বিজ্ঞাপন

কয়লা সংকটে বন্ধের পথে ২ বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাড়ছে লোডশেডিং

May 31, 2023 | 11:45 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কয়লা সংকটে উৎপাদন বন্ধের পথে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের। একই কারণে পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রও। ডলার সংকটে বকেয়া বিল পরিশোধ করতে না পারায় এবং নতুন করে ঋণপত্র খোলার সুযোগ না থাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় এই দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হতো জাতীয় গ্রিডে। কিন্তু কয়লা সংকটে বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি বন্ধ হয়ে গেলে জাতীয় গ্রিডে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দেবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রার পারদও বাড়ছে। এই অবস্থায় বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা, দিতে হচ্ছে লোডশেডিং।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৩১ মে) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। হাটখোলা এলাকার বাসিন্দা দীপক কুমার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সোমবার মাঝ রাতে তিন দফা লোডশেডিং হয়েছে। প্রতিবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কমপক্ষে এক ঘণ্টা লোডশেডিং হয়।’ মানিকনগর এলাকা তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে বার বার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় চরম বিরক্তিকর অবস্থায় আছে।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনিরুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন. তিনি বনশ্রী থাকেন। দিনের বেলা দুই থেকে তিন বার বিদ্যুৎ চলে যায়। আজিমপুরের এক বাসিন্দা লিখেছেন, গত কয়েকদিনে বার বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে, কারন কি?’

এদিকে, রাজধানীর বিদ্যুৎ সরবরাহে নিয়োজিত দুই বিতরণ কোম্পানির আওতায় থাকা গ্রাহকরাই তীব্র ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। বিশেষ করে গত দুই দিনে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কথা বলছেন তারা। জানা গেছে, গরম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশেই এই পরিস্থিতি শুরু হয়েছে। বিতরন কোম্পানিগুলো বলছে, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। যে কারণে লোডশেড করতে হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, দেশে এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৩টি। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবগুলো চালু নেই। যেগুলো চালু আছে সেগুলোও কোনো না কোনো কারণে বন্ধ, কিংবা পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন করা যাচ্ছে না। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার (৩০ মে) বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে ১৩০০ মেগাওয়াট ঘাটতি ছিল। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দিনের বেলা তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়তে থাকে। বুধবার (৩১ মে) বিকেল পর্যন্ত ঘাটতি বেড়ে ২০০০ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। এই ঘাটতি পূরণে পর্যায়ক্রমে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীতে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড-ডিপিডিসি’র দৈনিক চাহিদা ১৮০০ মেগাওয়াট থাকলেও এর বিপরীতে মিলছে ১৪০০ মেগাওয়াট। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান সারাবাংলাকে জানান, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। বাড়ছে উৎপাদন ও সরবরাহে ঘাটতি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। একই কারণে লোডশেডিং করতে হচ্ছে রাজধানীর আরেক বিতরণ কোম্পানি ডেসকোকেও।

এদিকে, লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে গ্রাম-গঞ্জ থেকেও। বরিশাল সদরের বাসিন্দা ও সিনিয়র সাংবাদিক নজরুল বিশ্বাস টেলিফোনে সারাবাংলাকে বলেন, ‘মঙ্গলবার সারারাত ঘুমাতে পারিনি, অসুস্থ হয়ে গেছি প্রায়। বুধবার (৩১ মে) সারাদিন ১০ থেকে ১৫ বার বিদ্যুৎ চলে গেছে। এই পরিস্থিতি গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে। গত রাতে গরমে অতিষ্ট হয়ে বরিশালে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পিডিবির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন বিতরণ সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় সাপ্লাই কমে গেছে। ফলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।’

বরিশালের আরেক বাসিন্দা সোহাগ জানান, গত কয়েকদিন ধরে বরিশাল শহরে লোডশেডিং তীব্র আকার ধারণ করেছে। লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে খুলনা থেকেও। শহরের বাসিন্দা আল মনসুর সারাবাংলাকে বলেন, গরম আর লোডশেডিংয়ে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক ইউনিট বন্ধ। আরেক ইউনিটও বন্ধের পথে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড-বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম খোরশেদুল আলম সারাবংলাকে বলেন, ‘ডলার সংকটে পায়রার জন্য কয়লা আমদানিতে বকেয়া পড়েছে বেশ। আর যে কয়লা বর্তমানে প্ল্যান্টে মজুত আছে তা দিয়ে তিন থেকে চার দিনের বেশি উৎপাদন সম্ভব হবে না।’

জানা গেছে, এই প্ল্যান্টের দ্বিতীয় ইউনিট থেকে মঙ্গলবার (৩০ মে) ৬২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেছে। আর ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক ইউনিট থেকে মঙ্গলবার উৎপাদন করা হয়েছে মাত্র ৩২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

সূত্র মতে, দেশে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় তার ৪৭ ভাগই গ্যাসভিত্তিক। এই কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ৩৯ মেগাওয়াট। কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে এখন উৎপাদন হচ্ছে ৬ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের মতো। জানা গেছে, গত কয়েকদিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদনে সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু তাতেও গ্যাসভিত্তিক সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে, ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল মিলিয়ে উৎপাদন সক্ষমতা ৭ হাজার মেগাওয়াটের মতো। এখানেও উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। আর কয়লার সংকট তো এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে। কয়লা থেকে ৩ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও তা এখন নেমেছে ২২০০ মেগাওয়াটে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন