বিজ্ঞাপন

ঈদের পর হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি আসছে

May 24, 2023 | 1:28 pm

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ঈদুল আজহার পরে আসছে হরতাল, অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি। বিএনপি ও রাজনৈতিক জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’-এর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। তারা বলছেন, সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতে আন্দোলন চলছে। তবে আগস্ট মাস থেকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন শুরু হবে।

বিজ্ঞাপন

নেতারা জানান, প্রথমেই কঠোর কর্মসূচিতে যেতে চান না তারা, সব কিছু সরকারের ওপর নির্ভর করছে। তারা বলছেন, জনগণের দাবি মানতে তালবাহানা করা হলে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চ সম্প্রতি যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তা পালন করার পরই সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি নিয়ে তারা বৈঠক করবে। বৈঠকের পর যৌথভাবে সরকার পতনের একদফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। তবে গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপির সঙ্গে তাদের ১৪ দফা দাবির বিষয়টি ফয়সালা করবে। এক্ষেত্রে বিএনপি ১৪ দফা দাবির প্রতি সম্মান না দেখালে গণতন্ত্র মঞ্চ সরকার পতনের আন্দোলনে রাজপথে থাকবে ভিন্ন রূপে।

সূত্রটি আরও জনায়, সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করা হয়েছে। ১৪ দফার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার। এটি নিয়ে বৈঠকে বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি নেতার দফাটি নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। শুধু তাই নয় ১৪ দফা সংস্কারে ৪টি কমিশন গঠন করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের অবহিত করা হলে তারা দ্বিমত পোষণ করেন। এ নিয়েও তাদের মধ্যে টানা পোড়েন চলছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র বলছে, কথা ছিল বিএনপির ১০ দফা এবং গণতন্ত্রমঞ্চের ১৪ দফা মিলিয়ে একটি চূড়ান্ত আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়ন করে যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা করা। কিন্তু তা হচ্ছে না। বিএনপি চাচ্ছে সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকতে। এ সব নিয়ে বিএনপির সঙ্গে টানাপোড়েন চললেও সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে মাঠে থাকবে গণতন্ত্র মঞ্চ। পাশাপাশি জোটের ১৪ দফা বাস্তবায়নের দাবিতেও রাজপথে থাকবে জোটটি।

এ সর্ম্পকে গণতন্ত্র মঞ্চের এক নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রমঞ্চের ১৪ দফা দাবি নিয়ে তেমন একটা চিন্তা ভাবনা করছে না। তারা সরকার পতনের জন্য ঈদের পর হরতালসহ অবরোধের কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছে। আগস্ট মাসের আগ পর্যন্ত ঘোষিত কর্মসূচি পালন করবে। এই কর্মসূচি থেকেই জনগণ যাতে মাঠে নামে সেজন্য বিভিন্ন কৌশল বা চেষ্টা অব্যহত রাখবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, চূড়ান্ত আন্দোলনের রূপ রেখা ও আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে এখনও আলোচনা হয়নি। তবে দেখা যাক আলোচনার পর কি করা হবে।

বিজ্ঞাপন

এসব নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, গণতন্ত্রমঞ্চের ১৪ দফা এবং বিএনপির ১০ দফা দাবি নিয়ে একটি চূড়ান্ত আন্দোলনের রূপ রেখা ও সরকার পতনের কঠোর কর্মসূচি নিয়ে এই মুহূর্তে কোন মন্তব্য করতে চাই না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে সময়মত দেশবাসী জেনে যাবে।

বিএনপির অপর এক নেতা জানান, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। তবে তিনি গণতন্ত্রমঞ্চের দাবি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপির এবং গণতন্ত্র মঞ্চের দাবিগুলো নিয়ে যে চূড়ান্ত রূপ রেখা প্রণয়ন করার বিষয়টি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আমাদের বনিবনা হচ্ছে না, তা নয়। আসলে আমাদের বসা হচ্ছে না বলেই চূড়ান্ত কিছু করতে পারছি না। কারণ বিএনপি বড় রাজনৈতিক দল। তাদের অনেক কর্মসূচি থাকে তাই সময় করে উঠতে পারছি না।

আন্দোলন সর্ম্পকে তিনি বলেন, ঈদের পরে অবশ্যই কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কারণ সময় নেই।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, আমরা হরতাল কর্মসূচির পক্ষে নই। এমন কর্মসূচি দেওয়া হবে যে কর্মসূচিতে জনগণ সম্পৃক্ত হয়। তারপরও যদি সরকারের টনক না নড়ে তখন আমরা হরতালসহ অন্য কঠিন কর্মসূচিতে যাব।

গণতন্ত্র মঞ্চের অপর এক শীর্ষ নেতা ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, আমরা আন্দোলনে আছি। ২৮ মে মালিবাগ থেকে বাড্ডা পর্যন্ত পদযাত্রা। ৪ জুন ঢাকা থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত রোডমার্চ। কোরবানির ঈদের জন্য এর চেয়ে বড় কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। ঈদের পরে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায় নেওয়া হবে। তখন হরতালসহ অবরোধ কর্মসূচি আসতে পারে।

তিনি বলেন, বিএনপির ১০ দফা এবং গণতন্ত্রমঞ্চের ১৪ দফা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত ফয়সালা হয়নি। ফয়সালা না হলেও আমরা দেশ ও জনগণের স্বার্থে আন্দোলন নিয়ে মাঠে থাকব।

বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছি। কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছি। তবে দাবি আদায়ের জন্য ঈদের পরে গণতান্ত্রিকভাবে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা চাই দেশে ও জনগণের জন্য অর্থবহ পরির্তন। অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা ১৪ দফা দাবি তুলে ধরেছি। আশা করি, আমাদের ১৪ দফা এবং বিএনপির ১০ দফা দাবি মিলিয়ে একটি চূড়ান্ত রূপ রেখা প্রণয়ন হবে। কারণ আমাদের দাবিগুলো হচ্ছে দেশ ও জনগণের স্বার্থের দাবি।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির সঙ্গে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বনিবনা হচ্ছে না। তবে আলোচনা চলছে হয়তো শিগগির একটা ফয়সালা হয়ে যাবে।

হাসনাত কাইয়ুম বলেন, দেশে এ যাবত অনেক আন্দোলন হয়েছে, সফলও হয়েছে। কিন্তু দেশ ও জনগের ভোগান্তি রয়ে গেছে। সে জন্যই অর্থবহ পরিবর্তন চাই। রূপ রেখার বাস্তবায়ন চাই।

প্রসঙ্গত, বিএনপির সঙ্গে সরকার হটানোর যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের জোটে রয়েছে-আ স ম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), সাইফুল হকের বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, নুরুল হক নুরের গণ অধিকার পরিষদ, শেখ রফিকুল ইসলামের ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও হাসনাত কাইয়ুমের রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। এর মধ্যে জেএসডি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত দল।

২০২২ সালের ৮ আগস্ট সাতটি দল নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ গঠিত হয়। ৯ মাসের মাথায় ভেঙে যায় গণতন্ত্র মঞ্চ। সম্প্রতি জোট থেকে বেরিয়ে যায় ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ।

বিএনপির ১০ দফাগুলো হলো-

১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।

২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ’-এর আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।

৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা।

৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করা।

৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালা-কানুন বাতিল করা।

৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল।

৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা।

৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন/দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা।

১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।

গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফা-

১. বর্তমান ‘অনির্বাচিত ও অবৈধ’ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ভোটের অধিকারসহ ‘গণতন্ত্র হরণকারী লুটেরা ক্ষমতাসীন ফ্যাসিবাদী’ সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।

২. ‘অবাধ, নিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও বিশ্বাসযোগ্য’ জাতীয় নির্বাচনের জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। অন্তর্বতীকালীন সরকার বর্তমান ‘অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে ‘সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য’ একটি স্বাধীন, দক্ষ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। এই নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে নির্বাচনে টাকার খেলা ও মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ, অগণতান্ত্রিক আরপিও সংশোধন, প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পরিবর্তন, জনগণের বাঁচার জরুরি সংকটের সমাধান, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি বাতিল করে পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ব্যবহার বাতিল করবে। রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষ্যে সাংবিধানিক ক্ষমতা কাঠামো এবং রাষ্ট্র পরিচালনার আইন কানুন সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরিতে সহায়তা করবে, যাতে করে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ এই গণতান্ত্রিক সংস্কার করার কার্য্কর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

৩. (ক) সংবিধান ‘স্বৈরতন্ত্রের উৎস প্রধানমন্ত্রীকেন্দ্রিক জবাবদিহিতাহীন স্বেচ্ছাচারী কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা ব্যবস্থার’ বদল ঘটিয়ে সংসদ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা পৃথকীকরণ ও যৌক্তিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ন্যায়পাল ও সাংবিধানিক আদালত প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন করা।

(খ) সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার করে সরকার গঠনে আস্থাভোট ও বাজেট পাস ব্যতিরেকে সকল বিলে স্বাধীন মতামত প্রদান ও জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার নিশ্চিত করা।

(গ) প্রত্যক্ষ নির্বাচনের পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি ও দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।

(ঘ) প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ‘যৌক্তিক ভারসাম্য’ প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ কার্য্কর স্বাধীনতার নিশ্চিত করাসহ গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠা করা।

৪. বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ‘রাজনৈতিক নিপীড়নের অংশ হিসাবে দণ্ডপ্রাপ্ত’ সকল বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সাজা বাতিল, সকল ‘হয়রানিমূলক মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার এবং সকল রাজনৈতিক কারাবন্দিকে অবিলম্বে মুক্তি দান।

৫. সাংবিধানিক অধিকার হিসাবে সভা,সমাবেশ, মিছিল, মিটিংয়ে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা। বিরোধী দলসমূহের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ‘পুলিশি বাধা, হামলা, গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা’ বেআইনি হিসাবে গণ্য করা। পেশাগত দায়িত্বের বাইরে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ‘দলীয় পেটুয়া বাহিনী হিসাবে’ ব্যবহার না করা। রাষ্ট্রের গোয়েন্দা বাহিনীগুলোকে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ‘হয়রানির উদ্দেশ্যে’ ব্যবহার না করা। স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বর ‘দমন’ করতে নতুন কোনো মামলা না করা এবং ‘গায়েবি মামলায়’ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ন করা।

৬. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ সহ ‘মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সকল নিবর্তনমূলক কালাকানুন’ বাতিল করা এবং ‘গুম, খুন, বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড’ বন্ধ করা। ইতোপূর্বে সংঘঠিত সকল ‘বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুনের’ যথাযথ তদন্ত এবং দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ব্যবস্থার নামে শ্রমিক আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ‘হয়রানি’ বন্ধ করা।

৭. (ক) জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে খাদ্যপণ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার সিন্ডিকেটমুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কার্য্কর ব্যবস্থা গ্রহণ। বিদ্যমান অভাবের পরিস্থিতিতে গ্রাম-শহরের গরীব ও স্বল্প আয়ের পরিবারসমূহের জন্য ‘রেশন’ ও নগদ অর্থ দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

(খ) গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানিসহ সেবাখাতসমূহে ‘স্বৈরাচারী পন্থায়’ মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। বিদ্যুত খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ডুবে থাকা রেন্টাল-কুইক রেন্টাল প্রকল্প এবং এ খাতে দেওয়া ‘দায়মুক্তি’ আইন অবিলম্বে বাতিল করা।

(গ) সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত, সুলভে গণপরিবহনের ব্যবস্থা এবং বাসা ভাড়া যৌক্তিক সীমা নির্ধারণ করা।

৮. বিগত বছরগুলোতে, বিশেষ করে গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে ‘অর্থ পাচার’, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, শেয়ার মার্কেট, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতসহ রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে সংগঠিত ‘রোমহর্ষক নজিরবিহীন দুর্নীতি’ এবং এর দায়দায়িত্ব চিহ্নিত করতে শক্তিশালী কমিশন গঠন করা। দুর্নীতি, লুটপাট ও অর্থ পাচারের সাথে যুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে দ্রুত কার্য্কর ব্যবস্থা গ্রহণ।

৯. গত ১৫ বছরে ‘গুমের শিকার’ সকল নাগরিকদের উদ্ধার করা। ‘বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ‘হস্তক্ষেপমুক্ত’ প্রশাসন, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশনের মাধ্যমে ‘বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতন নিপীড়নের’ প্রতিটি ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা।

১০. সাম্প্রদায়িক উসকানি সৃষ্টি করে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং তাদের সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

১১. (ক) স্বাস্থ্যকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা ও বিনা চিকিৎসায় কোনো মৃত্যু নয়– এই নীতির ভিত্তিতে সমগ্র স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজানো। স্বাস্থ্যখাতে রাষ্ট্রীয় অংশগ্রহন বৃদ্ধি ও বেসরকারি খাতে মুনাফার লাগাম টেনে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে।

(খ) শিক্ষা অধিকার, বাণিজ্যিক পণ্য নয়- এই নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে সবার জন্য একই মানের শিক্ষা নিশ্চিত; মাতৃভাষায় শিক্ষাকে অগ্রাধিকার প্রদান করা। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে জিডিপির ন্যুনতম ৬ শতাংশ বরাদ্ধ করা।

১২. রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং বেকারদের আত্মকর্মসংস্থানের বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ।

১৩. কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত, পাটকল, চিনিকলসহ বন্ধ কলকারখানা চালু, শ্রমিক ও শ্রমজীবীদের বাঁচার মত মর্যাদাপূর্ণ মজুরি ঘোষণা ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা।

১৪. জাতীয় স্বার্থ, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সমতা, ন্যায্যতা, পারস্পরিক স্বর্থের স্বীকৃতি ও স্বীকৃত আন্তর্জাতিক বিধিবিধান অনুযায়ী দ্বিপক্ষীয় সমস্যার সমাধান করা।

সারাবাংলা/ এ এইচ এইচ/এনইউ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন