বিজ্ঞাপন

বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আফছারুল আমীন

June 3, 2023 | 10:28 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা নিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাবেকমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীন। পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৩ জুন) এশার নামাজের পর নিজের প্রতিষ্ঠিত নগরীর দক্ষিণ কাট্টলীতে প্রাণহরি আমিন একাডেমি স্কুলের মাঠে তার শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রাত ৯ টার দিকে প্রয়াতের মরদেহ কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রয়াত আফছারুল আমীনের নিকটাত্মীয় পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রাণহরি আমিন একাডেমির মাঠে শেষ জানাজা হয়েছে। এখানেও বিপুল সংখ্যক লোকসমাগম হয়েছে। হাজার, হাজার মানুষ উনাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন। বাবার কবরের পাশে উনাকে দাফন করা হচ্ছে।’

জানাজাস্থলে অবস্থান করা ১৪ দলের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খোরশেদ আলম সুজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকায় এক দফা এবং চট্টগ্রামে দুই দফা জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি জানাজায় হাজার, হাজার মানুষ এসে আফছার ভাইকে অন্তরের অন্তস্তল থেকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। একজন রাজনীতিবিদের জীবনে এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে উনাকে দাফন করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

এর আগে, শনিবার দুপুরে নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের মাঠে প্রয়াত আফছারুল আমীনের চট্টগ্রামে প্রথম দফা জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। প্রয়াতের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য দেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার ছোট ভাই এরশাদুল আমীন এবং ছেলে ফয়সাল আমীন।

এ সময় ফয়সাল আমীন বলেন, ‘আমার বাবা রাজনীতি আর সমাজ নিয়েই থেকেছেন। পরিবারের সদস্যদের কম সময় দিতেন। আমরা পরিবারের সদস্যরা বাবাকে কখনও সেভাবে পাইনি। ক্যানসার শনাক্ত হওয়ার পর তিনি পরিবারের কাছে ছিলেন। ২০২০ সাল থেকে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করেছেন তিনি। শত কষ্টের মধ্যে দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করেছেন।’

বিজ্ঞাপন

জানাজায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, উত্তর জেলার সভাপতি এম এ সালাম, ১৪ দলের সমন্বয়ক খোরশেদ আলম সুজন, নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সংসদ সদস্য নোমাল আল মাহমুদ, এম এ লতিফ, দিদারুল আলম, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও নজরুল ইসলাম, নগর কমিটির সহ সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মো. আরিফ।

এছাড়া সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় নগর পুলিশের পক্ষে, ভারপ্রাপ্ত মেয়র আফরোজা কালাম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে প্রয়াতের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীন শুক্রবার (০২ জুন) বিকেল ৪টার দিকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। শনিবার সকালে ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রয়াতের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।

দুপুর পৌনে ১টার দিকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে মরদেহ চট্টগ্রাম নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে নেওয়া হয়। সেখান থেকে সরাসরি মরদেহ জানাজাস্থল জমিয়াতুল ফালাহ’র মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

৭৬ বছর বয়সী আফছারুল আমীন স্ত্রী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন। বড় ছেলে ফয়সাল আমীন এবং ছোট ছেলে চিকিৎসক মাহিদ বিন আমীন।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে থাকা আফছারুল আমীন নগরীর ডবলমুরিং-খুলশী-হালিশহর আসন থেকে তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায় তিনি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। পরবর্তী সময়ে দফতর বদলে তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের দায়িত্ব পান।

২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে তিনি আরও দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন।

চট্টগ্রামের রাজনীতিতে আফছারুল আমীন প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাবশিষ্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, বন্দর রক্ষার আন্দোলন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ‘অসহযোগ আন্দোলন’সহ বিভিন্ন সংগ্রামে তিনি মহিউদ্দিনের সঙ্গে ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল নানা আন্দোলনে তার সরব ভূমিকা ছিল।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন