বিজ্ঞাপন

সবক্ষেত্রে অংশীদারিত্বের বোঝাপড়া নিয়ে নির্বাচনি জোটে যাবে জাপা

May 21, 2023 | 9:01 pm

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চাইলে জাতীয় নির্বাচনে ‘বড় দায়িত্ব’ পালন করতে আগ্রহী জাতীয় পার্টি (জাপা)। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায় যেমন পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদগুলোতেও দলীয় লোকদের চাই তারা। পাশাপাশি সরকারি যে সব গুরুত্বপূর্ণ পদ আছে সেগুলোর হিসাব-নিকাশেও এগিয়ে থাকতে চায় দলটি। এ জন্য প্রয়োজনে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করবে তারা। এই হলো জাতীয় পার্টির আগামী নির্বাচনি কৌশল।

বিজ্ঞাপন

এ সব আলোচনা ও হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে নেওয়ার আগে আগস্ট মাস পর্যন্ত একা চলবে জাতীয় পার্টি (কাদের)। এরপরে দলটি অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেবে মহাজোটে থাকবে নাকি বিএনপির সঙ্গে যাবে? এবার কোনো সমঝোতার জোট নয়, এবার জোট নির্বাচনের।

দলটির সংশ্লিষ্টরা জানান, চুক্তি করে আগামী দিনগুলোতে বন্ধুপ্রিতম রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মাঠে থাকতে চায় জাপা কাদের গ্রুপ। সম্প্রতি এ নিয়ে দলের প্রেসিডিয়াম বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছেন।

দলটির নেতা-কর্মীদের অভিমত রাজনৈতিক অঙ্গনে যদিও জাপা আনপ্রেডিকটেবল হিসেবে অনেক আগেই পরিচিতি লাভ করেছে। এবারও জাতীয় পার্টি ফের রাজনৈতিক মাঠে আলোচনায় আসতে চায়। ৩২ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে দলটি অনেক খেসারত দিয়েছে। হারিয়েছে দলের অনেক যোগ্য প্রার্থীকে। দলটির এক জরিপে নেতারা দেখতে পেয়েছেন, ১৯৯০ সালে সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সারাদেশে ৭০ থেকে ৭৫টি আসনে জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থী দিতে পারেনি। ওই সব আসনের নতুন প্রজন্ম জাপা সর্ম্পকে কিছুই জানে না বলে অভিমত প্রকাশ করেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ মাঝারি নেতারা।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, যখনই নির্বাচনের দিন তারিখ ঘনিয়ে আসে, তখনই জাতীয় পার্টির ভেতরে কোন্দল বাড়ে। দল ভাঙনের মুখে পরে। এবারও সেদিকে যাচ্ছে। দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে জিএম কাদেরের কোন্দল বাড়ছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনে জাতীয় পার্টির গুরুত্বও বাড়ছে। ক্ষমতাশীল দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কাছে জাতীয় পার্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য দু’টি দলই জাপার সঙ্গে সেতুবন্ধন করতে তৎপর রয়েছে। আগস্ট মাসের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি এবং নির্বাচনী জোট নয় লিখিত রাজনৈতিক সমঝোতা হলে সেই দলের সঙ্গে থাকবে জাপা (কাদের)।

আবারও ভাঙলে তখন জাপার ভূমিকা কী হবে? এই বিষয়টিও জাপার (কাদের) নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচিত হচ্ছে। বিশেষ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোট গঠন ও ভাঙনে এই দলটি কী করবে- এ নিয়ে এখনই আলোচনা শুরু হয়েছে কাদেরপন্থী শীর্ষ নেতাদের মধ্যে।

কারণ এরশাদের জীবদ্দশাতেই দলটি ৪ ভাগে ভাগ হয়েছে। মূল দলের বাইরেও রয়েছে জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জেপি), যার দলীয় প্রতীক বাইসাইকেল। নাজিউর রহমান মঞ্জুরের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), যার দলীয় প্রতীক গরুর গাড়ি। দলটি বর্তমান সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক জাপা নেতা কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, যার দলীয় প্রতীক কাঁঠাল। দলটি বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. এম এ মুকিত। এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশাও জাপা পুনর্গঠন নামে রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে। রাজনৈতিক মাঠে থেমে থেমে দৌড়ঝাঁপ থাকলেও জাতীয় নির্বাচনে তিনি (বিদিশা) তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে মনে করেন জাপার মাঠপর্যায়ের নেতারা।

বিজ্ঞাপন

এ সম্পর্কে জাপা কাদেরপন্থী একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘চারবার দল ভাঙার পরেও জাপা টিকে আছে। এবার বেগম রওশন এরশাদের কারণে দল ভাঙলেও জাতীয় পার্টি টিকে থাকবে। কারণ, দলটির প্রতীক জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপার নামে নিবন্ধিত। দলের মূল নেতৃত্বে রয়েছে জিএম কাদের, প্রয়াত এরশাদের ছোট ভাই। তবে মনে রাখতে হবে, রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। আর এরশাদ সাহেব ছিলেন আনপ্রেডিকটেবল। তার ভাইও সেরকম হবেন।’

অপর এক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য নাম গোপন রাখার শর্তে দলের বর্তমান অবস্থা সর্ম্পকে বলেন, ‘জি এম কাদের হয়তো চাচ্ছেন বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার বিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করতে। যেন বিএনপি ক্ষমতায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে পারে।’

গত ২৯ অক্টোবর জামালপুর জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছিলাম। কিন্তু এরপর থেকে তাদের মধ্যে কৃতজ্ঞতা বোধ দেখা যাচ্ছে না। আমরা বন্ধু হিসেবে তাদের কাছে গিয়েছিলাম, তারা বন্ধু হিসেবে আমাদের গ্রহণ করেছিল। কিন্তু তারা সর্বপ্রথম আমাদের বানালো অঙ্গ সংগঠন, এরপর বানালো চাকর। এখন জাতীয় পার্টিকে ক্রীতদাস বানাতে চায় আওয়ামী লীগ।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এক পথে চলার নীতিতে রয়েছে, এভাবেই থাকবে। তবে চলার পথে সঠিক বন্ধু মিললে তখন অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আনপ্রেডিকটেবল দল বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বিএনপিসহ আরও অনেক দল আছে, যারা আনপ্রেডিকটেবল ভূমিকা নিয়ে থাকে। তাদের কারও চোখে পড়ে না। যেমন ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট বলেছিল তারা নির্বাচনে যাবে না। বাস্তবতা হলো, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। রাজনীতিতে আনপ্রেডিকটেবল ভূমিকা কমবেশি সব দলের আছে। জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপাকে আনপ্রেডিকটেবল বলার সুযোগ নেই।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন