বিজ্ঞাপন

লিচু কিনে ধরা জাল টাকার কারিগর, জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাও

May 24, 2023 | 9:38 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পোশাক কারখানা বন্ধ হওয়ার পর অনেকদিন ভালো-মন্দ বাজারও করতে পারেননি। অভাবে দিন কেটেছে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের কাছেও চাইতে পারছিলেন না। ধার দেনা অনেক হয়ে গিয়েছিল। তাই পোশাক কারখানার ভেতর গড়ে তুললেন জাল টাকা তৈরির কারখানা। সেই কারখানায় তৈরি জাল টাকা দিয়ে ভালোই চলছিল দিন।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু কাল হলো লিচু কেনা। লিচু কিনে একটি জাল টাকার নোট দিলে বিক্রেতার সন্দেহ হয়। তখন আশেপাশের লোক জড়ো করে তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এর পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে তার জাল টাকার কারখানার কথা। আটক করা হয় কারখানার মালিক মনির হোসেন সাখাওয়াতসহ তিন জনকে। উদ্ধার করা হয় ৫০ লাখ টাকার জাল নোট।

বুধবার (২৩ মে) সকাল ১০টার দিকে সাভারের বনগাঁ ইউনিয়নের সাদাপুরের পুরানবাড়ি এলাকায় ‘সাউথ বেঙ্গল অ্যাপারেলস’ নামের কথিত ওই পোশাক কারখানায় অভিযান চালায় ঢাকা জেলা পুলিশ। জাল টাকার ওই কারখানায় অভিযানের সময় উপস্থিত হন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান।

পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কারখানায় জাল টাকা তৈরির অত্যাধুনিক সব সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে জাল টাকা তৈরির পর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হতো। মূলত কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ৫০ লাখ জাল টাকা তৈরি করেছিলেন তারা।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘চক্রের সঙ্গে একটি বেসরকারি ব্যাংকের সাবেক এক কর্মকর্তা জড়িত বলে তারা জানতে পেরেছেন। তাকেসহ জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

পুলিশ জানিয়েছে, আটক সাখাওয়াত হোসেন খান (৫০) বরিশালের মুলাদী উপজেলার ডিগ্রিরচর খান বাড়ির বাসিন্দা। আটক অন্য দু’জন হলেন- মুলাদীর বয়াতিকান্দি গ্রামের নাজমুল হোসেন (২৪) ও শরীয়তপুরের পালং থানার গয়াধর গ্রামের সুজন মিয়া (৩০)।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, আজ সকালে কারখানার মালিক সাখাওয়াত সাভারের ‘অন্ধ মার্কেট’ এলাকায় লিচু কিনতে যান। লিচু বিক্রেতাকে এক হাজার টাকার একটি জাল নোট দিলে সেটা দেখে বিক্রেতার সন্দেহ হয়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সাখাওয়াতকে আটক করে সাভার মডেল থানা-পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ১৭ হাজার টাকার জাল নোটসহ সাখাওয়াতকে আটক করে। থানায় জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি নিজের পোশাক কারখানার ভেতর জাল টাকা বানানোর কথা স্বীকার করেন। পরে পুলিশ ওই কারখানায় গিয়ে আরও দুজনকে আটক করে। এ সময় কারখানা থেকে এক বোতল বিদেশি মদ, একটি বিয়ারের ক্যান ও ১০০টি ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

জাল টাকা তৈরির মূল হোঁতা সাখাওয়াত হোসেনের দাবি, ব্যবসায় লোকসানের কারণে তিন ব্যক্তির পরামর্শে চার মাস আগে তিনি জাল টাকা তৈরি শুরু করেন। এর আগে, ২০১১ সালে তৈরি পোশাকের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এরপর লোকসানের কয়েক বছর পরই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেন। পাঁচ বছর আগে আবার শুরু করেন। করোনার সময় কার্যাদেশ বাতিল হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন তিনি। চার মাস আগে ঢাকার তিন ব্যক্তির পরামর্শে জাল টাকা তৈরির কাজ শুরু করেন। তারাই জাল টাকা তৈরির সব সরঞ্জাম দিতেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ হিল কাফি বলেন, ‘আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হবে। ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হবে।’

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন