায় ১১ হাজারের বেশি উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় এরইমধ্যে বিতরণ সংস্থাগুলো ঘন ঘন লোডশেডিং দিচ্ছে।

রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা দুই প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) গত দুই দিনে প্রতিদিন ৮০০ মেগাওয়াট করে লোডশেডিং দিচ্ছে। হঠাৎ লোডশেডিং শুরু হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রাহকরা।

বিজ্ঞাপন

অনেকেই নিজের ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লোডশেডিংয়ের কথা জানিয়েছেন। খায়রুল আলম নামের একজন লিখেছেন, শনিবার সকাল থেকে টানা দুই ঘণ্টা যাত্রবাড়ি এলাকায় বিদ্যুৎ ছিলো না।

আবুল বাশার লায়েস জানিয়েছেন, তার বাসা রামপুরায়। শনিবার তিন থেকে চার বার বিদ্যুৎ চলে গেছে। প্রতিবার এক থেকে দেড় ঘণ্টা লোডশেডিং ছিল।

নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, মিরপুরে দিনে তো গেছেই রাতেও বিদ্যুৎ ছিলো না।

রোববার সকালে তিন দফা বিদ্যুৎ চলে গেছে হাটখোলা, মানিকনগর এলাকায়। গোপীবাগ এলাকায় গত দুই দিন ধরে সকাল থেকে গ্যাস থাকছে না। এমন খবর পাওয়া গেছে রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, মিরপুর-১১, শেওড়াপাড়া, হাজারিবাগ, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ি, আরামবাগ, আমিন বাজার, গাবতলী, আজিমপুরসহ অনেক এলাকায়। বিদ্যুৎ, গ্যাস দুই দিকেই সংকট ছিলো প্রকট।

বিজ্ঞাপন

ফাইল ছবি

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় মোখা দেশের কক্সবাজার জেলায় আঘাত হানতে পারে। তবে চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুমিল্লা বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এ আশংকার কথাও জানিয়েছে সংস্থাটি এবং তা রোববার সন্ধ্যার মধ্যেই দেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ফলে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি হতে পারে এমন চার জেলার গ্যাস বিদ্যুৎ সরবরাহ আংশিক চালু রাখা হয়েছে।

এর আগে গত শুক্রবার (১২ মে) মধ্যরাত থেকে মহেশখালির দু’টি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। যে কারনে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।

শনিবার (১৩ মে) আরেক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চট্টগ্রাম, মেগনাঘাট, হরিপুর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ বা আংশিক চালু থাকতে পারে।

তিতাসের পক্ষ থেকেও জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় মোখা’র কারণে এলএনজি সরবরাহ হ্রাস পাওয়ায় তিতাস অধিভুক্ত এলাকায় গ্যাসের চাপ কম থাকবে।

রোববার (১৪ মে) বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় মোখা’র প্রভাবে মহেশখালির দু’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গতকাল রাত ১১টা থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র যেমন চট্টগ্রাম, মেগনাঘাট, হরিপুর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার ওইসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ/ আংশিক চালু থাকছে। বিদ্যুতের উৎপাদন ঘাটতি থাকার কারণে এসময় ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গাতেই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কেটে যাওয়া মাত্রই মহেশখালির দু’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল পুনঃস্থাপন করে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করা এবং গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুনরায় পূর্ণ সক্ষমতায় চালু করবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের সম্পদ তো আমাদের রক্ষা করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা ঠিক করতে আরও ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে।’

সাময়িক এই অসুবিধার জন্য গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘অতিদ্রুত গ্যাস-বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হবে।’

সারাবাংলা/জেআর/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন