বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা— এক আলো সঞ্চারী ফিনিক্স পাখি

May 17, 2023 | 10:30 am

আশিকুর রহমান অমি

ঢাকা: ১৯৭১ থেকে ৭৫ পর্যন্ত স্বদেশ নির্মাণের ব্রত আর এক পাহাড়সম পথ পাড়ি দেবার সীমাহীন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশবাসীর লড়াইয়ে বিরাট ভাটা হয়ে দাঁড়ায় ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডি। ইতিহাসের চাকা তখন স্তব্ধ হয়ে থমকে দাঁড়ায়। বাংলার রাষ্ট্রক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে লাল সবুজের পতাকাকে ভূলন্ঠিত করে আবার সেই পূর্বের পাকিস্তানকেই পুনর্বাসনের নীলনকশা বাস্তবায়নে ধাবিত হয় সেই পাকিস্তানি তাবেদার ও তাদের এজেন্ট মোশতাক-জিয়া গংরা। ঠিক সেই ক্রান্তিলগ্নেই ১৯৮১ সালে দীর্ঘ ৬ বছরের নির্বাসিত জীবনের যবনিকা টেনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার দুই শিশু সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে রেখে এদেশের গণতন্ত্র, প্রগতিশীল রাজনীতি পুনরুদ্ধার এবং বাংলার মানুষের মুক্তির আলোকবর্তিকা হয়ে দেশে আসেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলার ঘরে ঘরে, দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে দুঃখি মেহনতি মানুষের পাশে দাঁড়ান। বাঙালির বুকে আবারও সেই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে ফিরে পাওয়ার আশা সঞ্চার হয়। কালপরিক্রমায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার সংগ্রামী ও দূরদর্শী নেতৃত্বেই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন হয়। বাংলার মানুষের গণজোয়ারের ম্যান্ডেট নিয়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গ্রহণের মধ্য দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালিত্ব, অসাম্প্রদায়িকতা, সাম্যভিত্তিক মানবিক বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে শুরু, আজ অবধি অবিরাম ক্লান্তিহীন পথচলায় বিশ্বমানবতার অগ্রদূত হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। পথিমধ্যে দেশবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধীদের ঘাত-প্রতিঘাত, হত্যা/গুম/খুনের ষড়যন্ত্র, বৈদেশিক আঁতাত থাকলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আরও টানা দুইবার প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বারবার বাংলার মানুষের মুখের হাসির মাঝেই নিজের সংগ্রামকে খুঁজে ফেরেন।

দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে আমরা দেখেছি বঙ্গবন্ধুর সকল মানবিক গুণাবলিকে উত্তরাধিকার সূত্রে বয়ে নিয়ে বেড়াতে। তিনি আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিত হয়েছেন। আমরা দেখি, ১৯৮৮ সালের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় নিজ হাতে তিনি বন্যার্তদের জন্য রুটি বানিয়েছেন, বন্যা পীড়িতদের খাইয়েছেন, বন্যা পীড়িতদের পাশে একজন মহীয়সী নারী রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে আমরা দেখেছি নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডে পরিবারের সকল সদস্যের হারানো তিন কন্যাকে তিনি নিজের কন্যা হিসাবে গ্রহণ করে তাদের বিয়ের আয়োজন করেছেন। যেন এই বাংলারই এক সর্বংসহা জননী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

আজকে আমরা দেখতে পাই, জননেত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে ভিজিএফ কার্ড, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শিক্ষা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তদের জন্য ভাতাসহ আরও নানামুখী কর্মসূচি চালু করতে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আদর্শ মডেল হিসেবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই স্থান করে নিয়েছে। সেই ১৯৭৫ থেকে শুরু করে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৩ বছর সময় লেগেছিল বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় মাত্র ৭৫৯ মার্কিন ডলার অর্জন করতে। সেখানে ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সালে এসে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২৮২৪ মার্কিন ডলারে।

বিজ্ঞাপন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, সাড়ে সাত কোটি বাঙালিরে কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর এই উক্তির স্থাপত্য রূপই হচ্ছে আজকের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও মেগাপ্রকল্পসমূহ। বিশ্ব মানবতার দূত প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মহাসংকটময় করোনা মহামারির সময়ে সারা দেশে ৫০ লাখ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে বিশ্বে নতুন এক রেকর্ড তৈরি করে মানবিকতার এক নৈসর্গিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির সর্বশেষ মাইলফলক ও উদাহরণ আজকের গৃহহীনদের গৃহদান। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে মুজিববর্ষে প্রায় সাড়ে ৮ লাখের বেশি গৃহহীন পরিবারকে পাকা ঘর তৈরি করে দিয়েছে দেশরত্ন শেখ হাসিনার মানবিক সরকার। পৃথিবীর ইতিহাসে সম্ভবত এটাই সবচেয়ে বড় দুঃস্থদের জন্য গৃহায়ন প্রকল্প।

বর্তমান বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মানবিক রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, জনসাধারণের ক্ষমতায়ন ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে যুগান্তকারী পরিবর্তনের পাশাপাশি বিশ্ব জলবায়ু ও পরিবেশ রক্ষায়, শান্তি ও স্থিতিশীলতায়, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে, মাদক নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। অপরদিকে নিপীড়িত, শৃঙ্খলিত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ঠাই দিয়ে বিশ্ববুকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে নিজেকে অলংকৃত করে বাঙালি জাতির মস্তককে অনন্ত আকাশে তুলে ধরেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। এরই প্রসঙ্গ টেনে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যে মানবতা দেখিয়েছেন তা মনে রাখবে বিশ্ববাসী।’

সততা ও ন্যায়পরায়ণতা যেন শেখ হাসিনার শিরায় শিরায় উত্তরাধিকার সূত্রে প্রবহমান। এই বঙ্গীয় বদ্বীপ ছাপিয়ে তার সততার জয়গান আজ বিশ্বপরিমণ্ডলে সমাদৃত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মমত্ববোধ, মানবিকতা, মহানুভবতা ও উদারনৈতিক মানসিকতার মাধ্যমে বাংলার মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার ঠিকানা হয়ে বিশ্বের বুকে সদর্পে মাথা উঁচু করে লাল সবুজের নিশান উড়িয়েছেন। স্বজন হারানোর পর্বতসম বেদনাকে পুঞ্জিভূত করে তিনি মানবতার দৈববাণী উত্তাল সাগরের স্রোতধারা হয়ে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আমাদের সমগ্র বিশ্বে। আগামীতেও সকল বন্ধ্যত্বকে উপেক্ষা করে সংকট জয়ের একমাত্র সারথি হিসেবে শেখ হাসিনাই বাংলার দিগ্বিজয়ী নাবিক হিসেবে এই বাংলাকে আগলে রাখবেন।

বিজ্ঞাপন

লেখক: সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/আইই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন